পরীক্ষা বাদে বিকল্প ভাবনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়

| রবিবার , ৪ জুলাই, ২০২১ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

সিদ্ধান্ত ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর ৬০ দিন ক্লাস করিয়ে এসএসসি এবং ৮৪ দিন ক্লাস করিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এজন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস করে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। কিন্তু করোনার কারণে দুইবার তারিখ দিয়েও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থেকে পিছু হটতে হয়েছে। এখন পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া হবে তা নিয়ে চিন্তায় মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ডের কর্তা ব্যক্তিরা। আর পরীক্ষা নিয়ে চরম উদ্বেগে সময় কাটাচ্ছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার বর্তমান পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে, কখন শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানো যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই আপাতত পরীক্ষা বাদে বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করার পথে এগুতে হচ্ছে। সেজন্য শিক্ষাবোর্ডসহ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তাদের সুপারিশ পেলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হবে। এদিকে চলতি বছর হয়তো আর পরীক্ষা নেওয়া যাবে না, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সমপ্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন ইঙ্গিত দেন তিনি। এর আগে সংসদে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, শিগগিরই এসএসসি-এইচএসসির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুর হোসেন বলেছেন, যেহেতু আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাচ্ছে না, তাই যত বিকল্প পদ্ধতি আছে সেগুলোর প্রস্তুতি শেষ করে রাখছি। যখন যেটা প্রয়োগ করা যায়, সেটাই বাস্তবায়ন করা হবে। বিকল্প প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এজন্য শিক্ষাবোর্ড ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারাই পরীক্ষার বিকল্প মতামত দেবেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি মিললেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এ সংক্রান্ত কমিটির প্রধান এবং আন্তঃশিক্ষাবোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ।
যেসব বিকল্প পদ্ধতিতে এগুচ্ছে সরকার : ২০২১ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলেও কোনো অবস্থায় অটোপাস দেওয়া হবে না। কারণ এ দুটি সনদ ও নম্বরপত্রের ওপর ভিত্তি করে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, বিদেশে পড়াশোনার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়। তাই সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করে নম্বরপত্র দেওয়া যায় এমন পদ্ধতিই বাছাই করা হবে। সেজন্য আপাতত পূর্ববর্তী পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফল যোগ এবং সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপর অ্যাসাইনমেন্ট জমা নিয়ে মূল্যায়ন করে ফলাফল দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
তবে বছর শেষে যদি সময় কাভার করে, মৌলিক বিষয়গুলোর ওপর সংক্ষিপ্ত পরীক্ষা নিয়ে ফলাফল দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। এক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি দুইশ নম্বরকে এক করে একশ নম্বর, গণিত, বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শাখার ২০০ নস্বরের যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো এক করে ১০০ নম্বরসহ সর্বমোট ৫০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে সেটি নির্ভর করবে পরবর্তী মাসের করোনা পরিস্থিতির ওপর।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৩০ নম্বরের অ্যাসাইমেন্ট মূল নম্বরের সঙ্গে যোগ হয়। এখন যেহেতু মহামারী পরিস্থিতি তাই অ্যাসাইমেন্ট হতে পারে প্রধান বিকল্প পদ্ধতি। এছাড়াও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জেএসসি ২৫ শতাংশ ও এসএসসি পরীক্ষার ৫০ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ নম্বর অ্যাসাইনমেন্টের ওপর মূল্যায়ন করার প্রস্তাব রয়েছে। এসএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি পরীক্ষার ফলে ৫০ শতাংশ আর বাকি ৫০ শতাংশ নম্বর স্কুল পারফরম্যান্স বা অ্যাসাইনমেন্টের ওপর মূল্যায়ন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
কী হবে বার্ষিক পরীক্ষার : গত বছর করোনার কারণে স্কুলে অভ্যন্তরীণ বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। শেষের দিকে অ্যাসাইমন্ট শুরু হলেও তা মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের নম্বর দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরের শ্রেণিতে অটো প্রমোশন দেওয়া হয়। এবার সেটি হবে না বলে সাফ জানিয়েছে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
এবার অ্যাসাইমেন্ট নম্বরের ভিত্তিতে তাদের পরবর্তী শ্রেণিতে মূল্যায়ন করে উত্তীর্ণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৈদেশিক সমুদ্র বাণিজ্য ব্যাহত
পরবর্তী নিবন্ধবিদেশগামীদের ফি জমা দিয়েই যেতে হবে জেলা কর্মসংস্থান অফিসে