করোনা আক্রান্তদের কিংবা উপসর্গ থাকা রোগীদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলেই প্রয়োজন হয় অক্সিজেন সাপোর্ট। সিলিন্ডার বা সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম থেকে একটি মাস্কের সাহায্যে কৃত্রিম এ অক্সিজেন সরবরাহ দেয়া হয় রোগীকে। মাস্কটির সাহায্যে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হয় বলে এটি অক্সিজেন মাস্ক হিসেবে পরিচিত। সরবরাহের মাত্রা অনুযায়ী মাস্কটিরও ভিন্নতা রয়েছে। অর্থাৎ মিনিটে ৫-১০ লিটার অক্সিজেন সরবরাহের জন্য এক প্রকার, আবার ১০-১৫ লিটার সরবরাহের জন্য আরেক প্রকার মাস্ক ব্যবহার করতে হয়। মাস্কটি রোগীর নাক-মুখে লাগিয়ে কৃত্রিম এ অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হয়। যার কারণে শ্বাসকষ্টের রোগীর জন্য এ মাস্কটি অতি জরুরি। কিন্তু সরকারি ভাবে মাস্কটির সরবরাহ নেই চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। ফলে কোন রোগীকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে গেলেই বিপাকে পড়ছেন ডাক্তার-নার্সরা। রোগী ও তাদের স্বজনরা তো বেকায়দায় পড়ছেনই।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়- জরুরি মুহূর্তে কোন রোগীকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে গিয়ে দেখা গেল অক্সিজেন মাস্ক নেই। আবার অন্য রোগীর ব্যবহার করা মাস্ক দেয়াটাও সমীচিন নয়। এতে করে ভালোই বিপাকে পড়তে হচ্ছে দায়িত্বরত ডাক্তার-নার্সদের। শেষমেষ রোগীর স্বজনদের বলতে বাধ্য হন অক্সিজেন মাস্ক কিনে নিয়ে আসতে। বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে পরিবারের কোন সদস্য বা স্বজনরা মাস্কটি কিনে নিয়ে আসছেন। দাম অবশ্য ততটা বেশি না। পাঁচশ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায় এ মাস্ক। দাম কম থাকলেও কিন্তু সব জায়গায় এ মাস্ক পাওয়া যায়না। আবার এক্ষেত্রে সময়ও একটি বিবেচ্য বিষয়। মোটকথা কম দামের জরুরি এ মাস্ক নিয়ে ডাক্তার-নার্স, রোগী সকলেই বেকায়দায়।
করোনা আক্রান্ত বাবাকে নিয়ে বেশ কয়দিন জেনারেল হাসপাতালে ছিলেন ছেলে আশিষ। একটি হাই স্কুলে শিক্ষকতায় নিয়োজিত আছেন তিনি। আশিষ জানান- প্রথম কয়দিন বাবার অবস্থা ভালো ছিল। হঠাৎ একদিন শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ওই সময় দায়িত্বরত ডাক্তার দ্রুত অক্সিজেন মাস্ক নিয়ে আসতে বলেন। তখন সন্ধ্যা ছিল। দৌড়ে আন্দরকিল্লা গিয়ে দোকান থেকে মাস্ক নিয়ে আসি। এটা খুব ক্রিটিক্যাল মুহূর্ত ছিল। যদিও দাম বেশি না। এরপরও জরুরি মুহূর্তে দোকান যদি খোলা না থাকতো? তাই ওই সময়টাতে উদ্বিগ্ন ছিলাম। মাস্কটি হাসপাতাল থেকে সরবরাহ দেয়া হলে এ দুশ্চিন্তা থেকে রোগীর স্বজনরা রেহাই পেতেন বলেও মনে করেন তিনি।
দায়িত্বরত চিকিৎসকরাও বলছেন- জরুরি মুহূর্তে মাস্কটি কিনে আনতে বলা ছাড়া তাদেরও আসলে কিছু করার থাকেনা। যদিও মাস্কটি সবজায়গায় এভেইলেবল না। আবার রাতের বেলা হলে দোকান বন্ধ থাকারও একটা ঝুঁকি থাকে। সবমিলিয়ে একটি সংকট তো বটেই। তবে সরকারি ভাবে সরবরাহ থাকলে এ সংকট থাকতো না। নিজেদেরও বিব্রত অবস্থায় বা বিপাকে পড়তে হতোনা।
চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে-হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের সিংহ ভাগেরই অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন পড়ছে। কারণ, করোনায় আক্রান্ত বা উপসর্গ আছে এমন রোগীদের মধ্যে যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম, বিশেষ করে সে ধরণের রোগীরাই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ফলে ভর্তি থাকা রোগীদের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগীরই অক্সিজেন সাপোর্ট দরকার পড়ছে। আর অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হলেই প্রয়োজন পড়ছে এ মাস্কের।
অক্সিজেন মাস্কের সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে জেনারেল হাসপাতালের করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. আব্দুর রব মাসুম আজাদীকে বলেন- কয়েকদিন আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি স্যারসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে একটি জুম মিটিং ছিল। মিটিংয়ে বিষয়টি আমরা অবহিত করেছি। সিএমএসডি-তে (কেন্দ্রীয় ওষুধাগারে) এ মাস্কের স্টক আছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। সেখান থেকে আমাদের দেয়া হবে। কাজেই দ্রুত সময়ের মধ্যেই সেগুলো পেয়ে যাবো বলে আমরা আশা করছি। তখন আর এ সংকটটা থাকবেনা।