ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া ৭ লাখ টাকা ওরা খরচ করল যেভাবে

একজন ব্যয় করেছেন তালাক দেয়া বৌয়ের মোহরানা মেটাতে, আরেকজন পাইলসের অপারেশনে

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৬ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

তালাক দেয়া চার নম্বর বৌয়ের মোহরানা মেটানো হয়েছে অপহরণ করে ছিনিয়ে নেয়া টাকা দিয়ে। মৃত সন্তানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দেয়া হয়েছে ফাতেহা। আবার বেসরকারি হাসপাতালে পাইলস অপারেশনের মতো চিকিৎসাও করা হয়েছে ছিনতাইয়ের টাকার ভাগ দিয়ে। এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে প্রায় সাত লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার একটি ঘটনায় টাকাগুলো ভাগবাটোয়ারার পর এভাবে খরচ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার চার ছিনতাইকারী পুলিশের কাছে তাদের টাকা খরচের কাহিনী এত অবলীলায় বলেছে যে পুরো বিষয়টি সিনেমাকে হার মানিয়েছে।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, পদ্মা অয়েল কোম্পানির সাবেক সিবিএ সেক্রেটারি, চাতরী চৌমুহনী এলাকার শশি কমিউনিটি সেন্টারের মালিক মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন সম্প্রতি নিজের কমিউনিটি সেন্টার থেকে কাজকর্ম সেরে শহরের পাঁচলাইশ থানাধীন মিমি আবাসিক এলাকার বাসায় ফিরছিলেন। রাত পৌনে দশটা নাগাদ টেঙিটি বাকলিয়া থানাধীন শাহ আমানত সংযোগ সড়কস্থ কালামিয়া বাজারের উত্তর পাশে ওয়াপদা গেটের সামনে পৌঁছালে চালক প্রশ্রাব করার কথা বলে টেক্সিটি রাস্তার উপর দাঁড় করায়। সে টেক্সি থেকে নামার সাথে সাথে ৩ জন লোক দ্রুত টেক্সিতে চড়ে ব্যবসায়ী নাছিরকে বেধড়ক পিটাতে শুরু করে এবং ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে চুপ থাকতে বলে। ওই তিন ব্যক্তি টেক্সিতে চড়ার সাথে সাথে চালকও দ্রুত এসে টেক্সি চালাতে শুরু করে এবং চান্দগাঁও থানাধীন সিএন্ডবি কাপ্তাই রাস্তার মাথায় নিয়ে যায়। সেখানে তারা ব্যবসায়ী নাছিরের পকেট থেকে নগদ ৬০ হাজার টাকা, কোমরের বেল্টের ভিতরে থাকা ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকাসহ হাতের আংটি এবং ঘড়ি ছিনিয়ে নিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে যায়। নাছিরকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে অপর একটি সিএনজি টেক্সি চালক তাকে তুলে বাসায় পৌঁছে দেয়। পরদিন বেসরকারি সিএসসিআর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নাছির প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেন।

পরদিন শশি কমিউনিটি সেন্টারের কর্মচারী পলাশ বিষয়টি শুনার পর জানান যে, তিনি সেদিন নাছিরকে টেক্সিতে তুলে দিয়ে নিজের মোবাইল ফোনে টেক্সিটির পেছনের নম্বর প্লেটের ছবি তুলে রাখেন। নাছির ওই ছবি সংগ্রহ করে টেক্সিটির নম্বর চট্টগ্রাম-থ-১৩-৮০৫৫ শনাক্ত করেন। পরবর্তীতে বিআরটিএ থেকে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সূত্র ধরে মালিক আবদুল রহিমের সাথে যোগাযোগ করেন। মোহাম্মদ আবদুর রহিম ওইদিনের টেক্সিচালক মো. সিরাজুল হক ছিলেন বলে নিশ্চিত করেন। মোহাম্মদ সিরাজুল হক রাঙ্গুনিয়ার দক্ষিণ পদুয়ার জইল্যার বাপের বাড়ির মোহাম্মদ বাদশা মিয়ার পুত্র। সিরাজ বর্তমানে নগরীর বাকলিয়া থানাধীন হাটখোলা এলাকার দারুল আমান হাউজিং সোসাইটিতে বসবাস করেন।

টেক্সিচালকের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিন সমস্ত তথ্য প্রমাণ উল্লেখ করে চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-২৯, তারিখ-১৯-১২-২০২২ ইং। মামলা রেকর্ডের পর পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে টেক্সিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হককে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় ঘটনার মাস্টার মাইন্ড, ১১ মামলার পলাতক আসামি চান্দগাঁও এলাকার পাঠাইন্ন্যাগুদার আবুল কালামের পুত্র মোহাম্মদ আরমান, চন্দ্রগোনা এলাকার শাহাবুল ইসলামের পুত্র মোহাম্মদ নোমান, চান্দগাঁও থানাধীন বরিশাইল্যা বাজার এলাকার মোহাম্মদ জসিমের পুত্র জিশানকে। বাকলিয়া থানা পুলিশের কাছে তাদের প্রত্যেকেই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বলেছে, তারা টাকাগুলো বিভিন্ন অংকে ভাগ করে নিজেদের মতো করে খরচ করেছে।

সবচেয়ে বেশি টাকা নিয়েছে ঘটনার পরিকল্পনাকারী মোহাম্মদ আরমান। রাডো ঘড়ি এবং দুইটি স্বর্ণের আংটিও সে নিয়েছে। আরমান পুলিশকে জানায়, ঘড়িটি সেই নালায় ফেলে দিয়েছে। আংটির পাথর ফেলে দিয়ে স্বর্ণগুলো বিক্রি করেছে। এক লাখ টাকারও বেশি সে পেয়েছে। টাকা পাওয়ার পর একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে সে দীর্ঘদিন ধরে কষ্টে থাকা পাইলসের অপারেশন করিয়েছে।

টেক্সিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক ৯০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে পুলিশকে জানায়, সে তার চার নম্বর বৌকে তালাক দিয়েছে। তালাক দেয়ার পর মোহরানা বাবদ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে। বাকি টাকা থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ করে সে তার মৃত কন্যা সন্তানের জন্য ফাতেহার আয়োজন করে আত্মীয়-স্বজনকে খাইয়েছে। বাকলিয়া থানায় গ্রেপ্তার হওয়া চার ছিনতাইকারী সব টাকা খরচ করে ফেলেছে বলে দাবি করেছে। চার আসামিকেই বাকলিয়া থানা পুলিশ গত বুধবার আদালতে হাজির করে দুই দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির নির্দেশ পুতিনের, ইউক্রেনের প্রত্যাখ্যান
পরবর্তী নিবন্ধহাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপি মিলনের বিরুদ্ধে নতুন পরোয়ানা