বিদেশগামীদের ফি জমা দিয়েই যেতে হবে জেলা কর্মসংস্থান অফিসে

করোনার টিকার জন্য সুরক্ষা ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের আগে বিএমইটি (জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো)’র ডাটাবেজে নিবন্ধিত হতে হবে বিদেশগামী কর্মীদের। ইতোমধ্যে বিএমইটি’র ডাটাবেজে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বৈধ পাসপোর্ট দিয়ে বিএমইটি’র ওয়েবসাইট (www.bmet.gov.bd) বা আমি প্রবাসী (Ami Probashi) অ্যাপসের মাধ্যমে এ নিবন্ধন করা যাবে। তবে আগ্রাবাদের জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে সরাসরি গিয়েও বিদেশগামী কর্মীরা বিএমইটি’র ডাটাবেজে নিবন্ধিত হতে পারবেন। সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকেট সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। নিবন্ধন ফি হিসেবে বিকাশ/নগদ/শিউর ক্যাশের মাধ্যমে বিএমইটি’র অনুকূলে নির্ধারিত ২০০ টাকা জমা দিয়েই জেলা কর্মসংস্থান অফিসে যেতে হবে বিদেশগামী কর্মীদের। এ তথ্য নিশ্চিত করে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার আজাদীকে বলেন, প্রবাসী কর্মীরা চাইলে ঘরে বসে অনলাইনে এ নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারেন। যারা অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে অপারগ, তাদের জন্য অফিসে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়েছে। যারা সরাসরি কর্মসংস্থান অফিসে এসে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে চান, তাদের অবশ্যই বিএমএইটি’র অনুকূলে বিকাশ/নগদ/শিউর ক্যাশের মাধ্যমে ২০০ টাকা ফি পরিশোধ করে আসতে হবে। আর আসার সময় পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকেট সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) ধারীরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ ফি জমা করবেন। বিকাশ/নগদ/শিউর ক্যাশ অ্যাপসের পে-বিল অপশনে গিয়ে বিএমইটি’র অনুকূলে ২০০ টাকা পরিশোধ করা যাবে। এই প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট ও মোবাইল নম্বর প্রয়োজন হতে পারে। তবে ই-পাসপোর্ট ধারীদের সোনালী ব্যাংক, আগ্রাবাদ কর্পোরেট শাখার ২০০ টাকার পে-অর্ডার নিতে হবে। এরপর কর্মসংস্থান অফিসে এসে ফরম পূরণ করে জমা দিলেই হবে। বিএমইটি’র ডাটাবেজে নিবন্ধিত হওয়ার পর বিদেশগামী কর্মীরা সহজেই সুরক্ষা অ্যাপস বা সুরক্ষা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন।
এদিকে, বিএমইটি’র ডাটাবেজে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় ফি জমাদানে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে বলে জানান জেলা কর্মসংস্থান অফিসের কর্মকর্তারা। যার কারণে সবাইকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, শনিবার ৭২৩ জনের কাগজপত্র জমা নিয়েছি। কিন্তু এর মাঝে ফি জমা করা সম্ভব হয়েছে ১৭২ জনের। ফি জমা করা এই ১৭২ জনের ডাটাবেজে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু বাকিদের ফি জমা করতে না পারায় নিবন্ধন করা যায়নি। দিনে একটি নির্দিষ্ট কোটার পর আর ফি জমা করা যাচ্ছে না। এই ফি টাও জমা করা যায় রাত দশটার পর। এতে করে সবার ভোগান্তি হচ্ছে। প্রবাসী কর্মীরাও এক সাথে সবাই এসে অফিসে ভিড় করছেন। অথচ আমরা এলাকা ভিত্তিক তারিখ নির্ধারণ করে দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি। কিন্তু তারা সেটি না মেনে, সবাই ভিড় করছেন। এতে আমাদেরও অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।
চট্টগ্রামের বিদেশগামী কর্মীদের নিবন্ধন কখন-কিভাবে : চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী- বিদেশগামী কর্মীদের সুবিধার্থে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিএমইটি’র ডাটাবেজে নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে।
এদিকে, বিএমইটি’র ডাটাবেজে নিবন্ধনে চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলা ভিত্তিক সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস। শুধুমাত্র সৌদি আরব ও কুয়েতগামী কর্মীরা এ সময়ে নিবন্ধন করতে পারবেন। নির্ধারিত তারিখে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিদেশগামী কর্মীরা সরাসরি আগ্রাবাদের জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে গিয়ে বিএমইটি’র ডাটাবেজে নিবন্ধিত হতে পারবেন।
জেলা কর্মসংস্থান অফিসের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ২ ও ৩ জুলাই শুধুমাত্র চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (মহানগর) এলাকার বিদেশগামী কর্মীদের, ৪ জুলাই বোয়ালখালী, কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলার বিদেশগামী কর্মীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। আর ৫ জুলাই হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার, ৬ জুলাই রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলার, ৭ জুলাই ফটিকছড়ি ও সীতাকুণ্ড উপজেলার, ৮ জুলাই সাতকানিয়া ও সন্দ্বীপ উপজেলা এবং ৯ জুলাই লোহাগাড়া, বাঁশখালী ও মীরসরাই উপজেলার বিদেশগামী কর্মীদের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
৯ জুলাইয়ের পর দুবাই, ওমানসহ অন্যান্য দেশে কর্মরত বিদেশগামীদের নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন জেলা কর্মসংস্থান অফিস সংশ্লিষ্টরা।
বিএমইটি’র ডাটাবেজে নিবন্ধিত হলে সহজেই সুরক্ষা ওয়েবসাইটে টিকার জন্য নিবন্ধন করা যাবে। সুরক্ষা ওয়েবসাইটে টিকার জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও টিকা গ্রহণে এসএমএস পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বিদেশগামী কর্মীদের। এসএমএস না পাওয়া পর্যন্ত জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস কিংবা টিকা কেন্দ্রে ভিড় না করার অনুরোধ জানিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে বিদেশগামী কর্মীদের করোনা টিকার আওতায় আনতে দিক-নির্দেশনামূলক বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বিদেশগামী কর্মীরা কিভাবে বিএমইটি (জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো)’র ডাটাবেজ ও সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধিত হবেন, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে। মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, চট্টগ্রাম।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যে সকল প্রবাসী কর্মীর বিএমইটি’র নিবন্ধন ও স্মার্ট কার্ড নেই এবং যাদের ২০২১ সালের আগে নিবন্ধন বা স্মার্ট কার্ড আছে; তাদের প্রথমে বিএমইটি’র ডাটাবেজে নিবন্ধিত হতে হবে। ২ জুলাই থেকে তাদের বিএমইটি’র ডাটাবেজে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। বৈধ পাসপোর্ট দিয়ে বিএমইটি’র ওয়েবসাইট (www.bmet.gov.bd) বা আমি প্রবাসী (Ami Probashi) অ্যাপসের মাধ্যমে এ নিবন্ধন করা যাবে। অথবা সরাসরি জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে গিয়ে বিদেশগামী কর্মীরা বিএমইটি’র ডাটাবেজে নিবন্ধিত হতে পারবেন। সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকেট সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। তবে নিবন্ধন ফি হিসেবে বিকাশ/নগদ/শিউর ক্যাশের মাধ্যমে বিএমইটি’র অনুকূলে নির্ধারিত ২০০ টাকা ফি জমা দিয়েই কর্মসংস্থান অফিসে যেতে হবে বিদেশগামী কর্মীদের।
তবে চলতি বছরের (২০২১ সালের) জানুয়ারি থেকে যারা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে নাম নিবন্ধন করেছেন তাদের আর বিএমইটি’র ডাটাবেজে নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই। তারা সরাসরি সুরক্ষা অ্যাপ বা www.surokkha.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে টিকার জন্য নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারবেন। সুরক্ষা ওয়েবসাইটে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে মোবাইলে এসএমএস-এর মাধ্যমে টিকা গ্রহণের তারিখ ও সময় জানিয়ে দেওয়া হবে। টিকার নিবন্ধন কার্ড সাথে নিয়ে নির্ধারিত তারিখে গিয়ে টিকা নিতে পারবেন বিদেশগামী কর্মীরা।