বিদ্যুতের নাজুক পরিস্থিতির উত্তরণ কাম্য

| বৃহস্পতিবার , ২০ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, ‘দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট চলছে বলে একটি চিহ্নিত মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার করছে, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বৈশ্বিক করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের এই সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীর জ্বালানি সাপ্লাই চেইন অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি দেখা দেয়।’ পৃথিবীর ৯০ শতাংশের বেশি দেশ প্রাথমিক জ্বালানির জন্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল জানিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘আমদানিকারক দেশ হিসেবে এ পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও।’ মন্ত্রী বলেন, ‘এই মুহূর্তে পশ্চিমা দেশগুলোসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই চলছে জ্বালানি সংকট। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তারা ব্যাপকভাবে কমিয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার।’

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর কথাকে মেনে নিয়েও বলা যায়, সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও চলছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং। আজাদীতে ১৮ অক্টোবর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কাগজেপত্রে চট্টগ্রামে ১৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৩৯১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে ১২০৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয়েছে। বাকি ১৮৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয়েছে। এটি কাগজের হিসেব। বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গত সোমবার দুপুরে নগরীর ব্যস্ততম একটি সাবস্টেশনের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী চাহিদার মাত্র অর্ধেক বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ নেটওয়ার্ক টিকিয়ে রাখতে দিশেহারা হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

চলমান বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় সরকার ইতোমধ্যে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে সরকারি অফিসের সময়সীমা কমিয়ে বা এগিয়ে আনা, সরকারি-বেসরকারি অফিসে এসির ব্যবহার ২৫ ডিগ্রির নিচে না নামানো, মসজিদসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এসির ব্যবহার কমানো, বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠানাদি সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তার ফল মিলছে না। অফিস সময় পরিবর্তন করলেও বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটেনি।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) বলেছিল, দেশব্যাপী লোডশেডিংয়ের প্রভাবে শিল্পকারখানার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন শিল্পোৎপাদনের জন্য কারখানায় বিদ্যুতের জোগান নিশ্চিত করা জরুরি। সংকট মোকাবিলায় বিদ্যুতের রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা বলেন, ‘বর্তমান এ সংকট কতটা সামাল দিতে পারে সরকার তা বলার কোনো বিকল্প নেই। এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে আপাতত যতটুকু সংকট সামাল দেওয়া যায় তা-ই করুক। একই সময়ে যদি গ্যাসের উৎপাদনটা বাড়াতে পারে তা হবে উপযুক্ত।’ বিশ্বের অন্যান্য দেশের বর্তমান পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে তাঁরা বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৮৮ লাখ মানুষকে দেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোর জন্য। পাকিস্তান, লাউসেও একই অবস্থা। আর নেপালের অবস্থা তো আরো খারাপ। স্পটতই এটা একটা বিশ্ব সংকট। তাই এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে যতটুকু সচেতন হওয়া যায় ততটুকুই হতে হবে। আমরা বলবো বাংলাদেশ সরকার এ জায়গায় অনেক সচেতন। আগে থেকেই তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’ তাঁরা বলেন, ‘চলমান গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কট বহির্বিশ্ব থেকে উদ্ভূত হয়েছে। জ্বালানির ওপরে আমাদের একটা বড় অংশই হচ্ছে আমদানি নির্ভর। সুতরাং এসবের যেহেতু দাম বেড়ে গেছে সেহেতু এসব ব্যবহার কমানো ও সচেতন হওয়া ছাড়া উপায় নেই।’

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় যে, বিদ্যুতের সীমাহীন ঘাটতিতে দেশের জনজীবনে যেমন দুর্ভোগ চলছে, তেমনি এর প্রভাব পড়েছে শিল্প-কারখানায়, ব্যবসায়-বাণিজ্যে এবং সামগ্রিক জনজীবনে। অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২১-২২ সালের বাজেটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। এ জন্য ব্যয় বরাদ্দ আছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত না করা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ঘাটতির কোনো পরিবর্তন হবে না। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৬০ শতাংশ গ্যাসনির্ভর। বিশেষজ্ঞরা সরকারের অপরিপক্ক সিদ্ধান্তের কারণে এ বিপর্যয় ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন। তারা আরো বলেন, আমদানি করা তরল গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ফলে এ বিপর্যয় ঘটেছে। সবমিলে চট্টগ্রামে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে, তা অপ্রতুল। যার কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে। আমরা এই নাজুক পরিস্থিতির উত্তরণ চাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে