বিদ্যাসাগর : ঐতিহ্য প্রিয় ও আধুনিক এক জীবনসত্তা

কানাই দাশ | শুক্রবার , ৫ মার্চ, ২০২১ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বা বিদ্যাসাগরের জন্মের ২০০ বছর পূর্ণ হল এ বছর। কিন্তু আমাদের দেশে এই মহামানবের ব্যক্তি ও জীবনসত্তার পরিপূর্ণ প্রকাশ এখনো হয়নি। তা যে হয়নি তার প্রধান কারণ তিনি যে যুগ ভাবনা বা সমাজ মানসের বিরুদ্ধে আজীবন নিরলস লড়াই করেছিলেন সেই সমাজ ও সংস্কৃতির পশ্চাদপদ আবহ ও প্রভাব বলয়ের বাইরে আমরা এখনো যেতে পারিনি বরং বিদ্যাসাগরের সেদিনের ঈপ্সিত আকাঙ্ক্ষার আমূল পরিবর্তনকামী প্রভাবকে আজকের ধর্মান্ধ বিশ্বাস ও বিভেদে পরিকীর্ণ অসহিষ্ণু সমাজে দ্রোহ বলে বিবেচিত হবে। রবীন্দ্রনাথ বিদ্যাসাগরের জীবন মূল্যায়ন করে লিখছেন “দয়া নহে, বিদ্যা নহে, ঈশ্বরচন্দ্রের চরিত্রের প্রধান গৌরব তাঁহার অজেয় পৌরুষ, তাঁহার অক্ষয় মনুষ্যত্ব”। এই অনন্যসুলভ মনুষ্যত্বের প্রাচুর্যই হল তাঁর জীবনের প্রধান পাথেয়। তিনি আমৃত্যু নিপীড়িত মানবতার কল্যাণে, সংস্কার মুক্ত সমাজ মানস তৈরিতে নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন নির্ভীক চিত্তে, দ্বিধাহীন প্রতীতিতে। বিদেশী শাসক গোষ্ঠীর উদ্ধত অহংকারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সতত প্রতিবাদী। কিন্তু অত্যুৎসাহী চরমপন্থাকে তিনি চিরদিন অপছন্দ করতেন। আরোপিত কোন বিশ্বাস না মেনে যুক্তি ও জ্ঞানের আলোয় জীবন ও জগতকে দেখার চেষ্টা করতেন। তিনি শুধু যুক্তিবাদী ছিলেন না মানবিক কর্তব্যের প্রতি দায়বদ্ধ ও চিন্তার দিক থেকে ছিলেন অজ্ঞেয়বাদী। ঈশ্বরের স্বরূপ ও প্রকৃতি বা কোন ধর্মতত্ত্ব নিয়ে যে কোনরূপ আলোচনায় ছিলেন নিরুৎসাহী যা ছিল সে সময়ের এক দুর্লভ বুদ্ধিবৃত্তিক ঘটনা। সে সময়ের বাংলার সামাজিক ও সংস্কৃতির অঙ্গনের তিনটি সাড়া জাগানো ভাবাদর্শগত ঘটনা- ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠীর উগ্র ধর্মদ্রোহী ইহ জাগতিকতা, রামমোহন পরবর্তী ব্রাহ্ম ধর্মের সংকীর্ণ মত ভিন্নতা ও রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের হিন্দু ধর্ম পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলনের প্রচণ্ড উচ্ছ্বাস- এসব থেকে তিনি সচেতন প্রজ্ঞায় দূরে ছিলেন বরং যতটুকু পেরেছেন এই উতল কলরোলের মধ্যে তিনি ব্যাপক অশিক্ষা, বিধবা বিবাহ, বহু বিবাহ, বর্ণ প্রথা, হিন্দু সমাজের এ সব অমানবিক প্রথা পদ্ধতি থেকে সমাজকে মুক্ত করার কঠিন কাজে প্রচণ্ড সামাজিক প্রতিরোধের মুখেও নিজেকে বিরামহীনভাবে ব্যাপৃত রেখেছেন- এসব করতে গিয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও পরম্পরা থেকে তিনি কিন্তু কখনো বিচ্যুত হননি আবার বাস্তব প্রয়োজনে ইংরেজি ভাষা ও পাশ্চাত্য দর্শন ভাবনাকে সংস্কৃত কলেজের পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেছেন নির্দ্বিধায় কেননা সংস্কৃত সাহিত্য ও ভারতীয় দর্শন ভাবনার শিক্ষক হয়েও বেদান্ত ও সংখ্যা দর্শনকে তিনি সঠিক মনে করেননি। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী এজন্যই তাঁকে যথার্থভাবে একজন traditional modernizer বা ঐতিহ্য প্রিয় আধুনিক মানুষ বলেছেন। তিনি যে ঐতিহ্যপ্রিয় ছিলেন তা তাঁর চলনে-বলনে-কর্মে সতত প্রকাশ পেত। হাঁটুর নীচ পর্যন্ত ধুতি, গায়ে শাল এবং বিখ্যাত চটিজুতো পরা বিদ্যাসাগরের যে ছবি আমরা দেখি তাই ছিল এক ঐতিহ্য প্রিয় বাঙালির মূর্ত প্রতিরূপ। বাঙালির ভাষা ও আবহমান সংস্কৃতির সদর্থক দিকগুলোকে তিনি সযত্মে লালন করেছেন।
তিনি আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন। কেননা যে মনু পরাশর শাসিত নিশ্চল ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজের দুঃসহ ও অপরিবর্তনীয় অনাচারের বিরুদ্ধে তাঁর পরিবর্তন প্রত্যাশী মানবিক মর্যাদার সংগ্রাম, পাশ্চাত্য যুক্তিগ্রাহ্য শিক্ষাদর্শের পক্ষে অবস্থান, ব্যতিক্রমী অজ্ঞেয়বাদী দৃষ্টিভঙ্গী তথা মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজ ভাবনা ছিল তাঁর অন্বিষ্ট। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই রেনেঁসা মানবতাবাদী। এই রেনেঁসা মানবতাবাদের বৈশিষ্ট্য হল, পারলৌকিকতার চাইতে ইহজাগতিকতাকে প্রাধান্য প্রদান, মানবিক ক্ষমতার প্রতি আস্থা, যুক্তি ও বুদ্ধির অবাধ চর্চার প্রতি আগ্রহ, ইতিহাসকে মানবিক বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত গতিশীল প্রক্রিয়া হিসাবে বিচার করা ও সর্বোপরি এনলাইটেনমেন্টে বিশ্বাস। এসব বৈশিষ্ট্যে তাঁর জীবন ভাবনা ও কর্মকাণ্ড ঋদ্ধ ছিল। এ নিরিখে বিদ্যাসাগর ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর কথিত বাংলার রেনেঁসার অন্তর্নিহিত দুর্বলতা ও অসংগতির ঊর্ধ্বে এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব। রেনেঁসার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য সেকুলার এনলাইটেনমেন্টের প্রকাশ সে সময়ে আমরা শুধু তাঁর মধ্যেই দেখি। এদিক থেকে তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের এক নি:সঙ্গ শেরপা।
১৮৪১ সালে সংস্কৃত কলেজ থেকে শিক্ষা শেষ করে সে বছর তিনি ডিসেম্বরে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের হেড পণ্ডিত হিসাবে মাসিক ৫০ টাকা বেতনে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন। এখানেই তিনি জি.টি মার্শালের সাহচর্যে ইংরেজি ভাষা ও পরবর্তীতে হিন্দি ভাষা রপ্ত করেন। কিন্তু শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে বাংলাকেই তিনি গুরুত্ব দেন ও প্রমিত বাংলা গদ্য ভাষার বিকাশে অসাধারণ কাজ করেন। ১৮৫১ সালে সংস্কৃত কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগ দেন। ১৮৫২ সালের ১২ এপ্রিল নোটস অন সংস্কৃত কলেজ” এ লেখেন “If the students of sanscrit college be made familiar with English literature they will prove them ablest contributors to an “elightened Bengali literature”, লিখছেন বাংলার শিক্ষাব্যবস্থার তত্ত্বাবধায়কদের এই আলোকিত বাংলা সাহিত্য সৃষ্টির কাজকে প্রধান লক্ষ্য হিসাবে নেয়া উচিত। এ ছিল তাঁর শিক্ষা দর্শন। তিনি শুধু শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে বাংলা চালুর কথা বলে থেমে থাকেননি ১৮৫৫ সালে শিশুদের জন্য বাংলা শেখার যুগান্তকারী মৌলিক রচনা “বর্ণ পরিচয়” দুখণ্ডে প্রকাশ করেন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এই “বর্ণ পরিচয়” সূত্র ধরে বাংলা চর্চা শুরু করেন শৈশবে। তিনি ছিলেন বাংলা গদ্যের জনক- রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বাংলা গদ্যের প্রথম যথার্থ শিল্পী। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্য ভাগে বিশ্ব সাহিত্য ও জ্ঞান ভাণ্ডারের সাথে বাঙালির পরিচয়ের গুরুত্ব সঠিকভাবেই উপলব্ধি করতে পেরে তিনি এ সবের বাংলা অনুবাদের উপর জোর দিয়েছিলেন। বস্তুত তাঁর সৃষ্টিশীল অনুবাদকর্মই হয়ে উঠে তাঁর বাংলা গদ্য ভাষা নির্মিতির প্রধান উপায়। তাঁর অনুদিত হিন্দি থেকে বেতাল পঞ্চবিংশতি, সংস্কৃত থেকে “শকুন্তলা”, শেঙপিয়রের “কমেডি অব এররস” কে “ভ্রান্তিবিলাস” নামে এবং “রামায়ণ থেকে সীতার বনবাস” এই চারটি বই হল মার্জিত ও পরিশীলিত বিদ্যাসাগরীয় বাংলা গদ্যের ভিত্তি। কবি বিষ্ণু দে বলেছিলেন “there was the great European, who was a Brahmin Pandit-Vidyasagar, who translated from sanscrit as well as from Shakespeare.” এছাড়াও বস্তু বিশ্ব, প্রাণীজগত, মানবদেহ, সময়ের পরিমাপ ইত্যাদি বিষয়ে বাংলার শিক্ষার্থীদের পরিচয় ঘটানোর জন্য “বোধোদয়” নামে গ্রন্থ রচনা করেন, যাতে তাঁরা জীবন ও জগত সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ ধারণা লাভ করে।
অন্যদিকে তাদের বিজ্ঞানী নিউটন, কোর্পানিকাস, গ্যালিলিও হার্শেল প্রমুখের জীবন ও কাজের সাথে পরিচিত করিয়ে যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক হিসাবে গড়ে তুলতে ইংরেজি থেকে অনুবাদ করে লেখেন “জীবন চরিত।” এর বাইরে সংস্কৃত ও বাংলা ব্যাকরণ সহ বাংলা ভাষায় তিনি এ জাতীয় কমবেশি ২০টি গ্রন্থ রচনা করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে অত্যন্ত উঁচুমানে নিয়ে যান। অনুজ বঙ্কিমচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে পাঠ্যপুস্তক প্রণেতা ও অনুবাদক হিসেবে উপহাস করলেও পাণ্ডিত্যে, কর্মে-চিন্তায়-মননে, সংস্কারমুক্ত দ্রোহী ভাবনায় বিদ্যাসাগর ছিলেন তাঁর চাইতে অনেক অগ্রসর। শুধু বাংলা ভাষা শিক্ষা সহজ করার জন্য নয় একটি জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনও তিনি বোধ করেছিলেন।
সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে তিনি স্কুল ইনসপেক্টরের দায়িত্বও পান- কলকাতার পার্শ্ববর্তী পাঁচটি জেলার। এ সময়ে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই প্রচণ্ড সামাজিক বাধা সত্ত্বেও নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে অতি দ্রুত ৪০টির মত গার্লস স্কুল ও ২০টি মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন যা সে সময়ে বাংলায় শিক্ষা বিস্তারে বিরাট ভূমিকা পালন করে। এমনকি নিজ খরচে নিজ গ্রামে তিনি আলাদা করে মেয়েদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। সাধারণের হিতার্থে সামাজিক জড়ত্ব ও অন্ধকার ঘুচাতে তিনি শিক্ষার এই সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। কিন্তু সরকারের আশানুরূপ সাহায্য না পেয়ে ১৮৫৯ সালের দিকে তিনি সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। কলকাতাতে গড়ে তুলেন তাঁর অন্যতম কীর্তি—উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট”। এখানে তিনি নিজের মত করে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জ্ঞানের সমন্বয়ে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান মনস্ক সেকুলার উচ্চ শিক্ষা চালু করেন। কিছু দিনের মধ্যে এটি মানে-মর্যাদায় কলকাতার একটি অনন্য উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় ও ফলাফলের দিক থেকে অভিজাত প্রেসিডেন্সী কলেজকে পেছনে ফেলে দেয়। এটি আজ বিদ্যাসাগর কলেজ নামে পরিচিত।
শিক্ষাব্রতী এই মহান শিক্ষক শুধু শিক্ষার সংগ্রাম নয় সম্পূর্ণ মানবিক দায় থেকে প্রচলিত সমাজের বিরুদ্ধে এক অসম যুদ্ধে লিপ্ত হন। অধ্যক্ষ হয়েই প্রচণ্ড বাধার মুখে সংস্কৃত কলেজে কায়স্থ সহ সব বর্ণের শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যবস্থা করেন যেখানে ব্রাহ্মণ সন্তান ছাড়া অন্য কেউ ভর্তি হতে পারত না। পুরো সমাজ বিরুদ্ধে যাবে জেনেও অসহায় হিন্দু বিধবা নারীদের মুক্তির জন্য বিধবা বিবাহ চালুর উদ্যোগ নেন। নানা তর্ক বিতর্কের পরে রক্ষণশীল প্রভাবশালীদের সর্বাত্মক প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মুখে এমনকি জীবন সংশয়ের হুমকির মধ্যেও তিনি স্থির থেকে ব্রিটিশ আইন সভার সহযোগিতায় ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহকে আইনে পরিণত করেন। ঈশ্বর লাভের চেয়ে এটাকেই তিনি “জীবনের প্রধান সৎকর্ম” বলেছেন। নিজের জীবনের উপার্জিত বিপুল অর্থ শুধু নিজ পরিবারের জন্য নয় বিধবা বিবাহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা, দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো সহ সর্বজন হিতার্থে অকাতরে এমনকি ঋণ করেও ব্যয় করেছেন। তিনি জমিদারী প্রথা ও শোষণকে ঘৃণা করতেন এবং বর্ধমান রাজের একটি তালুক গ্রহণ করার অনুরোধ তিনি প্রত্যাখ্যান করেন বিনীতভাবে। সাধারণ মানুষ যেভাবে ভাবেন সে অনুযায়ী তিনি শুধু বিদ্যার সাগর বা দয়ার সাগর ছিলেন না, সার্বিক অর্থে ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা “আধুনিক মানুষ”, কর্মে-চিন্তায় ও প্রতীতিতে।
আট বছরের কিশোর বিদ্যাসাগর পিতার সাথে পায়ে হেঁটে মেদিনিপুর থেকে কলকাতায় আসার পথে রাস্তার মাইলস্টোনের অক্ষর দেখে যেমন ইংরেজি সংখ্যা শিখে ফেলেছিলেন অসাধারণ স্মৃতিশক্তি দিয়ে তেমনি পরিণত বয়সে কলকাতার নাগরিক জীবনের জটিল বাস্তবতা থেকে নির্ভুলভাবে নিতে পেরেছিলেন জগত ও জীবনের মাইলস্টোনের সঠিক পাঠ। বৈষয়িক সমৃদ্ধির লোভ ও আধ্যাত্মিক ভাবালুতা সহ সমস্ত জাগতিক ও পারলৌকিক কামনা ও সংকীর্ণতা থেকে অত্যাশ্চর্যভাবে মুক্ত রাখতে পেরেছিলেন নিজেকে বাস্তবোচিত বুদ্ধি ও দার্শনিক প্রতীতিতে- রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘বড় আমিকে’ বা নিজের মহত্ত্বকে তিনি প্রধান করে তুলেছিলেন।
শেষ জীবনে বানপ্রস্থে বা পিতৃপুরুষদের মত ধর্মাশ্রমে যাননি। কাটিয়েছেন কবরব মুখরিত খ্যাতির প্রাঙ্গণ থেকে বহুদূরে সমাজের অবহেলিত, অচ্ছুত, প্রান্তিক উপজাতি সাঁওতালদের সহজ সরল অথচ শান্ত নীরব জনপদে। মৃত্যুর আগে নিজের জীবন দর্শন নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘আমি কোন দেবতা সৃষ্টি করে প্রার্থনা করতে পারিনে, নিজের কাছ থেকে নিজের যে মুক্তি সেই দুর্লভ মুক্তির জন্য চেষ্টা করি। সে চেষ্টা প্রত্যহ করতে হয়। তা না হলে আবিল হয়ে উঠে দিন। আরতো সময় নেই যাবার আগে সেই বড় আমিকেই জীবনে প্রধান করে তুলতে হবে, সেটাই আমার সাধনা (“এপ্রিল, ১৯৪১,’ মংপুতে রবীন্দ্রনাথ) বিদ্যাসাগরের জীবন দর্শনও ছিল ঠিক তাই। ইহজগতকেই প্রধান মনে করে, তিনি তাকেই প্রতিটি মানুষের জন্য কল্যাণকর করে তুলতে চেয়েছিলেন, আপনার অসাধারণ চিত্তবৃত্তির সাধনায়। আঘাতের পর আঘাত এসেছে সমাজ এমনকি নিজ পরিবারের পক্ষ থেকে কিন্তু সব বাধা উজিয়ে শুভকর্মপথে তিনি চলেছেন একাকী নির্ভয়ে। এজন্যেই হয়তো রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন যে বিশ্বকর্মা চার কোটি বাঙালি তৈরি করতে করতে হঠাৎ ভুলে একজন মানুষ তৈরি করে ফেলেছিলেন। দ্বিশত জন্মজয়ন্তীতে সেই ব্যতিক্রমী ‘মানুষকে’ জানাই সশ্রদ্ধ প্রণিপাত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটিপ সই
পরবর্তী নিবন্ধআমান বাজারে সুন্নি কনফারেন্স