বিশেষজ্ঞদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ মেনে চলতে হবে

| শুক্রবার , ৯ জুলাই, ২০২১ at ৭:১২ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিনদিন চলে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এক সপ্তাহ ধরে শনাক্ত ও মৃত্যুতে দেশ নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে। প্রতিদিন নতুন রেকর্ড। সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতি নাজুক। তাই সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, লকডাউনের সুফল শতভাগ পেতে হলে সরকারের নির্দেশিত বিধিনিষেধ পুরোপুরি মেনে চলতে হবে। গত ৭ জুলাই দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গেল ঈদুল ফিতরের সময় সরকারের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। স্বজনদের সাথে ঈদ উদযাপনের জন্য বহু মানুষ গ্রামের বাড়িতে ছুটে গেছেন। ফলে ঈদের পরপর সংক্রমণ বেড়েছে। এই ধারা এখনো চলছে। অন্যদিকে, গ্রামেও করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেছে। অথচ এর আগে গ্রামে সীমিত সংখ্যক আক্রান্ত পাওয়া যেত।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমানে করোনার আগ্রাসী রূপ দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় আসন্ন ঈদুল আজহার সময়ে মানুষের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্যথায় অবস্থা বেসামাল হয়ে পড়বে। চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তাই জনসচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউনের বিধিনিষেধ কঠোরভাবে প্রতিপালনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সক্রিয় হতে হবে। গত বছরের ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর গতকালই এক দিনে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ধরা পড়ে। সংক্রমণের হারও সর্বোচ্চ ৩৫ দশমিক ০২ শতাংশ। মাত্র দুদিনে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার পূর্ণ হয়েছে।
মানুষ আসলে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করে দেওয়ার পরও লোকজন অবাধে রাস্তাঘাটে চলাচল করছে। যার কাজ আছে, সেও যেমন বের হচ্ছে, যার কাজ নেই, সেও বের হচ্ছে সমানুপাতে। এতে ডেকে নিয়ে আসছে সমূহ বিপদ।
৭ জুলাই তারিখেই ‘সড়কে বেড়েছে মানুষ ও গাড়ি, বাজারে ভিড়, পাড়া-মহল্লায় জটলা’ শীর্ষক আরেকটি সংবাদ আজাদীতে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধ শুরুর পর দিন যত যাচ্ছে নগরীর বিভিন্ন সড়কে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যানবাহনের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে, কাঁচাবাজারে মানুষের জটলা। মুখে অনেকেরই মাস্ক থাকে না। স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার তাগিদও নেই। তবে কোথাও কোথাও এমন ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেলেও নগরীর প্রবেশ মুখগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর অবস্থানে দেখা গেছে। প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম তিন/চার দিন কঠোরভাবে নগরী ও উপজেলায় বিধিনিষেধ চলছিল। রোববার থেকে কিছু মানুষ বের হতে শুরু করে। সোমবার থেকে মানুষ এবং যানবাহন সামলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন করোনা পরিস্থিতি খারাপ। সরকারের উদ্যোগের সাথে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। চলমান লকডাউনের মধ্যে আরোপিত বিধিনিষেধ পুরোপুরি মানতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লকডাউনের সুফল আমরা দেখেছি। যারা মেনেছেন তারা আজ অনেকটা মুক্ত জীবন-যাপন করতে পারছেন। তাদের জীবন-জীবিকাও নিরাপদে চলছে। আমাদেরও এ পথ অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, ভারতের সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম থেকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী গ্রামে চলাচলের কারণে সংক্রমণ হয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে ঈদের পর যে জেলায় যাতায়াত বন্ধ করা হলো, কিন্তু পাশের গ্রামে বন্ধ করা হলো না। তখন অযান্ত্রিক যানবাহন বা হেঁটে চলাফেরার কারণে পাশের গ্রামে সংক্রমণ চলে গেছে। ওই গ্রামে আবার লকডাউন করা হলো, কিন্তু তার পাশের গ্রামে করা হলো না। সেখানে আবার ছড়িয়ে পড়ল। এভাবে গ্রাম-গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ করোনার ডেল্টা ধরনের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি ভারতে গ্রামের মানুষ ও শহরের শ্রমিক প্রচুরসংখ্যক মারা গেছে। ভারতের এই শ্রেণির মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের জিনগত ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের যথেষ্ট মিল আছে। কাজেই গ্রামে ছড়াচ্ছে।’ আসলে সংক্রমণের হার যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে, তাতে শঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। লোকজন কোনোভাবেই করোনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। জ্বর-কাশি দেখা দিলেও করোনা টেস্ট করাচ্ছে না। অসচেতনতার অভাবে বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ সচেতনতা অবলম্বন। বিশেষজ্ঞদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ মেনে চলতে হবে

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে