বিএনপি তাদের নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেয়া ঠেকাতে পারবে না : তথ্যমন্ত্রী

| শনিবার , ৭ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি তাদের নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেয়া ঠেকাতে পারবে না। নির্বাচনে তারা অংশ নেবেই। তিনি বলেন, বিএনপির দলীয় নির্দেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগকারী উকিল আবদুস সাত্তার বিএনপি থেকে বের হয়ে সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপনির্বাচনে অংশ নেয়ায় এটিই প্রমাণিত হচ্ছে যে, বিএনপির সম্মুখসারির অনেক নেতাই নির্বাচনমুখী, তারা নির্বাচন করতে চায়। খবর বাসসের।

মন্ত্রী আরও বলেন, এটি আরো ইঙ্গিত দেয় যে, বিএনপি যদি ভবিষ্যতে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়ও, তাদের নেতারা ঠিকই নির্বাচনে অংশ নেবেন। নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে তাদের নেতাদের ঠেকানো যাবে না। নির্বাচনে তারা অংশ নেবেনই। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিএনপির সিদ্ধান্ত আসে সমুদ্রের ওপার থেকে। বাংলাদেশের বাস্তবতা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের ‘সেই’ নেতার কোনো ধারণা নেই। তিনি ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে দেশের বাইরে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সংসদ থেকে বিএনপির ছয় সংসদ সদস্যের পদত্যাগ দলটির প্রচণ্ড অদূরদর্শী একটি সিদ্ধান্ত ছিল।

বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তা প্রতিহত করার অপচেষ্টা সম্পূর্ণ ভুল ছিল উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তারা অংশ নেবে, কি নেবে না- এমন দোলাচাল না রেখে, আংশিক নয়, পূর্ণশক্তি নিয়ে নির্বাচন করা প্রয়োজন ছিল। এবারো তাদের ছয় এমপির পদত্যাগ, তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বলে সম্মুখ সারির নেতাদের ধারণা। এই পদত্যাগ বিএনপির জন্য শুভ হয়নি। আমিও ব্যক্তিগতভাবে তাই মনে করি।
গাইবান্ধা উপনির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, গাইবান্ধা উপনির্বাচন অত্যন্ত সুন্দর ও সফল হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনও দাবি করছে। আমরাও দেখলাম অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। প্রচণ্ড শীত আর একবার ভোট দিয়ে কাক্ষিত ফল না পাওয়ায় ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ায় প্রমাণিত হয়েছে এর আগে নির্বাচন যদি স্থগিত করা না হতো, তখনো নৌকার প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করত।

আওয়ামী লীগের একটি অংশ, রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়- বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এমন মন্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, আসলে সন্ত্রাসের রাজত্ব বিএনপিই কায়েম করেছে। তারা সন্ত্রাসের ওপর ভর করেই রাজনীতি করে। এতদিন তারা বলত যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায়। এখন বলছে আবার একটি অংশ! তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করেছে, দেশ পরিচালনা করছে। জনগণ যতদিন চাইবে, ততদিনই আমরা দেশ পরিচালনা করব। জনগণ না চাইলে একদিনও দেশ পরিচালনা করব না। বিএনপিই সবসময় পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়।

এর আগে সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে দুটি তিলক পরিয়ে দিয়েছেন। একটি হচ্ছে পদ্মাসেতু চালু হওয়া, আরেকটি স্বপ্নের মেট্টোরেলের যাত্রা শুরু। এতে দেশের প্রতিটি মানুষ উদ্বেলিত। বিএনপি আর তার মিত্রদের নেতিবাচক ও গুজব ছড়ানোর রাজনীতি না থাকলে দেশ আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতো উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বৈশ্বিক সংকট, নানা ষড়যন্ত্র ও সমস্ত নেতিবাচক দিক মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য অভিনন্দন। মানুষকে বিভ্রান্ত করে, বিদেশিদের পদলেহনের রাজনীতি করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি যদি বিএনপি না করত, তাহলে দেশ আরো বহুদূর এগিয়ে যেতো।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের চার বছর পূর্তি হচ্ছে। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকভাবে ১৪ বছর পূর্ণ হচ্ছে। গত এক বছর করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিশ্বব্যাপী নানা সংকট ছিল। এরপরও দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী যেভাবে করোনা মোকাবেলা করেছেন, বিশ্বসম্প্রদায় তার প্রশংসা করেছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, নিক্কি ইনস্টিটিউট ও ব্লুমবার্গের যৌথ জরিপ বলছে, বাংলাদেশ করোনা মহামারি মোকাবিলার ক্ষেত্রে বিশ্বে পঞ্চম, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। তিনি বলেন, বিশ্বসংকট ও মূল্যস্ফীতির মধ্যেও বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে সহনীয় পর্যায়ে রেখেছেন। আমাদের মূল্যস্ফীতি ইউরোপ ও অনেক উন্নত দেশের তুলনায় কম হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে আমাদের রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে, রপ্তানি আয় বেড়েছে। গত কয়েক মাসেও রপ্তানি আয় বেড়েছে।

বিএনপিকে নেতিবাচক রাজনীতির জন্য অভিযুক্ত করে ড. হাছান বলেন, পদ্মা সেতুতে মানুষের নরবলি দিতে হবে, এরকম গুজবও ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। বিশ্বের ১৩২টি দেশ যখন করোনা টিকা শুরু করতে পারেনি, আমাদের দেশে তখন শেখ হাসিনা করোনার টিকা দেয়া শুরু করেছিলেন। তখনো বিএনপি ও তাদের মিত্রদের পক্ষ থেকে নানা বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছিল, পরে তারাই আবার কেউ প্রকাশ্যে, কেউ গোপনে টিকা নিয়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউৎপাদনে ফিরেছে কর্ণফুলী পেপার মিল
পরবর্তী নিবন্ধদেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় আইসিইউ চালু হচ্ছে আজ