বিদেশের মাটিতে বিরল সম্মান

প্রফেসর ডা. ইমরান বিন ইউনূস | শনিবার , ২৮ মে, ২০২২ at ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ

ধন্যবাদ ‘মুুক্তি, সাম্য, মৈত্রী’ র দেশ ফ্রান্স। মেডিকেল অধ্যাপক হওয়ায় যে সম্মানটুকু পেলাম সেজন্যে। নিজের দেশে যা কখনও পাইনি, পাব না। আমার দেশে সম্মান শুধু মাত্র ক্ষমতায়িত, আমলা, উর্দিধারী ও ধনাঢ্য গণদের জন্য। ভিভিআইপি, ভিআইপি, সিআইপি। যত্তোসব। যা শেখ শাদীর গল্প মনে করায়। নরমেন্ডী যাবো বলে গ্যারে সেইন্ট লেজারে রেল স্টেশনের টিকেট কাউন্টারে দাঁড়ালাম। ২৫০ কিমি দূরে গারে ডি সিনে যেতে হবে। রিটার্ন ফেয়ার ১৬০ ইউরো প্রতিজনের। আমার সাথে ফ্রান্সে প্রবাসী একজন ডাক্তার বন্ধু ছিল। কাউন্টার থেকে বলল ট্রেন ১৫ মিনিট পর- তাই কোন ডিসকাউন্ট নেই। এর পর ফটো আইডি চাইল। বন্ধু তার নেশনাল আইডি দিল। আমি পাসপোর্ট নিয়ে যাইনি। আইডি ছাড়া টিকেট দেবে না। কতদিনের ইচ্ছা ডি-ডে বইয়ের জীবন্ত পাতাগুলো দেখব। মন খারাপ। হঠাৎই মনে হলো আমার ভিজিটিং কার্ড দিয়ে কাজ হয় কিনা। বললাম। দেখতে চাইলো। দিলাম। ঘটনার সূত্রপাত এখানেই। মনোযোগ দিয়ে দেখে বলল, তুমি মেডিকেলের প্রফেসর বিশেষজ্ঞ। মাথা নাড়লাম। সে কম্পিউটার চালাতে লাগলো। কয়েক মিনিট পর বলল তুমি প্রফেসর বিশেষজ্ঞ তোমাকে ৫০% ডিসকাউন্ট দেয়া হলো। মানে ১৬০ এর বদলে ৮০। ক্রেডিট কার্ড দিলাম, টিকেট নিলাম। চিন্তা ঘুরপাক নিয়ে ট্রেনে চাপলাম। ভাবতে থাকলাম যথাযথ এসওপি থাকায় একজন কাউন্টার অপারেটরও যথাযথ ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমলাদের আমলায়নের পুটাপ আর পুটডাউনের বৃত্তে ঘুরপাক খেতে হয় না। আমলা, উর্দিধারী, বণিকদের চেয়ে অধ্যাপক বিশেষজ্ঞের সামগ্রিক সম্মান সবার উপরে, সে দেশে জ্ঞানে উজ্জ্বল প্রভুর মনোবৃত্তি বিকশিত হয়। দাসের নয়। এখানে একজন অধ্যাপক বিশেষজ্ঞকে সব এজেন্সী যত পারে হেনস্থা করে, এমনকি স্থানীয়মান অবজ্ঞা করেও। আমার এখন মনে হয়, ‘ব্রেন ড্রেন ইজ বেটার দেন ব্রেন ইন ড্রেন’।
বিদেশের এই সম্মানটুকু মনে থাকবে বহু দিন, ভালো লাগবে। কষ্টও হবে যখন তার ব্যতিক্রম দেখব নিজ দেশে। আমলা, উর্দি আর বণিকদের দাপট দেখতে থাকব। এই টিকেট টা আমার পেশার সম্মানের স্মারক হয়ে থাকবে। আবারও ধন্যবাদ ‘মুুক্তি, সাম্য, মৈত্রী’ র দেশ ফ্রান্স।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপরিবারের সুশিক্ষায় সমাজের অবক্ষয় রোধ করতে পারে
পরবর্তী নিবন্ধএকাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালির অধিকার আদায়ের যুদ্ধ