বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সঞ্চার করতে হবে

| শনিবার , ১২ মার্চ, ২০২২ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

করোনার প্রভাবে দেশে বিদেশি বিনিয়োগে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। দেখা দিয়েছিল স্থবিরতা। এখন বিশ্ব অনেকটা স্বাভাবিক। অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে প্রয়োজন প্রচুর বিনিয়োগ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে সব বাংলাদেশি নাগরিক অবস্থান করছেন, এ ব্যাপারে তাদেরও উদ্যোগী হতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যমান আইন-বিধি আরো সংস্কার ও সহজীকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে দেশে বিনিয়োগ পদ্ধতি আরো সহজ করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সঞ্চার করতে হবে। বিদেশিদের জন্য বরাদ্দ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ার কথা। কিন্তু বাড়ছে না কেন। এর কারণ বের করে তা সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের অনেক সুযোগ রয়েছে। এ দেশের আছে বিশাল মানবসম্পদ, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় রয়েছে যথেষ্ট শ্রমশক্তি। এ শ্রমশক্তির দক্ষতা বাড়াতে হবে।
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় সুযোগ নিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন, বাংলাদেশকে আপনার ব্যবসার গন্তব্য বানান। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধার স্থান।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা যেন বাংলাদেশে বিশ্বের সেরা গন্তব্য হিসেবে খুঁজে পান তার জন্য বাংলাদেশ উদ্যোক্তাদের নীতিগত এবং অবকাঠামোগত সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত।’
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আছে দুর্দান্ত ভূ-কৌশলগত অবস্থান। সকল প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পরিবহন রুটের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি সংযোগ রয়েছে। এছাড়াও জনবহুল এবং ক্রমবর্ধমান দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে রয়েছে। বাংলাদেশের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার এবং এ অঞ্চলের আশপাশের বাজারগুলোতে উন্মুক্ত প্রবেশ সুবিধা রয়েছে। এই সুবিধাগুলো বাংলাদেশকে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য এবং ভবিষ্যতের উৎপাদন এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ১৬৮ মিলিয়নের বেশি মানুষের অভ্যন্তরীণ বাজার অফার করছে। এই মানুষগুলো তরুণ, উদ্যোমী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী।’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলো বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশ এখনো আগের জায়গাতেই পড়ে আছে। এ দেশে গড় এফডিআই এখনো মাত্র ৩০০ কোটি ডলারের মধ্যে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে ১৫ হাজার কোটি ডলারের বেশি এফডিআই পায়। বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জমির অপ্রতুলতা, সরকারি দপ্তরের সেবা নিতে হয়রানি, এক দরজায় সব সেবা না পাওয়া, আইনি দুর্বলতাসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে আসছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। বিডার তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০১৬ সালের বিনিয়োগ সম্মেলনে বাংলাদেশে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের কথা জানিয়েছিল ভারতের বড় দুই শিল্প গ্রুপ রিলায়েন্স ও আদানি। ওই অর্থ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা। আদানি গ্রুপ এ দেশে বন্দর, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), টার্মিনাল, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতে ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের কথা বলেছিল। আর রিলায়েন্স গ্রুপ বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ওই সম্মেলনে চীন, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশের উদ্যোক্তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ঘোষণা না দিলেও বড় বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল। এ ছাড়া অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী ওই সম্মেলনে যোগ দিতে না পারলেও শিগগিরই বাংলাদেশে এসে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেসব প্রতিশ্রুতির কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। শুধু রিলায়েন্স গ্রুপ কুমিল্লার মেঘনাঘাটে এত বছর পর একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে যাচ্ছে। অবশ্য এখনো কাজ শুরু করেনি।
তবে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার খুব তৎপর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই করোনা মহামারিতে বিশ্বের যে গুটিকয়েক অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমাদের স্বচ্ছ লক্ষ্য, বিচক্ষণ পরিকল্পনা, সুশাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, কঠোর পরিশ্রমী মানুষের অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং উদ্যোমী উদ্যোক্তাদের কারণে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের বিস্ময়।’
সেন্টার পর ইকোনোমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্স (সিইবিআর) ধারণা মতে ২০৩৬ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতি হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ‘উন্নয়ন মডেল’ এর দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এর ওপর ভর করে আরও উন্নয়ন করা যায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ তার ৪১৬ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে শীঘ্রই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত করার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে।’ এভাবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সঞ্চার করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে