ব্যবহার অনুপযোগী হচ্ছে দুই ল্যান্ডফিল

নতুন ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনে ৫০একর জায়গা ক্রয়ে চসিকের উদ্যোগ পরিদর্শন টিম গঠন করছে মন্ত্রণালয়

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৩১ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

নগরে দৈনিক তিন হাজার টনের বেশি বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে দুই হাজার টন বর্জ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। সংগৃহীত এ বর্জ্য ফেলা হয় বায়েজিদ ও হালিশহরের পৃথক দুটি ল্যান্ডফিলে (বর্জ্যাগার)। তবে শঙ্কার কথা হল এ দুটো ল্যান্ডফিল ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। চসিকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ আগামী ছয় মাস থেকে এক বছর ল্যান্ডফিল দুটি ব্যবহার করা যাবে। এ অবস্থায় নতুন করে ল্যান্ডফিল বা ডাম্পিং স্টেশন গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে চসিক। প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ল্যান্ডফিলটি গড়ে তোলার সিদ্ধান্তও নিয়েছে সংস্থাটি। এ ল্যান্ডফিল স্থাপনে প্রয়োজন ৫০ একর ভূমি। এ ভূমি ক্রয়ে কিছু দিন আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছে চসিক। তবে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক অনুমতি মিলেনি।

এ দিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চসিকের প্রস্তাবিত ল্যান্ডফিলের জায়গা পরিদর্শনের জন্য একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যে এ কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে ইতিবাচক প্রতিবেদন দিলে ভূমি ক্রয়ের অনুমতি দেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা ভূমির ক্রয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছি। মেয়র মহোদয়ও এ বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে মন্ত্রী মহোদয়কে অনুরোধ করেছেন। সর্বশেষ জানতে পেরেছি জায়গা পরিদর্শনের জন্য মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে দিবে। জায়গা পেলে আধুনিক ল্যান্ডফিল গড়ে তুলব।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ অক্টোবর ভূমি ক্রয়ের অনুমতি চেয়ে দাপ্তরিক পত্র দেয়া হয়। এতে বলা হয়, কর্পোরেশনের বিদ্যমান ল্যান্ডফিল দুইটির বর্জ্য ধারণ ক্ষমতা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল এবং তা সর্বোচ্চ আগামী ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে। এ জন্য নতুনভাবে ল্যান্ডফিল স্থাপনের পাশাপাশি বর্জ্য নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। নতুন ল্যান্ডফিল স্থাপনের লক্ষ্যে দক্ষিণ পাহাড়তলী তফশীলের ৫০ একর জমি ক্রয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ভূমির মালিকগণও সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে ভূমি বিক্রির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জমির কাগজপত্র যাচাই করে প্রাথমিকভাবে মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্তে আলাপ আলোচনা হয়েছে। কর্পোরেশনের নিজস্ব আয় হতে প্রস্তাবিত ভূমির মূল্য পরিশোধ করা হবে।

চসিকের পত্রে আরো বলা হয়, কর্পোরেশনের বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র, বাণিজ্যিক রাজধানী ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামে বর্তমানে প্রায় ৭০ লক্ষ লোকের বসবাস। চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে পারিবারিক, শিল্প, বাণিজ্যিক ও স্ট্রিট বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ দিন দিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মোট বর্জ্যের পরিমাণ প্রতিবছর বেড়েই চলছে। বিশাল জনসংখ্যার এই চট্টগ্রাম শহরের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর রাখতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। বর্জ্য উৎপাদন যে হারে বাড়ছে সে হারে বর্জ্যের সুষ্ঠু বিন্যাস তথা ব্যবস্থাপনা সম্ভব হচ্ছে না।

চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যমান ল্যান্ডফিল দুটি’র মধ্যে হালিশহরের আনন্দবাজার ল্যান্ডফিলটি গড়ে উঠেছে ৯ একর ভূমির উপর। এ ল্যান্ডফিলে নগরের ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ২২ থেকে ২৩টি ওয়ার্ড থেকে সংগৃহীত বর্জ্য ফেলা হয়। এ ছাড়া ১১ একর জায়গার উপর গড়ে ওঠা বায়েজিদ আরেফিন নগরের ল্যান্ডফিলে ১৮ থেকে ১৯টি ওয়ার্ড থেকে সংগৃহীত বর্জ্য ফেলা হয়।

জানা গেছে, চসিক প্রতিষ্ঠার পর শুরুতে শহরে নিচু এলাকা নাসিরাবাদে আবর্জনাগার গড়ে তোলা হয়। এলাকাটি ভরাট হয়ে গেলে এর ওপর গড়ে তোলা হয় সুগন্ধা আবাসিক এলাকা। পরে নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার রউফাবাদ এলাকায় ফেলা হতো আবর্জনা। সেটাও বর্জ্যে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এরপর শুরু হয় আরেফিন নগরে বর্জ্য ফেলা। তবে আরেফিন নগরের জায়গাটি চসিক কবরস্থান করার নামে ক্রয় করেছিল। তাই সেখানে ময়লা ফেলায় বিভিন্ন মহল সমালোচনাও করে চসিকের।

চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, হালিশহরের ল্যাান্ডফিল সবচেয়ে পুরনো। তিনি বলেন, আমরা ২৫ শ থেকে ২৬শ টন বর্জ্য সংগ্রহ করে হালিশহর ও বায়েজিদের ল্যান্ডফিলে নিয়ে যাই।

এ দিকে জাইকার একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে দৈনিক ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৩০ টন গৃহস্থালি, ৫১০ টন সড়ক ও অবকাঠামোগত এবং ৬৬০ টন মেডিকেল বর্জ্য। উৎপাদিত বর্জ্যের মধ্যে কর্পোরেশন সংগ্রহ করে দুই হাজার টন। বাকি বর্জ্য নালা-নর্দমা, খাল-বিল, নদী ও উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্ষমা চাওয়ার শর্তে ৫ ছাত্রলীগ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত
পরবর্তী নিবন্ধপুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা