বিদায় ট্র্যাজেডি কিং

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ৮ জুলাই, ২০২১ at ৪:২৭ পূর্বাহ্ণ

‘মুঘল-এ-আজম’ থেকে ‘দেবদাস’, ট্র্যাজেডি কিং হিসেবে খ্যাত দিলীপ কুমার গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় মুম্বাইয়ের পি ডি হিন্দুজা হাসপাতাল অ্যান্ড মেডিকেল রিসার্চ সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে…রাজেউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। গতকাল বিকেলেই মুম্বাইয়ের জুহু কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। প্রায় ছয় দশকের ক্যারিয়ারে তাঁর অভিনীত বেশ কয়েকটি ছবি পেয়েছে ‘কালজয়ী’-র তকমা।
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিল্প সমালোচক শৈবাল চৌধুরী বলেন, যে চার কিংবদন্তি, (রাজ কাপুর, অশোক কুমার, দিলীপ কুমার এবং দেবানন্দ) মুম্বাই চলচ্চিত্র জগতে দাপটের সঙ্গে বিরাজ করতেন, অভিনয় শৈলী এবং ব্যক্তিত্বের গুণে তাঁদের মধ্যে দিলীপ কুমার ছিলেন অনন্য। এক কথায় বলতে গেলে, তাঁর অভিনয় ছিল সবচেয়ে সাবলীল এবং বাস্তব সম্মত। ম্যানারিজম ছিল না। সব ধরনের চরিত্রে ছিলেন মানানসই। যদিও ট্র্যাজেডি কিং বলা হতো তাঁকে। দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের মধ্যে ছিলেন তিনি, যা আমাদের জন্য ছিল অত্যন্ত আনন্দের। কালের নিয়মে চলে যেতে হয়েছে তাঁকে। ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায় তিনি আমাদের অন্তরে বিরাজমান থাকবেন চিরদিন। ভারতীয় ছবির ইতিহাসে কেবল একজন দিলীপ কুমারই ছিলেন। একজনই থেকে যাবেন। স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়ের সঙ্গে তাঁর ‘পজ’ দিয়ে সংলাপ উচ্চারণের কায়দায় মুগ্ধ হয়েছিল প্রজন্মের পর প্রজন্ম।
১৯৪৪ সালে ‘জোয়ার ভাটা’ ছবির মাধ্যমে বড়পর্দায় আত্মপ্রকাশ দিলীপ কুমারের। কিন্তু একেবারেই চলেনি সেই ছবি। প্রথম হিট ছবি ‘জুগনু’ পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরও তিন বছর। তারপরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ‘মেলা’, ‘আন্দাজ’, ‘দিদার’ একের পর এক সুপারহিট ছবি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন তিনি। ১৯৫৫-এ ‘দেবদাস’ সৃষ্টি করল ইতিহাস। পাঁচের দশকে রাজ কাপুর এবং দেব আনন্দের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে পাল্লা দিতে পেরেছিলেন একমাত্র দিলীপ কুমার।
১৯৬০ সালে বক্স অফিস কাঁপিয়ে মুক্তি পেয়েছিল মুঘল-এ-আজম। এই ছবির সুবাদে চিরকালের জন্য ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে নিজের জায়গা পাকা করে নেন দিলীপ কুমার। ছবিতে রাজপুত্র সেলিমের চরিত্রে তাঁর তুখোড় অভিনয় আজন্মকাল মনে রাখবে দর্শক। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই ছবি বলিউডের ইতিহাসে লাভের অঙ্কের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। ১৯৬১ সালে নিজের প্রযোজনায় ‘গঙ্গা যমুনা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। নিজের প্রযোজনায় তৈরি সেটাই তাঁর প্রথম ও শেষ ছবি। ৬০-৭০ দশকেই একাধিক হলিউড ছবির প্রস্তাব পেলেও তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৬৭ সালে পর্দায় প্রথমবার দ্বৈত চরিত্রে হাজির হলেন দিলীপ কুমার। ছবির নাম ‘রাম অওর শ্যাম’।
১৯৮১ সালে রীতিমতো সাড়া জাগিয়ে ফিরে আসেন দিলীপ কুমার। সৌজন্যে, ‘ক্রান্তি’। অমিতাভ, বিনোদ, ঋষির মতো নয়া প্রজন্মের সুপারহিট তারকারা থাকলেও ‘মশাল, ‘শক্তি’, ‘বিধাতা’, ‘কর্মা’ প্রভৃতি ব্লকব্লাস্টার ছবিতে নিজের অনবদ্য পারফরমেন্সের মাধ্যমে তিনি বুঝে যান দর্শকদের কাছে আজও দিলীপ ম্যাজিক’ অটুট। ১৯৯১ সালে আরও এক বর্ষীয়ান অভিনেতা রাজ কুমারের সঙ্গে সুভাষ ঘাই পরিচালিত ‘সওদাগর’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এরপর ১৯৯৬ সালে ‘কলিং’ ছবির মাধ্যমে নিজের পরিচালক সত্তাকে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। কিন্তু শেষমেশ তাঁর সেই ইচ্ছেপূরণ হয়নি।
শেষবার বড়পর্দায় দিলীপ কুমার হাজির হয়েছিলেন ১৯৯৮ সালে। ছবির নাম ‘কিলা’। সেই শেষ। ষাটের বেশি ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। সেরা অভিনেতার পুরস্কার হিসেবে ফিল্ম ফেয়ার পেয়েছেন আটবার। মনোনীত হয়েছেন ১৯ বার। ফিল্ম ফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ১৯৯৩ সালে। ১৯৮০ সালে মুম্বাই শহরের সাম্মানিক শেরিফ পদটি অলংকৃত করেন তিনি। ভারত সরকার চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তাঁকে পদ্মভূষণ ও দাদা সাহেব ফালকে সম্মাননায় ভূষিত করে। ১৯৯৮ সালে তাঁকে পাকিস্তানের সরকার দ্বারা প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার নিশান-ই-ইমতিয়াজ প্রদান করা হয়।
দিলীপ কুমারের জন্ম ১৯২২ সালে অবিভক্ত ভারতের পেশোয়ারে। তাঁর পারিবারিক নাম ইউসুফ খান। তিনি পাঠানদের অন্যতম গোত্র আওয়ান পরিবারের সন্তান। তারা ছিলেন ১২ ভাইবোন। বাবার নাম লালা গুলাম সরোয়ার। বাবা ছিলেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। ফলের জমজমাট ব্যবসা ছিল তার। ত্রিশের দশকের শেষ দিকে ইউসুফ খানের পরিবার স্থায়ীভাবে মুম্বাইয়ে বসবাস শুরু করে। সেখানে তিনি একটি ক্যান্টিন চালাতেন এবং স্থানীয় বাজারে শুকনো ফল সরবরাহ করতেন। পরবর্তী জীবনে তিনি সিনেমায় জড়িয়ে যান।
বিভিন্ন মহলের শোক : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যাণার্জিসহ চলচ্চিত্র অঙ্গনের সকল তারকা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলিটন-মাহমুদউল্লাহর প্রতিরোধে দিন শেষে স্বস্তিতে বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধভবনের তলায় সারি সারি মটকা