বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবসম্মত

| বৃহস্পতিবার , ২৩ জুন, ২০২২ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সারা দেশে রাত আটটার পর দোকান, শপিং মল, মার্কেট ও কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার বিষয়টি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়ে শ্রম আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিবকে চিঠি দিয়েছে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, গত ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকীর সই করা শ্রমসচিবকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী জ্বালানির অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিজনিত বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ১১৪ ধারার বিধান কঠোরভাবে প্রতিপালন করে সারা দেশে রাত আটটার পর দোকান, শপিং মল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার ইত্যাদি খোলা না রাখার বিষয়টি যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়। শ্রমসচিব বলেছেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও সভা করা হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘সারা পৃথিবী সংকটপূর্ণ মুহূর্ত অতিক্রম করছে। সেই ক্ষেত্রে রাত আটটায় বন্ধ করলে সরকার যদি মনে করে কোথাও সাশ্রয় হবে, তাহলে আমাদের খুব বেশি আপত্তি নেই। কারণ, সংকটে আমরা সরকারের পাশে দাঁড়াতে চাই।’

আসলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়টি যেমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সময়োপযোগী। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে বাস্তবতা যেমন বিবেচনায় নিতে হবে, তেমনি দেখতে হবে তাতে প্রকৃত অর্থেই জ্বালানি সাশ্রয় হচ্ছে কি না। বর্তমানে সরকারি অফিসের সময় সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা। তবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি কর্তৃপক্ষ বলছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিদিন অন্তত দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি, ঐ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে পরিমাণ জ্বালানি প্রয়োজন হত, সেই জ্বালানির খরচও সাশ্রয় হবে বলে মন্তব্য করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণে আমরা দেখেছি, সন্ধ্যা ছয়টার পর বিদ্যুতের চাহিদা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বেড়ে যায়। বিদ্যুতের চাহিদার এই পরিবর্তন মূলত হয় সন্ধ্যার পর বাতি জ্বালানোর কারণে। সন্ধ্যার পর বিদ্যুতের এই বাড়তি চাহিদা যে শুধু দোকানপাট চালু থাকার জন্য তৈরি হয় তা নয়, মানুষের ঘরবাড়ির বাতিও একটি কারণ। তবে আমাদের হিসেবে, দোকানপাট বন্ধ থাকলে প্রায় অতিরিক্ত চাহিদার ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। মোহাম্মদ হোসাইনের মতে, সন্ধ্যার পর বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদা সামাল দিতে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয় তার উৎপাদন খরচও অনেক বেশি। আর এই বাড়তি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের যোগান দিতে আমাদের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালাতে হয়, যার ফলে বিদ্যুতের দামও অনেক গুণ বেড়ে যায়।

আমাদের বুঝতে হবে যে, বৈশ্বিক পরিস্থিতি নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বকে একটি খারাপ অবস্থার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ। এ বাস্তবতায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের কোনো বিকল্প নেই। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যাপারে সাশ্রয়ী না হলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। পরিস্থিতি যখন খারাপ যাচ্ছে, তখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যাপারে সাশ্রয়ী হাওয়াই জরুরি। সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকি দিতে হয়। দাম বাড়িয়েও ভর্তুকি কমাতে পারছে না। অন্যদিকে সরকার যখন ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দেয়, তখন চারদিকে সরকারের সমালোচনায় নেমে পড়েন অনেকে। সরকারের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো এ নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ পান। সরকারকে ঘায়েল করতে রীতিমতো মাঠে নেমে পড়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল। এমতাবস্থা সরকার আশা করে না। ফলে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে রাত ৮টার পর দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার ২০ জুন থেকে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় এবং রীতিমত তা কার্যকর শুরু হয়েছে।

আমাদের মনে হয়েছে রাত ৮টার পর শপিংমল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তটি বাস্তবসম্মত। সেটি কার্যকর করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে