বিচিত্র মানুষ

সত্যব্রত বড়ুয়া | শুক্রবার , ৫ মার্চ, ২০২১ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

বাসে চট্টগ্রাম হতে কঙবাজার যাচ্ছি। আমার পাশে বসে আছেন এক মধ্যবয়সী ভদ্রলোক। আমরা একজন অপরজনের দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছিলাম। সময় কাটছিলোনা। ভদ্রলোকের সাথে আমিই প্রথম কথা বললাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের আলাপ জমে উঠলো। আমার হাতে আজাদী পত্রিকাটি ছিলো। কথার ফাঁকে ফাঁকে আজাদীর সাহিত্য পাতার ওপর চোখ বুলাচ্ছিলাম। তার চোখ গিয়েও পড়লো সাহিত্য পাতার ওপর। তিনি বললেন, আমি সাহিত্যিকদের একেবারেই দেখতে পারিনা। এরা অলস হয়ে বসে থেকে শুধু কবিতা, গল্প লেখে। নিজেদের মনে করে অসাধারণ। আমার কাছে এই সাহিত্যিকরা গাধা বৈ অন্য কিছুই নয়। দেখলাম আমরা কঙবাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। আমার কাঁধে ঝুলানো থলিটিতে আমার লেখা ‘গাধা কাহিনি’ বইটি ছিলো। সেটি থলি হতে বের করে তার হাতে দিয়ে বললাম, বইটি আপনাকে ‘প্রেসেন্ট’ করলাম। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি কী সাহিত্যিক? আমি বললাম, আমি একজন নির্ভেজাল গাধা। এই কথা বলে বাস হতে নেমে পড়লাম।
পথে বের হলেই বিচিত্র সব মানুষের দেখা মেলে। সেদিন ফুটপাত দিয়ে হাঁটবার সময় এক বুড়ির সাথে ধাক্কা খেলাম। আমি বললাম, সরি আপা। তিনি আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললেন, আমি আপা নই- ম্যাডাম। এখন আমি ধাক্কা খেয়ে পাক্কা হয়ে গেছি। চেহারার দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারি কাকে আপা ডাকতে হবে আর কাকে ম্যাডাম ডাকতে হবে। আসলে কারো চেহারার আদলটা এমনই যে তাদের আপা ডাকতে ইচ্ছে করে। আবার এই আদলের কারণেই কাকেও ম্যাডাম বলে ডাকি। কিছুদিন আগে কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মী আমার সাথে দেখা করতে এসে বললো, আমরা আপনার শোক সভা করবো। আমি বললাম, আমি তো এখনো বেঁেচ আছি – মরি নাই। তারা বললো, মরলে তো আপনি আপনার শোক সভা দেখতে পাবেন না। শুনতে পাবেন না আপনার গুণকীর্তন। আপনি মরলে আমরা করবো আনন্দ সভা। সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে একজন ছিলো আমার পূর্ব পরিচিত। সে আমাকে দাদু বলে ডাকে। ছেলেটি বললো, দাদু আপনার আনন্দ সভায় আমরা বাজি ফুটাবো, ফানুষ ওড়াবো। আমি বললাম, ভালোই হবে আমি খুব ‘এনজয়’ করতে পারবো। খবরের কাগজে প্রায়ই এখন ধর্ষণের খবর দেখি। ধর্ষকদের শাস্তি সর্বোচ্চ করা হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু আমি মনে করি নারীরাও কোনো কোনো সময় ধর্ষণ করে থাকে। এমন অনেক নারী রয়েছে যারা পুরুষদের প্ররোচিত করে তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌন মিলনে বাধ্য করে। এটাতো ধর্ষণই। জানিনা এক্ষেত্রে আইনে কি বিধান রয়েছে। সেদিন এক ভদ্রমহিলা আমাকে দুঃখ করে বললেন, দাদা বলতে খুব লজ্জা হয় যে আমার স্বামী মাঝে মাঝে আমাকে ধর্ষণ করে। আমার মতো অনেক নারীই রয়েছে যারা তাদের স্বামীদের দ্বারা ধর্ষিতা হচ্ছে। আমরা লজ্জায় তা প্রকাশ করিনা। কথাগুলো মিথ্যে নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহরিণখাইনে ভাঙা সড়ক দ্রুত সংস্কার দাবি
পরবর্তী নিবন্ধপরম্পরা