ব্যাঙের বিয়ে

নূরনাহার নিপা | বুধবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২১ at ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ

অনেকদিন আগের কথা।
একদেশে ছিল এক রাজা। রাজা ছিলেন ভালো মানুষের জন্য ভালো। তেমনি খারাপ মানুষের জন্য কঠোর। রাজার সুন্দর শাসন ব্যবস্থার জন্য দেশে কোন অন্যায় হতো না। সবাই রাজাকে শ্রদ্ধা,সম্মান, ভক্তি করতো। রাজাও অনেক খুশী হতেন। বড় রাণীর কোন ছেলে সন্তান না থাকাতে তিনি দ্বিতীয় বিবাহ করেন। ছোট রাণী হিসেবে রাজদরবারে আসেন নীলাবতী। এর পর রাজা সব সময় আক্ষেপ করেন তাঁর যদি একটা ছেলে হয় , তাহলে তাকে নয়নের মনি করে রাজ্যর রাজকুমার করে রাখবে।
দেখতে দেখতে দিন যায় ছোট রাণীরও কোন সন্তান হয় না।
রাজা খুবই চিন্তিত ?
একদিন রাজা শিকার করতে বনে যান, তখন বনে একজন দরবেশকে দেখতে পান।
রাজা চমকে যান।
দরবেশ নিজে থেকে বলেন – মহারাজ আপনি কোথায় যান?
রাজা বলল -দরবেশ সাহেব আমার প্রণাম। আমি মনের দুঃখে বনে এসেছি।
আমার এতো সম্পদ আছে অথচ আমার একটা পুত্র সন্তান নেই।
দরবেশ বলল- এই কথা? ঠিক আছে ধরো এই খেজুরটা ছোট রাণীকে খাওয়াতে পারলে ইনশাল্লাহ রাণীর পুত্র সন্তান হবে।
রাজা আশ্চর্য্য হয়ে বললেন কি বলছেন আপনি, এটাও কি হতে পারে?
মহারাজা তো ভীষণ খুশি।
রাজা বলল – দরবেশ সাহেব আপনি আমার কাছে আপনি যা চাইবেন তা পাবেন। আমি আপনাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।
অবশেষে ছোট রাণীর একটা ছেলে সন্তান হলো। আস্তে আস্তে সে বড় হতে লাগলো।
সে যত দিন যায় অহংকারী ও প্রজাদের অত্যাচার করে, সে একদিন ঘোড়া ছুটিয়ে চলতে থাকে বনের দিকে। তীর ধনুক দিয়ে তাড়া করে এক হরিণের বাচ্চা মেরে ফেলে সে থেকে হরিণ অভিশাপ দিল। তখন রাজকুমার ব্যাঙ হয়ে যায়।
ব্যাঙ হয়ে সে পুকুরে জলে বাস করে।
আরেক রাজার রাজকন্যা রাজ্যে ঘুরতে বের হলো।
চারিদিকে সুন্দর বন আর পাহাড় পর্বতে ঘেরা আছে নানা ধরনের ফল ও ফুলের গাছ, সেখানে প্রতিদিন রাজকন্যা মাঠে খেলতে আসে
যখন যা রাজার কাছে আবদার করতো তা এনে দেয় রাজকন্যাকে।
একদিন রাজকন্যা রাজাকে বলল ?
বাবামশাই আমি যা চেয়েছি সব খেলনা দিয়েছেন। এবার আমার একটা সোনার পুতুল চাই সেটা হবে ঝকঝকে সুন্দর সে যেন কথা বলতে পারে। রাজা যা চাইবে তা এনে দেব।
রাজা সোনার পুতুল এনে দিল। রাজকন্যা খুব খুশি মনে প্রতিদিন খেলতে যায়।
একদিন পুকুরে পুতুলটা পড়ে গেল।
রাজকন্যা কাঁদতে লাগলো,
তার পুতুলের জন্য। কে যেন কথা বলছে।
সে দেখলো। একটা নোংরা ব্যাঙ
আশেপাশে আর কেউ নেই।
ব্যাঙ বলে – আমি তোমাকে বাঁচাতে পারি-আমি তোমাকে সাহায্য করবো।
তোমার পুতুল আমি এনে দেব। তবে একটা শর্তে।
কী শর্ত বলো আমি রাজি।
ব্যাঙ আমার কিছু চাই না।
তুমি শুধু আমার বন্ধু হবে? তোমার বাড়িতে তোমার সাথে আমাকে রাখবে? রাজকন্যা ঠিক আছে তাই হবে।
ব্যাঙ -পুকুর জলে লাফ দিল।
রাজকন্যা পুতুল খেলনা পেয়ে আনন্দ ছুটে গেল বাড়িতে। ব্যাঙ তো অবাক রাজকন্যা বিশ্বাসঘাতকতা করলো তাকে সাথে নিল না।
পরের দিন -ব্যাঙ রাজকন্যার বাসায় টকটক করে দরজার কড়া নাড়ে,
ব্যাঙ আমাকে ঢুকতে দাও?
রাজকন্যা -তুমি আমার বাড়িতে ঢোকার সাহস পেলে কী করে? ব্যাঙ শর্তের কথা ভুলে গেলে।
ব্যাঙ লাফিয়ে ভিতরে চলে এলো।
রাজকন্যা আমি তোমার বন্ধু হতে চাই না।
রাজকন্যার বাবা বলে – কথা দিয়ে কথা না রাখলে কি হয় জানো।
রাজকন্যা চুপটি করে থাকে,
রাজকন্যা তার সাথে খাবার অনিচ্ছার সাথে খাচ্ছিল। ব্যাঙ শুধু খাচ্ছিল আর খাচ্ছিল এক সময় তার পেট ভরে গেল।
ব্যাঙ বিছানায় শুতে গেল। তখন রাজকন্যা ব্যাঙকে ছুঁড়ে ফেলে দিল। ব্যাঙটা মারা গেল।
রাজকন্যা ব্যাঙকে হাতে তুলে নিল, বলে আমি তোমার মৃত্যু চাইনি সে কাঁদতে লাগলো। সে ব্যাঙকে চুমা দিল। সাথে সাথে ব্যাঙ রাজকুমার হয়ে গেল। ব্যাঙ মানুষের স্পর্শে পেয়ে অভিশাপ মুক্ত হলো। রাজকন্যা তো অবাক। রাজকন্যাকে ঘটনাটা খুলে বলল। রাজকন্যা রাজকুমার থেকে ক্ষমা চাইলো। রাজকুমার বলল তুমি মানুষকে সম্মান করবে ভালোবাসবে অহংকার করবে না। তোমার কাছে এটাই আমার চাওয়া। ধুমধাম করে রাজা রাজকুমারীকে ব্যাঙকুমারের সাথে বিয়ের আয়োজন করল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করবে বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধযে প্রাণীর জন্মকালীন ওজন ২৭ হাজার কেজি