বিচারপতি হাবিবুর রহমান : বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব

| মঙ্গলবার , ১১ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:৫৯ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দেশ পরিচালনার পাশাপাশি মননশীল লেখক, অনুবাদক, বিশ্লেষক, সাহিত্যিক, কবি ও রবীন্দ্র গবেষক হিসেবেও বিশিষ্ট ছিলেন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের জন্ম ১৯২৮ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার দয়ারামপুর গ্রামে। দেশবিভাগের পর সপরিবারে তাঁর বাবা বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী জহিরউদ্দিন বিশ্বাস বাংলাদেশে চলে আসেন এবং রাজশাহীতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে ১৯৪৯ সালে বি.এ. সম্মান ও ১৯৫১ সালে এম.এ. পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক ইতিহাসে ১৯৫৮ সালে বি.এ. সম্মান ও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। হাবিবুর রহমানের কর্মজীবনের শুরু ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে যোগ দিয়ে। এসময় তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেছেন কিছুকাল। ১৯৬৪ সালে আইন পেশা শুরু করেন। আইন পেশায় হাবিবুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ নানা পদে অধিষ্ঠিত থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রধান বিচারপতি এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে দেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবেও তাঁর অবদান বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য। অনুবাদ সহ সত্তরটিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন হাবিবুর রহমান। একজন গবেষক ও লেখক বিচারপতি হাবিবুর রহমান সাহিত্য ও অন্যান্য বহু ক্ষেত্রে অনেক অবদান রেখেছেন। তার প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে অন্যতম হল: ‘ল’ অফ রিকুইজিশন’ (১৯৬৬), ‘রবীন্দ্র প্রবন্ধে সঞ্জনা ও পার্থক্য বিচার’ (১৯৬৮), ‘যথা-শব্দ’ (১৯৭৪), ‘মাতৃভাষার স্বপক্ষে রবীন্দ্রনাথ’ (১৯৮৩), ‘কোরআন সূত্র’ (১৯৮৪), ‘বচন ও প্রবচন’ (১৯৮৫), ‘গঙ্গাঋধি থেকে বাংলাদেশ’ (১৯৮৫), ‘রবীন্দ্র রচনার রবীন্দ্র ব্যাখ্যা’ (১৯৮৬), ‘রবীন্দ্র কাব্যে আর্ট, সঙ্গীত ও সাহিত্য’ (১৯৮৬), ‘অন রাইট্‌স আন্ড রিমেডিস্‌’ ‘আমরা কি যাব না তাদের কাছে যারা শুধু বাংলায়’ কথা বলে (১৯৯৬) ‘ভাষার আপন পর’ (২০১২) অনুবাদ করেছেন পবিত্র কোরআন শরিফের। জাতির সংকটকালে সবসময় তিনি সত্য ও ন্যায়ের পথে ছিলেন, ছিলেন সাধারণের পাশে। অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনায় চালিত ছিলেন আজীবন। ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধখেজুর ও নারিকেল গাছ রোপণ করতে হবে