চট্টগ্রামের আদালতে পুলিশের চেক পোস্টে জেএমবির বোমা হামলায় কনস্টেবল রাজীব বড়ুয়াসহ দুজন নিহতের মামলায় বোমা মিজানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আরেক আসামি ‘অনুতপ্ত’ জাবেদ ইকবালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ সময় এজলাস কক্ষে উপস্থিত ছিলেন জাবেদ ইকবাল।
ঘটনার ১৬ বছর পর গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুল হালিম এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে জাবেদকে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে আনা হয়। বোমা মিজান ঘটনার পর থেকে পলাতক আছেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর চাঞ্চল্যকর এ মামলায় যুক্তিতর্ক শেষ করেন রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। সেদিনই বিচারক রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করেন।
সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি মনোরঞ্জন দাশ আজাদীকে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত এ রায় ঘোষণা করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত অপর আইনজীবী খন্দকার আরিফুল আলম বলেন, জীবিত দুই আসামির মধ্যে বোমা মিজানের মৃত্যুদণ্ডে আমরা সন্তুষ্ট। তবে জাবেদ ইকবালের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে হতাশ। আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করেছিলাম। আমরা উচ্চ আদালতে যাব এবং তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করব।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জবানবন্দি অনুযায়ী ঘটনার সাথে জাবেদ ইকবালও সরাসরি জড়িত ছিলেন। একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আদালতকে বলেছিলেন, জাবেদ ইকবাল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, রায় পরবর্তী আদালত বলেছেন, কোর্টকে ভদ্রতা দেখিয়েছেন জাবেদ ইকবাল। একই সাথে তিনি ঘটনার বিষয়ে অনুতপ্ত। যার কারণে তাকে যাজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
৯ মার্চ এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ৭৭ সাক্ষীর মধ্যে মামলার বাদীসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩২ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। ২০০৬ সালের ১৮ মে জাবেদ ইকবাল, বোমা মিজানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল হয়। ২৯ মে উক্ত চার্জশিট গৃহীত হয়। ২০০৬ সালের ৩ জুন নিষ্পত্তির জন্য মহানগর দায়রা আদালতে পাঠায় মহানগর হাকিম আদালত। ২০০৬ সালের ১৬ জুলাই মহানগর দায়রা জজ একেএম আনোয়ার হোসেন আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। পরবর্তীতে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা হয়। ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালে যায়, সেখানেই মামলাটির বিচারকার্য পরিচালিত হয়।
২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রাম আদালতের জজশিপ ক্যান্টিনের সামনে পুলিশের চেকপোস্টে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় জেএমবি সদস্য আবুল হোসেন। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান কনস্টেবল রাজীব বড়ুয়া ও পথচারী মো. শাহাবুদ্দীন। আহত হন কনস্টেবল আবু রায়হান, সামসুল কবির, রফিকুল ইসলাম, আবদুল মজিদসহ ১৪ জন।
এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানার এসআই ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলার এজাহারে ঘটনার সাথে জড়িত হিসেবে জেএমবি নেতা আবদুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই ও আতাউর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়। অন্য একটি মামলায় এ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ আদালতে নেওয়ার পথে ত্রিশাল এলাকায় প্রিজন ভ্যানে গুলি ও বোমা ছুড়ে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ওই তিনজনের একজন হলেন বর্তমানে পলাতক বোমা মিজান।