বিশাল নীল পানির গর্ত

সনেট দেব | বুধবার , ১১ নভেম্বর, ২০২০ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

দ্য গ্রেট ব্লু-হোল। নামটি শুনে প্রথমেই মনে হতে পারে নিশ্চয়ই ব্ল্যাক হোল এর মত কিছু একটা। কিন্তু, আপনি যা ভাবছেন সেরকম কিছুই না। তাহলে, এটা আবার কি? গ্রেট ব্লু-হোল বেলিজ উপকূলে অবস্থিত একটি বৃহৎ সমুদ্রগর্ভস্থ গর্ত। উপর থেকে দেখলে মনে হবে এ যেন এক বিস্ময়কর চোখ। ব্লু-হোলগুলো মূলত একটি বিশাল কেভ নেটওয়ার্কের প্রবেশদ্বার। বেলিজের বেরিয়ার রিফ রিজার্ভ সিস্টেম অবস্থিত, এটি বেলিজ সিটি থেকে প্রায় ৬০ মাইল দূরে। এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র গর্ত হিসাবে বিশ্বাস করা হয়। এটির আকৃতির বৃত্তাকার, ব্যাসার্ধ ৩০০ মিটার (৯৮৪ ফুট) এবং ১২৪ মিটার (৪০৭ ফুট) গভীরে। স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ পানির ১২৫ মিটার গভীরে ৩১০ মিটার চওড়া এ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এলাকাটি ডাইভারদের জন্য অসাধারণ একটি এলাকা।
ধারণা করা হয় ৬৫ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে শেষবারের মতো যখন বরফ রাজত্ব করছে, পৃথিবীর সব পানি জমে জমে জড়ো হয়েছিল মেরু অঞ্চলে। সমুদ্রপৃষ্ঠও তাই তখন ছিল এখনকার চেয়ে অনেক নিচুতে। বেলিজে তখন সমুদ্রপৃষ্ঠ ছিল এখনকার চেয়েও আরো ১৫০ মিটার নিচুতে। তখন ক্যালসিয়াম কার্বনেট জাতীয় পদার্থ জমে তৈরি হয় পাথর। আর সেই পাথর দিয়ে সৃষ্টি হয় কেভের বিশাল কাঠামো। কিন্তু যখন বরফ আবার গলতে শুরু করে, সাগরের পানির উচ্চতাও বাড়তে শুরু করল। পানির নিচে ডুবে যায় সেই কাঠামো। মোটামুটি আজ থেকে ১০ হাজার বছর আগে পুরো কেভ নেটওয়ার্কই একেবারে পানির নিচে ডুবে যায়। আর তখনই কয়েক জায়গার পাথর ভেঙে সৃষ্টি হয় এই ব্লু- হোলগুলো।
বেলিজ এর প্রবাল প্রাচীর গুলো ১৯৯৬ সালে টঘঊঝঈঙ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বেলিজের সাতটি বিখ্যাত প্রবাল প্রাচীরের মধ্যে লাইটহাউজ প্রাচীরটির কেন্দ্রে এটি অবস্থিত। ব্লু-হোলের পানি বেশ নীল, যার কারণে সমুদ্রের সবুজাভ পানি থেকে এটিকে সহজেই আলাদা করা যায়। এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র গর্ত ধরা হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, এই ব্লু-হোল পৃথিবীতে অদ্বিতীয়। এটি ২০১২ সালে ডিসকভারি চ্যানেলের বিশ্বের সবচেয়ে অভূতপূর্ব জায়গা তালিকায় প্রথম স্থান দখল করে নেয়। সামুদ্রিক প্রবাল এবং জলজ উদ্ভিদ দ্বারা সন্নিবেশিত এই হোলটির জীববৈচিত্র্য জগদ্বিখ্যাত। এটি খুব পর্যটক প্রিয়, এই জায়গায় দেখার হচ্ছে স্কুবা কতিপয় জলজ প্রাণী, যারা অতল গভীরে থাকে। নানা বিরল প্রজাতির প্রচুর প্রাণী যা শুধুমাত্র এই স্থানে পাওয়া যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্ল্যাক ককাটো!
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে অধ্যাপক রঞ্জিত সাহার স্মরণ সভা