বিপর্যস্ত ‘বিমানবন্দর সড়ক’ : নাগরিক দুর্ভোগ কমানোর উদ্যোগ নিন

| বুধবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কটির বেহাল দশা নিয়ে। অভিযোগ রয়েছে, সড়কটির এ বেহাল দশা তৈরি হয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের কারণে। চট্টগ্রামের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়টির দৈর্ঘ্য ১৬ কিলোমিটার । প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয় প্রকল্প বাস্তবায়নে। প্রকল্পের লক্ষ্য চট্টগ্রাম শহরের ভয়াবহ যানজট নিরসন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, এলিভেটেড এক্সপ্রসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরুর পরই এই সড়কটি দিয়ে চলাচলকারীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। বৃষ্টি হলে ভাঙা রাস্তায় পানি জমে যায়। ফলে দুর্ঘটনায় আশঙ্কা মাথায় নিয়েই গাড়ি চলাচল করতে হচ্ছে। এছাড়া ভাঙা রাস্তার কারণে যানজটে পড়ে মানুষজনের অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।
বিমানবন্দর সড়কটি দীর্ঘ দিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে ক্ষোভ বাড়ছে নগরবাসীর মনে। তাঁরা রাস্তায় নেমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং সড়কটির সংস্কার দাবি জানান। গত ২৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বেহাল বিমানবন্দর সড়ক সংস্কার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। গত শনিবার সকালে সড়কটি সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধনও করেছে এলাকাবাসী। সেখানে সবার একটাই বক্তব্য ছিল, দ্রুত মেরামত করা হোক খানাখন্দে ভরা বিমানবন্দর সড়ক। মুক্তি দেয়া হোক দুর্ভোগ ও ভোগান্তি থেকে। ওই মানববন্ধনে অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এক সপ্তাহের মধ্যে সড়কটির ক্ষতিগ্রস্ত অংশ সংস্কারের আল্টিমেটাম দেন। অন্যথায় জনগণের স্বার্থে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। খবরে আরো বলা হয়, জরুরি ভিত্তিতে সড়কটি সংস্কারের অনুরোধ জানিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর সিডিএকে একটি চিঠি দিয়েছিল চসিক। এর আগে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের এক প্রতিবেদনে সড়কটির বেহাল দশার জন্য ৫টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রতিবেদনটিতে সড়কে খানাখন্দ থাকায় একাধিক সমস্যার কথাও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দুর্ঘটনার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া, যানবাহনের গতি ধীর হয়ে যাওয়া, রাস্তায় জলাবদ্ধতা হওয়া এবং সড়কের প্রশস্ততা কমে যাওয়া।
চসিকের চিঠি ও সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিমানবন্দর সড়কের বেহাল দশার জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চলমান নির্মাণ কাজ দায়ী। এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ের পিলার বা স্প্যান স্থাপনের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। এর পর পিলার স্থাপন হলেও গোড়া ভরাট না করায় চতুর্দিকে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। ধীরে ধীরে যা বড় হয়েছে। অবশ্য সিডিএর দাবি, ড্রেন না থাকায় রাস্তাটিতে সবসময় পানি জমে থাকে। বাসা-বাড়ির সাথে জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় বিমানবন্দর সড়ক। এতে রাস্তার অবস্থা শোচনীয় হয়েছে।
আল্টিমেটাম প্রদানকারী চসিক সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। মনে হচ্ছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এখানে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে বা যারা গাফিলতি করবে তাদেরকে জনগণ কোনদিনও ক্ষমা করবে না। তিনি আগামী শুক্রবারের মধ্যে সড়কটি সংস্কার করে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে তুলতে সময় বেঁধে দেন। তিনি বলেন, সড়কের ভাঙা দশার জন্য মানুষ যে ভারী ভারী যানবাহনের চাপায় পড়বে না তার নিশ্চয়তা কে দিবে? বৃষ্টি শুরু হলে কাদাপানির ভোগান্তি আর বৃষ্টি কমলে শুরু হয় ধুলো ঝড়। দেখে মনে হবে যেন একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার বাসিন্দা এরা। অব্যাহত ধুলিকনায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মানুষ। মানুষের ফুসফুসে ক্যান্সার বাসা বাঁধছে। এরকম একটি অমানবিক পরিস্থিতিতে বসবাস করছে এলাকার জনসাধারণ। যাদের কোন স্বাভাবিক জীবনধারা নেই বললেই চলে। নষ্ট সড়কের জন্য লাখো পথচারী এবং যানবাহনের যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি যেন শেষ হচ্ছে না।
সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। নাগরিক দুর্ভোগ কমাতে কর্তৃপক্ষ আশা করি মনোযোগী হবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে