বিএনপি স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির রক্ষাকবচ ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক : তথ্যমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৬ মার্চ, ২০২২ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি এখনো আস্ফালন করে। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি এখনো সক্রিয়, তারা দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে খুশি নয়। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির রক্ষাকবচ এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি। এই অপশক্তির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। তারা নানা সময় দেশের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, করোনার সময় বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, এখন তারা দেশের মানুষকে নিয়ে মশকরা শুরু করেছে। তিনি বলেন, করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সমগ্র পৃথিবীতে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। আমাদের দেশেও আমদানি নির্ভর কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু সেটি অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট যাতে না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী এক কোটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড দিয়েছেন। যাতে কম মূল্যে তারা টিসিবির পণ্য কিনতে পারেন। এতে জনগণের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। কিন্তু জনগণের মধ্যে স্বস্তি আসাতে বিএনপি ও কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী নামধারীর অস্বস্তি বেড়ে গেছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরস্থ এলজিইডি অডিটোরিয়ামে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা
পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আতাউর রহমান।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ২৫ মার্চ কালোরাত্রিতে গণহত্যা শুরু হয়েছিল, এটার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি, আমাদের সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি যৌক্তিক। কিন্তু যখন একটি দলের নেত্রী যিনি আবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি যখন বলেন আসলে ত্রিশ লক্ষ মানুষ মারা যায় নাই, তখন এই গণহত্যার স্বীকৃতি পেতে তো সেই প্রশ্ন আন্তর্জাতিক মহল করে। বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার এই ধরণের বক্তব্য এবং যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার জন্য বিএনপির প্রচেষ্টা গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা। না হয় আমরা গণহত্যার স্বীকৃতি সহজে পেতাম।
তিনি বলেন, কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী আছে যারা রাত বারোটার পর সক্রিয় হয়। এমনিতে ফকিরকে দুই টাকা খয়রাত দেয় না। দেখলাম যে, ভং ধরে প্রেস ক্লাবের সামনে থালা নিয়ে বসছে। তাদের কাছে জনগণ তো দূরে থাক, তাদের আত্মীয় স্বজনরাও যেতে পারে না। সবার কথা বলছি না। তাদের কোনো কাজ নেই, ওদের কাজ হচ্ছে, আপনি কি কাজ করছেন, আমি কি কাজ করছি, সরকার কি কাজ করছে এ সবের ভুল ধরা। আমি ওদের নাম দিয়েছি ভুল ধরা পার্টি। রাত বারোটার পরে ভুল ধরা পার্টি সক্রিয় হয়। জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পৃথিবীর সামনে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র আজকে। মানুষের মাথাপিছু আয় এখন দুই হাজার ৬’শ ডলারের কাছাকাছি, যেটি ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে পৃথিবীর মাত্র ২০টি দেশে পজিটিভ জিডিপি গ্রোথ হয়েছিল, এরমধ্যে বাংলাদেশ একটি। আশপাশের সবদেশে নেগেটিভ জিডিপি গ্রোথ ছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে। আমাদের উপরে মাত্র দুটি দেশ ছিল সাউথ সুদান ও গায়েনা। তাদের অর্থনীতি আমাদের চেয়ে অনেক ছোট অর্থনীতির দেশ, সেখানে জনসংখ্যাও অনেক কম। সেই বিবেচনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল পৃথিবীতে এক নম্বরে আমরা বলতে পারি।
তিনি বলেন, এতে দেশের মানুষ খুশি, সমস্ত পৃথিবী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। জাতিসংঘের মহাসচিব, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, প্রধান অর্থনীতিবিদ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্টসহ সমস্ত পৃথিবী প্রশংসা করে। ভারতের রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী এসে প্রশংসা করে গেছেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা প্রশংসা করেন, কিন্তু একটি পক্ষ প্রশংসা করতে পারে না। সেটি হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত এবং আর কিছু কিছু নামধারী বুদ্ধিজীবী, তারা এই উন্নয়ন অগ্রগতির প্রশংসা করতে পারেন না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সমগ্র পৃথিবীতে দ্রব্যের মূল্য বেড়েছে। ইউরোপের প্রধান খাদ্যপণ্য রুটির মূল্য ৭৯ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে অন্যান্য ভোগ্য পণ্যের দাম গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে আমেরিকা, ভারত, পাকিস্তানেও বেড়েছে। শ্রীলঙ্কায় তেলের জন্য লাইন ধরতে গিয়ে লাইনের মধ্যে পিষ্ট হয়ে কয়েকজন মারা গেছেন।
তিনি বলেন, করোনার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্বের কারণে আমরা সফলভাবে মোকাবেলা করেছি। কিন্তু এ সময় বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা আর কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী নামধারী যারা রাত বারোটার পরে সক্রিয় হয় তারা এটার বিরুদ্ধে কত না অপপ্রচার চালিয়েছেন। যখন করোনার টিকা আমরা দেওয়া শুরু করলাম তখন নামধারী বুদ্ধিজীবীদের এই টিকার বিরুদ্ধে কত বিরূপ প্রচারণা। এই টিকা ভারতীয় টিকা, এটি নিলে শরীরের ক্ষতি হবে, নানা প্রচারণা। আবার নিজেরাই লজ্জা ভেঙে প্রকাশ্যে টিকা নিলেন, কেউবা আবার গোপনে নিলেন। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমরা যখন টিকা দেয়া শুরু করলাম, আমেরিকা-ইউরোপ থেকে এসে পর্যন্ত টিকা নিয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, হাজার বছরের ঘুমন্ত বাঙালিকে জাগ্রত করে পলে পলে আন্দোলিত করে যেই নেতা স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের পথ বেয়ে আমাদের দেশপ্রেম উজ্জীবিত করেছিলেন, স্লোগান শিখিয়েছিলেন, তিনি সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা পোরামাটির নীতি অনুসরণ করে যেই বাংলাদেশকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল। এদেশকে ধ্বংসস্তুপ থেকে পুনর্গঠিত করে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে যদি হত্যা না করা হতো তাহলে সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বঙ্গবন্ধু অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন সেই হারে যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন হতে থাকতো, তাহলে স্বাধীনতার ১৫/২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ হতো একটি উন্নত রাষ্ট্র।
এতে অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন সহ সভাপতি অধ্যাপক মো মঈনুদ্দিন, মো. আবুল কালাম আজাদ, এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, মহিউদ্দিন রাশেদ, আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, স্বজন কুমার তালুকদার, আবুল কাশেম চিশতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন শাহ, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মো. ফরিদ, সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন বাবলু, নজরুল ইসলাম তালুকদার, ইঞ্জিনিয়ার মো হারুন, শাহজাহান সিকদার, মো. আলী শাহ, আলাউদ্দিন সাবেরী, জাফর আহমেদ, মো. নুর খান, নাজিম উদ্দিন তালুকদার, ডা. মো সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মেজবাহ উল আলম লাভলু, আবু তালেব, আ স ম ইয়াছিন মাহমুদ, ইফতেখার হোসেন বাবুল, বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, সরোয়ার হাসান জামিল, মো. সেলিম উদ্দিন, আখতার হোসেন খান, ডা. নুর উদ্দিন জাহেদ, সাহেদ সরোয়ার শামীম, বখতেয়ার সাঈদ ইরান, আখতার উদ্দিন মাহমুদ পারভেজ, ফোরকান উদ্দিন আহমেদ, দিলোয়ারা ইউসুফ, শফিকুল ইসলাম, এড. বাসন্তী প্রভা পালিত, সাদাত আনোয়ার সাদী, হারুন অর রশীদ, রূপক দেব অপু, তানভীর হোসেন তপু, রেজাউল করিম প্রমুখ।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ গৃহীত অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২৬ মার্চ ভোরে দোস্ত বিল্ডিংস্থ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, দলীয় কার্যালয় চত্বরে নির্মিত মঞ্চে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, সকাল ৮ টায় অস্থায়ী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও দেশাত্মবোধক গান প্রচার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছয় বছরের ভোগান্তির অবসান
পরবর্তী নিবন্ধসারা দেশে ১ মিনিট ব্ল্যাকআউট