‘ব্যর্থতা ও দায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের’

এইচএসসির ফলাফলে অসঙ্গতি নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৪ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন দুপুরে ফল প্রকাশের পর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর প্রদর্শনে নানা অসঙ্গতি দেখা দেয়। ফল প্রকাশের পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি থানায় জিডির পাশাপাশি এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষাবোর্ড।
পটিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোজাম্মেল হককে প্রধান করে গঠিত কমিটি ৩ মার্চ শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিটির অপর দুই সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ এইচ এম সাজেদুল হক ও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সহকারী সচিব সম্পাতা তালুকদার। ফলাফলে অসঙ্গতি ও হ-য-ব-র-ল অবস্থার নেপথ্যে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথের দায় ও ব্যর্থতা উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠায় শিক্ষাবোর্ড। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বোর্ডের নিজস্ব কর্মকর্তা সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সরকারি মাধ্যমিক-২ শাখার যুগ্ম সচিব খালেদা আখতারের স্বাক্ষরে গত ১৫ মার্চ এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
তবে একই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে আরো ১৬ দিন পর। সরকারি মাধ্যমিক-২ শাখার উপসচিব আলমগীর হুছাইন কর্তৃক ১ এপ্রিল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে এ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বোর্ডের নিজস্ব কর্মকর্তা হওয়ায় সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে শিক্ষাবোর্ডের। কিন্তু বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তা ও বোর্ডে প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে দেয়া মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে অসঙ্গতি সংক্রান্ত দৈনিক আজাদী পত্রিকায় ‘মোট নম্বর ২০০, পেল ২১৮! দুপুরে প্রাপ্ত নম্বর পাল্টে গেল সন্ধ্যায়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখে ‘শিক্ষাবোর্ডের তদন্ত কমিটি, থানায় জিডি’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন দৈনিক আজাদী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। উল্লিখিত প্রতিবেদনের বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে নিম্নরূপ মন্তব্য করে : ‘তদন্ত কমিটি তদন্ত কার্য সম্পাদন করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, ১১/০২/২০২২ ইং তারিখ বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০:১০টা পর্যন্ত ফলাফল প্রসেসিং রুমের কম্পিউটারের টেবুলেশন অনিরাপদ রাখায় ফলাফল তৈরিতে সন্দেহ সৃষ্টি করে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। ফলাফল সংশোধনের বিষয়টি বোর্ডের নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং আইটি টিমের সদস্যরা নিজেরাই সংশোধনের কাজ করতে গিয়ে দু ধরনের নম্বরফর্দ প্রাপ্ত হওয়ায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে। যেহেতু পরীক্ষার ফলাফল তৈরি সংক্রান্ত সকল দায়-দায়িত্ব পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের, সেহেতু এর সম্পূর্ণ দায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের উপর বর্তায়।’
বর্ণিতাবস্থায় ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে অসঙ্গতি এবং এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির মতামতের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। তবে ব্যাখ্যা প্রদানে চিঠিতে সময়সীমাও উল্লেখ করেনি মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাভাবিকভাবে এ ধরনের ব্যাখ্যা তলবের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করে দেয়া থাকে। কিন্তু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বেলায় মন্ত্রণালয় সেটি করেনি, যার কারণে এটিকে দায়সারা ব্যাখ্যা তলব হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক গতকাল আজাদীকে বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সময় উল্লেখ করা থাকে না। তবে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। মন্ত্রণালয় চিন্তা-ভাবনা করে এগুচ্ছে।
উল্লেখ্য, পরীক্ষা গ্রহণ, পরিচালনা, ফলাফল তৈরি ও প্রকাশের দায়িত্ব শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা শাখার। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ শাখার প্রধান। এইচএসসির ফলাফলে নানা অসঙ্গতি ও হ-য-ব-র-ল অবস্থার কারণে শিক্ষাবোর্ড যে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে সেটি এই পরীক্ষা শাখার কারণেই। তবে এখানেই শেষ নয়, সমপ্রতি ভুল তারিখে ছাপানো হয়েছে এইচএসসির ৪০ হাজারেরও বেশি ট্রান্সক্রিপ্ট। এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হলেও ওই পরীক্ষার ফল প্রকাশের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি! ভুল তারিখে ছাপানো এসব ট্রান্সক্রিপ্টে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরও করেছেন। এর মধ্যে বেশ কিছু ট্রান্সক্রিপ্ট শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণও করা হয়েছে। পরবর্তীতে বিষয়টি বোর্ড কর্মকর্তাদের নজরে আসে। এ ঘটনায় বোর্ডের বিপুল অর্থ গচ্চা গেছে বলছেন শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়েও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডের চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক আবদুল আলীমের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। যদিও ভুল তারিখে ট্রান্সক্রিপ্ট ছাপানোর বিষয়টি শুনেননি বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক।
এর আগেও ২০২০ সালের অটোপাসের জেএসসিতে বড় ধরনের অনিয়মের খবর প্রকাশিত হয় আজাদীতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিককে ১৬ বছরের কারাদণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধবেগুন, শসা ও মরিচের দাম আরো বেড়েছে