বিশ্বনন্দিত জাদুশিল্পী পি.সি সরকার

| বুধবার , ৬ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ

জাদুশিল্পের জগতে পি.সি সরকার এক কিংবদন্তি শিল্পী। মেধা, মনন ও নিত্য নব উদ্ভাবনী কৌশল দিয়ে জাদু জগতে তিনি এক নবীন মাত্রা সঞ্চার করেছিলেন। পাগড়ি মাথায়, রাজকীয় পোশাক পরে জাদু প্রদর্শনের সূচনা পি.সি সরকারের হাত ধরেই হয়েছিল।
পি.সি সরকারের পুরো নাম প্রতুলচন্দ্র সরকার। জন্ম ১৯১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার আশেকপুর গ্রামে। জাদুবিদ্যা চর্চায় তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল। আর এরই প্রভাব পড়ে প্রতুলের শিশুমনে। শৈশব থেকেই তিনি জাদুর নানান কৌশল রপ্ত করতে শুরু করেন। কলেজে পড়াকালীন বিভিন্ন রকমের জাদু দেখিয়ে পরিচিতজনদের অবাক করে দিতেন। পরবর্তী সময়ে জাদুবিদ্যাকেই তিনি বেছে নেন পেশা হিসেবে। ১৯৩৩ সালে গণিতে অনার্স সহ স্নাতক ডিগ্রি নেন পি.সি সরকার। এর পর পরই পুরোপুরিভাবে নিমগ্ন হন জাদু শিল্প চর্চায়। তাঁর গুরু ছিলেন গণপতি চক্রবর্তী। ১৯৩৪ সালে পি.সি সরকার প্রথম বিদেশের মাটিতে জাদু প্রদর্শন করেন। প্রায় সত্তরটির মতো দেশে অসাধারণ সব জাদু দেখিয়ে অর্জন করেন বিপুল খ্যাতি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর নাম। পি.সি সরকারের যেসব জাদু বিশ শতকের ত্রিশের দশকে দুনিয়া জুড়ে সাড়া ফেলেছিল সেসবের মধ্যে করাত দিয়ে মানুষ কাটা, ওয়াটার অব ইন্ডিয়া, এঙ রে আই প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি কেবল জাদু শিল্পীই ছিলেন না, এ শিল্পের প্রসারের জন্যে বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় একাধিক গ্রন্থ লিখেছেন। প্রাচীন বহু জাদুর মূল সূত্র তিনি আবিষ্কার করেছিলেন। জাদুশিল্পের নোবেল বলে খ্যাত আমেরিকার ‘দ্য ফিনিঙ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন তিনি দু বার। এছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে একাধিক পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি। সদা হাস্যময়, সমাজ-অঙ্গিকার লগ্ন এই শিল্পী ১৯৩৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য তাঁর জাপান সফরের সমুদয় অর্থ প্রদান করেন। তাঁর ব্যাপক পরিচিতি ছিল ‘জাদু সম্রাট’ হিসেবে। টাঙ্গাইলে তাঁর বাড়ির নাম দিয়েছিলেন ‘জাদুমহল’। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের টিভি চ্যানেলে প্রদর্শিত হয়েছে তাঁর জাদু। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ম্যাজিশিয়ান সমিতির সদস্য হিসেবে জাদুশিল্প চর্চার উন্নয়ন ও প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন তিনি। তাঁর পুত্র পি.সি সরকার জুনিয়রও একজন খ্যাতিমান জাদুশিল্পী। ১৯৭১ সালের ৬ জানুয়ারি জাপানের আশাহিকাওয়ায় বিশ্বনন্দিত জাদুশিল্পী পি.সি সরকার প্রয়াত হন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধএকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মানবতাবোধ