বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের ভাবনা

দিলরুবা আক্তার চৌধুরী | মঙ্গলবার , ২ এপ্রিল, ২০২৪ at ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ

অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশু ও বয়স্কদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরতে ২০০৭ সালে ২রা এপ্রিলকে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ দিবসটি পালনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপর থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালন করা হচ্ছে। সর্বশেষ জরিপ ২০২২ অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৪৬ লক্ষ। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তাঁদের ৯৮% কোনো না কোনো সময় বৈষম্যমূলক আচরণ ও নিগ্রহের শিকার। এরমধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে দেশে ২.৮৭% ব্যক্তি অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। এ হিসেবে দেড় লক্ষ ব্যক্তি অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। যেখানে প্রতিবছর নূতন করে ১৫০০ শিশু যোগ হয় যা প্রতিদিন গড়ে ৪ জনের বেশি। ‘স্পিচ এইড’ বাংলাদেশের দেওয়া তথ্য মতে বাংলাদেশে প্রতি ১২৫ জনে ১ জন অটিজমে আক্রান্ত এবং প্রতি ১০১৭% হারে অটিজমের অটিজম বৃদ্ধি পাচ্ছে যা খুবই উদ্বেগজনক।

অটিজম হচ্ছে শিশুর মস্তিষ্কের স্নায়ুবিক বিকাশের প্রতিবন্ধকতা। যার লক্ষণ জন্মের ১৩ বছরের মধ্যে প্রকাশ পায়। প্রকৃতপক্ষে অটিজমের প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি তাই এর সহজে নিরাময়যোগ্য ঔষধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। অটিজম বা Autism Spectrum Disorder কে সংক্ষেপে অঝউ বলা হয়। এখানে স্পেকট্রাম শব্দটির আভিধানিক অর্থ বর্ণালী বা বর্ণের সমষ্টি। একারণেই অটিজমকে বেদনার নীল রঙের সাথে তুলনা করা যায়। যেকারণে ২রা এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে সরকারি নির্দেশনা থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নীলবাতি প্রজ্বলনের, যাতে করে মানুষ সচেতন হয় এ দিবসটি সম্পর্কে অবগত হয়।

বিশ্বের ১০০ কোটিরও বেশি প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর প্রায় ৯ কোটি ৩০ লক্ষ প্রতিবন্ধী শিশু যা মোট জনসংখ্যার ৯%। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর তিন চতুর্থাংশ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত যার মধ্যে ৪০% প্রতিবন্ধী শিশুর বসবাস আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে। শিক্ষার অধিকার মৌলিক মানবাধিকার। যে শিশুটি এই মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত সে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রে গড়ে ওঠার সুযোগ পায় না। যার প্রেক্ষিতে সমাজ ও রাষ্ট্রে তার অবস্থান সবচেয়ে নড়বড়ে। এই দায়ভার থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হতে পারে তাকে শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা। এ প্রক্রিয়ার সফল বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম। গবেষণায় প্রমাণীত প্রতিবন্ধী শিশুদের ৬০% সামান্য বা কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়াই মূলধারার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। ২০% প্রতিবন্ধী শিশু আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা নিতে পারে সামান্য অভিযোজনের মাধ্যমে। অটিজম ও স্নায়ুবিকাশজনিত জটিলতায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সমঅধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে মহান জাতীয় সংসদে দুইটি আইন পাশ হয়েছে। একটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এবং অপরটি অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন ২০১৩।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় অটিজম ও এনডিডি শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় সম অধিকারকে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে ২০১৬২০২০ মেয়াদী কর্ম পরিকল্পনাতে নির্দিষ্ট কতগুলো লক্ষ্য ও কার্যাবলী নির্ধারণ করে এবং ‘ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম এন্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজএ্যাবিলিটিজ (NAAND) প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যেগ গ্রহণ করে এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার ও কর্মক্ষম করার উদ্যেগ গ্রহণ করে এই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জিবনমান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী তনয়া সায়েমা ওয়াজেদ পুতুলকে অশেষ ধন্যবাদ। অটিজম আক্রান্ত শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য বাংলাদেশেও কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে যা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার।

এ ব্যাপারে আমাদের সকলকে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে, তাদের উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ দিয়ে সমাজের বোঝা মনে না করে সম্পদে পরিনত করতে হবে যাতে তারা সম্মানের সাথে বাঁচতে পারে তবেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের পথে জাতি এগিয়ে যাবে।

লেখক: উপাধ্যক্ষ, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমা
পরবর্তী নিবন্ধদ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জনগণের ভূমিকা