নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, মাতারবাড়ী, বে টার্মিনাল ও পতেঙ্গা কন্টেনার ইয়ার্ডের ব্যাপারে অনেকেরই আগ্রহ আছে। অনেকেই প্রপোজাল দিয়েছে। এগুলো স্টাডি করে দেখছি। তবে বে টার্মিনাল কাজের ব্যাপারে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। ভূমি অধিগ্রহণে কিছুটা দুর্বলতা দেখতে পাচ্ছি। বন্দর কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে দ্রুতই এসব সমস্যার সমাধান করা হবে। ২০২৪-২৫ সালে অপারেশনাল কাজে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। বে টার্মিনালের কিছুটা অংশ বন্দর কর্তৃপক্ষ করবে। বাকিটা পিপিপি মডেলে করব। যারা আগ্রহী তাদের মধ্যে অনেকেই প্রপোজাল দিয়েছে। আমাদের কার্যক্রম চলছে। কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ডিপি ওয়ার্ল্ড, রেড সি গেটওয়ে, আদানি, সিঙ্গাপুর পোর্ট অথিরিটি, ডেনমার্ক, তুরস্ক ও ফ্রান্স।
গতকাল রোববার চট্টগ্রাম বন্দরে ওভার ফ্লো ইয়ার্ড উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, যেখানে দেশের স্বার্থ, বন্দরের স্বার্থ সংরক্ষণ হবে আমরা সে জায়গায় হাঁটব। দেশের স্বার্থহানি হোক, দেশের স্বার্থ কোনো জায়গায় ঘাটতি দেখা দেবে, সে জায়গায় আমরা হাঁটব না। বন্দর ও দেশের স্বার্থ আমাদের প্রথম দেখতে হবে। এর আগে সকালে চট্টগ্রাম বন্দরে সার্ভিস জেটিতে কাণ্ডারী ৬ টাগবোট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া তিনি সার্ভিস জেটির ফলক উন্মোচন করেন। তিনি বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম একেবারে স্বাভাবিক ছিল। এখনো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বন্দরে যেখানে জট লেগে আছে, সেখানে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যতিক্রম।
তিনি বলেন, গত বছর এই বন্দরে ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। কার্গো হ্যান্ডলিং ও জাহাজ আসার সংখ্যাও বেড়েছে। আজকে (গতকাল) একটি অত্যাধুনিক টাগবোট, সার্ভিস জেটি ও ওভার ফ্লো ইয়ার্ডসহ কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। করোনাকালে বন্দরে এসে আপনাদের সংকল্প দেখেছি দেশকে এগিয়ে নেয়ার। বন্দরের অনেক সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে, সেগুলো পালন করেছে। এ বন্দর দেশের সব জনগোষ্ঠীর। শ্রমিকরা শ্রম দিয়েছেন, মুনাফা হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সেই মুনাফার অংশ দিয়েছে।
নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রধান দেশরত্ন শেখ হাসিনা ১২ বছর ধারাবাহিক দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অগ্রগতি, অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। অনেক ধনী দেশ মুখ থুবড়ে পড়েছে শুধু নেতৃত্বের কারণে। বঙ্গবন্ধু না হলে আমাদের স্বাধীন সত্তা থাকত না। অনেক নেতা ছিলেন, বঙ্গবন্ধুই পথ দেখিয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে সঠিক নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি মেরিটাইম নিয়ে ভেবেছিলেন, আইন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি সাড়ে তিন বছরে দেড়শ আইন করেছিলেন দেশকে এগিয়ে নিতে। বঙ্গবন্ধু ভিত্তি রচনা করে দিয়েছিলেন সোনার বাংলার। চুয়াত্তর সালে বাসন্তীকে জাল পরিয়ে ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল সপরিবারে। শিশু রাসেলকে হত্যা করা হয়েছিল। কী নির্মম, কী পৈশাচিক! এ হত্যাকাণ্ড জায়েজ করতে জিয়া এরশাদ খালেদা অনেক অপকর্ম করেছে, কিন্তু পারেনি। লুটেরা, স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে অর্থনীতি তুলে দেয়া হয়েছে। আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ড হয়েছে, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সমন্বয় করে বন্দরকে করোনাকালে ২৪ ঘণ্টা ৭ দিন চালু রেখেছিলাম। তখন বিশ্ব স্থবির ছিল। আমদানি-রপ্তানি নির্বিঘ্ন করতে অফডক, শিপিং এজেন্ট, এমএলও, ফিডার সার্ভিস, সড়কপথে কন্টেনার পরিবহনে করোনাকালে আগে থেকে সম্ভাব্য ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের বন্দরে জাহাজের ওয়েটিং টাইম এখন জিরো। এতে করে ফরেন কারেন্সি সাশ্রয় হচ্ছে। জাহাজ ভাড়া এবং ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম কমে গেছে। আমরা পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে ১৩৫ বছরের রেকর্ড ভেঙেছি। এ বছর ৩২ লাখ ১৪ হাজারের বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করেছি। সক্ষমতা বাড়িয়েছি কন্টেনার ধারণক্ষমতার। দুই-তিন মাসের মধ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল উদ্বোধন করতে পারব। বে টার্মিনাল হলে বড় জাহাজ দিন-রাত ভিড়তে পারবে। মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দর হবে ডিপ সি পোর্ট। ইউরোপের সঙ্গে সরাসরি কন্টেনার পরিবহন শুরু করেছি আমরা। এতে ভাড়া ও সময় সাশ্রয় হবে।
অনুষ্ঠানে ওয়েস্টার্ন মেরিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান বলেন, আমরা আনন্দিত কাণ্ডারী ৬ হস্তান্তর করতে সক্ষম হয়েছি। জাহাজ নির্মাণশিল্পে অনেক ব্যাকওয়ার্ড শিল্প গড়ে উঠেছে। দেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দিলে আমরা পারব। তিনি বিল্ডার্স সনদ, রেপ্লিকা, ক্রেস্ট হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বন্দর সচিব মো. ওমর ফারক। উপস্থিত ছিলেন বন্দরের সদস্য মো. জাফর আলম।