বিড়ম্বনা

সত্যব্রত বড়ুয়া | সোমবার , ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ

মাঝে মাঝে নিজের হাতের লেখা আমি নিজেই চিনতে পারি না। চাকরি জীবনে বাবাকে লিখতাম বাবার হাতের লেখার মতো করে। মাকে লিখতাম ছাপানো বইয়ের মতো ছাপানো অক্ষরে। ছোটো বোনকে লেখা চিঠিগুলো হতো মেয়েলি ঢংএ। আমি আবার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতের লেখার মতো করেও লিখতাম। এসব চিঠি লিখতাম আমার বন্ধুদের কাছে। আমার আসল হাতের লেখা কীরকম তা আমি নিজেই জানি না। পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সে সময় ‘সুন্দর হস্তাক্ষর ৫ নম্বর’ লেখা থাকতো। আমি বাংলা পরীক্ষার দিন এক একটি প্রশ্নের উত্তর এক এক ধরনের হাতের লেখায় লিখলাম। কয়েকদিন পর বাংলার স্যার বাংলা পরীক্ষার খাতাগুলো নিয়ে আসলেন। কে কত নম্বর পেয়েছে চিৎকার করে বলতে লাগলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন হাতের লেখার জন্য তোমাকে দিয়েছি মাইনাস ফাইভ। তুমি পেয়েছিলে ৩৫ নম্বর। মাইনাস ফাইভ হওয়াতে এখন পেলে ৩০। সে সময় পরীক্ষায় পাস নম্বর ছিলো ৩০। মানে আমি কোনোরকমে পাস করলাম। বাংলার স্যার হেসে বললেন তুমি ভালোই লিখেছিলে, এ লেখার জন্য তোমাকে সহজেই ৬০ নম্বর দেওয়া যেতো। এটা তোমার বিচিত্র ধরনের হাতের লেখার শাস্তি। একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে ‘মানুষ অভ্যাসের দাস’। বিভিন্ন ধরনের করে হাতের লেখা লিখবার অভ্যাস আমার এখনো যায়নি। অভ্যাসের প্রভু কখনো হতে পারলাম না।

তরুণ বয়সে খুব কবিতা লিখতাম। বন্ধুদের বলতাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বলা হয় বিশ্বকবি। কিন্তু আমি হবো মহাকবি। লিখবো মহাকাব্য। ছন্দ মিলাতে পারতাম না বলে লিখতাম গদ্য কবিতা। বন্ধুরা পড়ে কিছুই বুঝতে পারতো না। বুঝতে পারতাম না আমি নিজেও। ওদের বলতাম এসব আধুনিক কবিতা। তোমরা বুঝবেনা। আমি জানি তোমরা একদিন গর্ব করে বলবে, এই মহাকবি এক সময় আমাদের বন্ধু ছিলো। মাঝে মাঝে ছবিও আঁকতাম। কিসের ছবি আঁকতাম নিজেই বুঝতে পারতাম না। বন্ধুদের বলতাম এসবকে বলা হয় ‘এবসট্র্যাকট আর্ট’। রবি ঠাকুর এ ধরনের ছবি অনেক এঁেকছেন। এসব ছবি হয়েছে প্রশংসিতও। নিচু ক্লাসে পড়বার সময় একবার অনেক কষ্ট করে একটা কুকুরের ছবি এঁেকছিলাম। ড্রইং স্যার দেখে বললেন তোমার আঁকা শেয়ালের ছবিটা খুব সুন্দর হয়েছে। অনেক বছর আগের কথা, তখন ক্যামেরাম্যান রাস্তায় ছবি তুলতো। আধ ঘন্টার মধ্যেই ছবি তৈরি হতো। আমি ছবি তুলতে গিয়ে ক্যামেরাম্যানকে বললাম আমাকে দেখতে যেন সুন্দর রাজপুত্রের মতো হয়। ছবি দেখে মনে হলো এটা একটা সুন্দর বাঁদরের ছবি। ক্যামেরা ম্যানকে বললাম এ ছবি কখনো আমার হতে পাওে না। সে হেসে বললো সুন্দর রাজপুত্রদের চেহারা সুন্দর বাঁদরের মতোই তো হয়। ঘটনা ঘটছেই। এসব নিশ্চয়ই বিড়ম্বনা। কিন্তু এর মধ্যেও এক ধরনের আনন্দ রয়েছে। আনন্দেই আছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাশেদ রউফ – এর অন্ত্যমিল
পরবর্তী নিবন্ধচা বাগানের কড়চা