ব্যাংকের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে প্রতারণা, একজন গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

নগরীর খুলশী থানার ঝাউতলা এলাকা থেকে ব্যাংকে টাকা জমার সিল ও স্বাক্ষর ‘জাল করে’ পাওনা অর্থ পরিশোধের নামে প্রতারণার মামলায় মজিবুর রহমান ওরফে হান্নান (২৭) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পতেঙ্গা থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তার আরও জালিয়াতির প্রমাণ বেরিয়ে এসেছে। গত রোববার দিবাগত রাতে ঝাউতলা মাজার গলির মজুমদার ভিলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার বাসা থেকে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের ক্যাশ রিসিভড লিখা নীল ও কালো রঙের দুটি জাল বঙ সিল জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত মজিবুর রহমান ফেনীর জেলার শুভপুর ইউনিয়নের মুন্সী বাড়ির মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে।
পতেঙ্গা থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ শাহাদত হোছাইন বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্মাতক পাশ হান্নান মালামাল পরিবহনের ব্রোকার হিসেবে কাজের সূত্র ধরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। গ্রেপ্তারের পর হান্নানের বাসা থেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের টাকা জমার দুটি ভুয়া সিল উদ্ধার করা হয়।
পতেঙ্গা থানা পুলিশ জানায়, হান্নান বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নানা ধরনের সামগ্রী সরবরাহ করার কথা বলে অগ্রীম টাকা গ্রহণ করলেও তা পাঠাতেন না। পরে মালিক বা প্রতিনিধি তার সাথে যোগাযোগ করলে টাকা পরিশোধের কথা বলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর চেয়ে নিতেন। জাল সিল ও স্বাক্ষর বসিয়ে ব্যাংক জমার ভুয়া স্লিপ পাঠিয়ে দিতেন।
গত জানুয়ারি মাসে ম্যাঙ গ্রুপের পতেঙ্গা হর্স ইয়ার্ডয়ের ম্যানেজার মো. আশরাফুল ইসলাম তাদের পতেঙ্গা ইয়ার্ড থেকে মানিকগঞ্জে তাদের ম্যাঙ ইনফ্রা ফ্যক্টরীতে প্রেরণের জন্য ১৭ হাজার টন এমএস শিট পাঠাতে মুজিবুর রহমান প্রকাশ হান্নানকে ২টি ট্রাক ও পিকআপ পাঠাতে বলেন। হান্নান ২টি ট্রাক ও পিকআপ ঠিক করে দেয়।
সে অনুযায়ী গত ১১ জানুয়ারি হান্নানের ভাড়া করে দেওয়া একটি ট্রাক ও পিকআপ পতেঙ্গা ‘হর্স ইয়ার্ড’ থেকে শিটগুলো নিয়ে মানিকগঞ্জ রওনা দেয়। ট্রাকটি পরদিন গন্তব্যে পৌঁছালেও পিকআপ পৌঁঁছায়নি।
ম্যাঙ গ্রুপের ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে হান্নান-পথে গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ‘অজুহাত দেয়’ এবং পৌঁছে যাওয়ার আশ্বাস দেন। দুইদিনও পিকআপ ভর্তি এমএস শিট মানিকগঞ্জ না পৌঁছলে আবারো ফোন দেয়া হয় হান্নানের কাছে। এ সময় হান্নান জানায়-পথের মধ্যে গাড়ির ড্রাইভার মালামালগুলো বিক্রি করে পালিয়ে গেছে। সে মালামালের ক্ষতিপূরণের টাকা সে পরিশোধ করে দেবে বলে ম্যাঙ গ্রুপের ম্যানেজার আশরাফুল ইসলামকে আশ্বস্ত করে। পিকাআপের চার হাজার ১৬০ কেজি এমএস শিট বাবদ ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য হান্নান ম্যাঙ গ্রুপের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর চেয়েছিলেন।
ম্যাঙ গ্রুপের পক্ষ থেকে ইউসিবিএল ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়ার পর হান্নান সিটি ব্যাংকের অ্যাপ থেকে ফান্ড ট্রান্সফার করা হয়েছে জানিয়ে তাদের একটি ভুয়া এসএমএস এর স্ক্রিন শট পাঠান। কিন্তু টাকা জমা না হওয়ায় হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় ম্যাঙ গ্রুপের ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম বাদি হয়ে পতেঙ্গা মডেল থানায় গত ২৫ জানুয়ারি মজিবুর রহমান ওরফে হান্নানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই শাহাদাত হোছাইন গত রোববার রাতে খুলশী থেকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পর প্রতারক হান্নান স্বীকার করে যে ম্যাঙ গ্রুপের শিটগুলো সে আলী কাটিং ওয়ার্কস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল।
হান্নানকে ধরতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিতে গিয়ে দেখা যায় তার সাথে মোবাইল ফোনে যে ব্যক্তির সবচেয়ে বেশি কথা হয়েছে সেও একজন ভিকটিম। নগরীর আকবর শাহ থানার সিটি গেইট এলাকায় ওই ব্যক্তির ‘নিউ বিসমিল্লাহ ফার্নিচার এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ফার্নিচারের দোকান আছে। হান্নান তাকে খাট সরবরাহের কথা বলে আগাম ৮০ হাজার টাকা নিয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ে খাট সরবরাহ না করায় ওই ব্যক্তি হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে ইসলামী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর চেয়ে নেয় টাকা পরিশোধের জন্য। পরে তাকে ব্যাংকেও একটি ভুয়া সিলসহ একটি জমা স্লিপ পাঠান। কিন্তু ওই ব্যক্তি তার অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখেন তার কোন টাকা জমা হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আকবর শাহ থানায় একটি মামলা দায়ের করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের যাদের নাম রয়েছে