বৈদেশিক সমুদ্র বাণিজ্য ব্যাহত

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৪ জুলাই, ২০২১ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

পণ্য বোঝাই কন্টেনার জাহাজিকরণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে বৈদেশিক সমুদ্র বাণিজ্য। প্রতিটি বেসরকারি আইসিডিও পড়েছে সংকটে। খালি কন্টেনারের অভাব, জাহাজ আসা কমে যাওয়া এবং জাহাজে কন্টেনার স্লট না পাওয়াসহ নানা সংকটে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি বেসরকারি আইসিডির ফ্রেইট স্টেশনের ধারণক্ষমতার পুরোটা দখল হয়ে আছে। খালি কন্টেনার এবং জাহাজের স্লট না থাকায় পণ্য জাহাজিকরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার পণ্য জাহাজিকরণ না হওয়ায় ফ্রেইট স্টেশনের পুরোটাই দখল হয়ে আছে। এতে করে নতুন পণ্য খালাস ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, বেসরকারি আইসিডিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপোস এসোসিয়েশনের (বিকডা) প্রেসিডেন্ট নুরুল কাইউম খান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহাজ বরাবরে একটি জরুরি পত্র দিয়েছেন। পত্রে বিদ্যমান সংকট সুরাহা করতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে দেখা দিয়েছে কন্টেনারের সংকট। বিশেষ করে খালি কন্টেনার পাওয়া যাচ্ছে না। সমুদ্র বাণিজ্যে জাহাজ চলাচলের পরিমাণও কমে গেছে। ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে জট থাকায় সময়মতো কন্টেনার খালাস হচ্ছে না। সময়মতো কন্টেনার না পাওয়ায় ফিডার ভ্যাসেল চলাচলেও সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের সংখ্যাও কমে গেছে। ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাররা নানাভাবে চেষ্টা করেও কন্টেনারের স্লট পাচ্ছেন না। এতে করে পণ্য বোঝাই কন্টেনারগুলো বেসরকারি আইসিডির ফ্রেইট স্টেশনে আটকা পড়ে আছে। সচরাচর বেসরকারি আইসিডিগুলোর ওয়্যার হাউজের নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ২-৩ দিনের মধ্যে একটি কন্টেনার জাহাজের পথ ধরে। বর্তমানে ৭ থেকে ১৫ দিন সময় লাগছে। এই অবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চট্টগ্রামের বেসরকারি আইসিডিগুলোতে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান থেকে পণ্য খালাস সম্ভব হচ্ছে না। বেসরকারি আইসিডিতে পর্যাপ্ত খালি কন্টেনার না থাকায় রপ্তানি পণ্য স্টাফিং কার্যক্রমও মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপোস এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি রুহুল আমিন সিকদার বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সহায়ক শক্তি হিসেবে গড়ে ওঠা ১৯টি আইসিডি বর্তমানে শতভাগ রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং করছে। এর বাইরে অন্তত ২৫ শতাংশ আমদানি পণ্যও হ্যান্ডলিং করছে বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠান। গতকালের আইসিডিগুলোতে থাকা কন্টেনারের হিসেব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৪ হাজার ১৫০ টিইইউএস রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার আইসিডিগুলোতে আটকা পড়ে আছে। জাহাজের স্লট না পাওয়ায় এসব কন্টেনার জাহাজিকরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সচরাচর ১৯টি আইসিডিতে গড়ে ৭ হাজারের মতো রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার থাকে। যা এখন দ্বিগুণের বেশি। এতে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
অপরদিকে আমদানি পণ্য বোঝাই ৮ হাজার ৫শ টিইইউএস কন্টেনার রয়েছে আইসিডিগুলোতে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এই সংখ্যা বেশি নয়। গতকাল আইসিডিগুলোতে ৩৯ হাজার ১০৫ টিইইউএস খালি কন্টেনার ছিল। সব মিলে ১৯টি আইসিডিতে ৬২ হাজারের মতো কন্টেনার রয়েছে। অথচ আইসিডিগুলোর ধারণক্ষমতা ৭৭ হাজার ৭ টিইইউএস। ধারণক্ষমতার চেয়ে অন্তত ১২ হাজার টিইইউএস কন্টেনারের জায়গা খালি থাকলেও কন্টেনার ফ্রেইট স্টেশনগুলোতে জায়গা না থাকায় আইসিডিগুলো কার্যত ধারণক্ষমতার পুরোটাই হারিয়েছে। কন্টেনারে কার্গো স্টাফিংয়ের সুযোগ না থাকায় উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক বাণিজ্যে দেখা দেওয়া এই সংকটকে ভয়াবহ উল্লেখ করে রুহুল আমিন সিকদার বলেন, জাহাজে স্লট নেই, সিএফএসে জায়গা নেই, কন্টেনার জাহাজিকরণ হচ্ছে না। আবার খালি কন্টেনার এনে পণ্য স্টাফিং করার সুযোগও সীমিত। সবকিছু মিলে এমন একটি সংকট তৈরি হয়েছে, যা নিয়ন্ত্রণের শক্তি কারো হাতে নেই।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের প্রতিটি আইসিডিকে ঘিরে পণ্যবাহী গাড়ির জটলা তৈরি হয়েছে। ফ্রেইট স্টেশনে স্বাভাবিক গতিশীলতা না থাকায় এই জট বাড়ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভাসানচর থেকে সন্দ্বীপে পালিয়ে আসা ৭ রোহিঙ্গা আটক
পরবর্তী নিবন্ধপরীক্ষা বাদে বিকল্প ভাবনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়