বিদায় কিংবদন্তী কবরী

জন্ম বোয়ালখালীতে, বেড়ে ওঠা ফিরিঙ্গিবাজারে

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২১ at ৩:৩৩ পূর্বাহ্ণ

কিংবদন্তি অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী আর নেই। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ১৩ দিনের মাথায় তিনি মারা গেলেন। তার মৃত্যুর খবর শুনে শোকের ছায়া নেমেছে চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি অঙ্গনে। কবরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত রাতে দেওয়া এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এদেশের চলচ্চিত্রে কবরী এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতি ও সংস্কৃতি অঙ্গনে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
কবরী ছিলেন বাংলা সিনেমার অন্যতম সেরা অভিনেত্রী। সিনেমার ‘মিষ্টি মেয়ে’ হিসেবেই ছিল তার পরিচিতি। ক্যামেরার সামনে থেকে এক সময় চলে গিয়েছিলেন পরিচালকের আসনে। যুক্ত হয়েছিলেন রাজনীতিতেও। রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ রাত পৌনে ১টার দিকে বলেন, কবরী লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। কিছুক্ষণ আগে তাকে মৃত ঘোষণা হয়েছে। ৭১ বছর বয়সী এ অভিনেত্রী দীর্ঘদিন ধরে কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তার ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হয়। গত ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাস রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ আসার পর থেকে তিনি হাসপাতালে ছিলেন। ৮ এপ্রিল দুপুরে তাকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। ১৫ এপ্রিল নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন নন্দিত এই অভিনেত্রী।
১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পোপাদিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া মিনা পালের (কবরীর পূর্ব নাম) শৈশব ও কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গি বাজারে। ১৯৬৪ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নির্মাতা সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে মিনা পাল থেকে কবরী হয়ে উঠেন তিনি। দীর্ঘ তিন দশকের ক্যারিয়ারে ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘সুজন সখী’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘সারেং বউ’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’সহ তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। নায়ক রাজ্জাকের সঙ্গে অভিনয় করা তার ‘রংবাজ’ পায় বেশ জনপ্রিয়তা। ১৯৭৫ সালে নায়ক ফারুকের সঙ্গে ‘সুজন সখী’ ছাড়িয়ে যায় আগের সব জনপ্রিয়তাকে। ৫০ বছরের বেশি সময় চলচ্চিত্রে রাজ্জাক, ফারুক, সোহেল রানা, উজ্জ্বল, জাফর ইকবাল ও বুলবুল আহমেদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। ঢাকার চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় জুটি ছিলেন রাজ্জাক-কবরী। অভিনেত্রী কবরী একাত্তরে কলকাতায় গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন; সেখানে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন; সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন। পরে দেশে ফিরে চলচ্চিত্রে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি ২০০৬ সালে ‘আয়না’ নামে একটি চলচ্চিত্রের পরিচালনার মধ্য দিয়ে নির্মাণে অভিষেক ঘটে কবরীর। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণ হাত দিয়েছিলেন তিনি। নিয়মিত লেখালেখিও করেন কবরী। ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা স্মৃতিচারণমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন কবরী।
কবরীর আসল নাম ছিল মিনা পাল। বাবা শ্রীকৃষ্ণদাস পাল এবং মা লাবণ্য প্রভা পাল। কবরী বিয়ে করেন চিত্ত চৌধুরীকে। সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর ১৯৭৮ সালে তিনি বিয়ে করেন সফিউদ্দীন সরোয়ারকে। ২০০৮ সালে তাদেরও বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কবরী ছিলেন পাঁচ সন্তানের মা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজরুরি মুহূর্তে মিলছে না অতি জরুরি অক্সিজেন মাস্ক
পরবর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত