দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় আইসিইউ চালু হচ্ছে আজ

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৭ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

জনগণের টাকায় পরিচালিত জনগণের হাসপাতাল খ্যাত চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় আইসিইউ ইউনিট চালু করা হচ্ছে। আজ শনিবার ৩০ বেডের বিশ্বমানের এই আইসিইউর কার্যক্রম শুরু হবে। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ আনুষ্ঠানিকভাবে এই আইসিইউ ইউনিট উদ্বোধন করবেন। মানুষের অনুদানের বিশ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় এই আইসিইউতে মাত্র ৮ হাজার টাকায় অন্তত ৫০ হাজার টাকার চিকিৎসা জুটবে। ৩০ বেডের আইসিইউ ইউনিটের পাশাপাশি করোনা বা কোন জরুরি সময়ে আরো অন্তত ৩০ বেডের আইসিইউ সাপোর্ট দেয়ার সক্ষমতাও চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল তৈরি করে রাখছে।

চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল খুবই সুপরিচিত। ১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর মাত্র ১০ বেডের আউটডোর সুবিধা নিয়ে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ইতোমধ্যে ইনডোর বেড সংখ্যা উন্নীত হয়েছে ৮৫০টিতে। আগামী মাস কয়েকের মধ্যে চট্টগ্রামের ক্যান্সার হাসপাতাল চালু হলে আরো ১৫০ বেড যুক্ত হয়ে মা ও শিশু হাসপাতালের বেড সংখ্যা উন্নীত হবে এক হাজারে। মা ও শিশু হাসপাতালে আগামী দিন কয়েকের মধ্যে চালু করা হচ্ছে নিউরো সার্জারি বিভাগ। চট্টগ্রামে বেসরকারিখাতে আর কোন হাসপাতালে নিউরো সার্জারি বিভাগ নেই। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরো সার্জারি বিভাগে রোগীদের অপারেশন করা হয়। এই কার্যক্রম শুরু হলে মা ও শিশু হাসপাতালে আরো ১৫ বেড বৃদ্ধি পাবে।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল করোনাকালে চিকিৎসা সেবার যে অনন্য নজির স্থাপন করেছে তা অতুলনীয়। একটি আইসিইউ বেডের জন্য নগরজুড়ে যখন হাহাকার চলছিল, মাকে বেড থেকে নামিয়ে যেখানে সন্তানকে বেড দিতে হচ্ছিল সেই ভয়াল দুর্দিনে মা ও শিশু হাসপাতাল ১৮ বেডের অস্থায়ী আইসিইউ ইউনিট চালু করে করোনা চিকিৎসায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে আইসিইউ বেড ছিল মাত্র ৯টি। হাসপাতালে ভর্তি ৮৫০ রোগী এবং আউটডোরে প্রতিদিন চিকিৎসা নেয়া অন্তত ২ হাজার ৫শ রোগীর বিভিন্ন সময় আইসিইউ বেডের প্রয়োজন তীব্র হয়ে উঠে। এতে করে প্রায় প্রতিদিনই আইসিইউ বেড নিয়ে হাসপাতালে হাহাকার চলে। চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালের কথা বাদ দিলে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডে রেখে রোগীর চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চার্জ করা হয় আইসিইউতে। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে মাত্র ৮ হাজার টাকায় আইসিইউ বেডের চিকিৎসা দেয়া হয়।

এছাড়া বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে যেখানে রোগীকে আইসিইউতে নেয়ার সাথে সাথে বিল হিসেব করা হয় সেখানে মা ও শিশু হাসপাতালে মেশিন চালু না করা পর্যন্ত বিল হিসেব করা হয় না। এতে করে সাধারণ রোগীদের নিকট মা ও শিশু হাসপাতালের একটি আইসিইউ বেড অনেক সময় সোনার হরিণের মতো দামি হয়ে উঠে।
মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউ বেডের সংকট ঘুচাতে নীরব দানবীর মরহুম সৈয়দ মোহাম্মদ নুরউদ্দিন মা ও শিশু হাসপাতালের জন্য বিভিন্ন সময়ে অন্তত বিশ কোটি টাকা অনুদান দেন। উনি হাসপাতালের আইসিইউ সমৃদ্ধ করার জন্য বেশ বড় অংকের অনুদান দিয়েছিলেন। সৈয়দ মোহাম্মদ নুরউদ্দিনের অনুদানের পাশাপাশি অন্যান্য দানবীরদের দেয়া অর্থে মা ও শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৩০ বেডের বিশাল এক আইসিইউ ইউনিট চালু করে। সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ডের হাসপাতালগুলোতে ব্যবহৃত বিশ্বমানের ইকুইপমেন্ট সমৃদ্ধ এই আইসিইউ আজ শনিবার সকালে উদ্বোধন করা হবে।

মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. মাহাদী হাসান সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউ গড়ে তোলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালের আইসিইউতে একজন অসুস্থ মানুষ যাতে সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা পান তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিডনি ডায়ালাইসিস থেকে শুরু করে সব ধরণের ব্যবস্থাই বেডে রাখা হয়েছে। একজন রোগীকে টানাটানি করতে হবে না। যে কোন ধরণের জটিল রোগীকে আইসিইউ বেডে রেখেই আনুষাঙ্গিক সব ধরনের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে।

মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. অলক নন্দী বলেন, চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সেবার জগতে মা ও শিশু হাসপাতালের ৩০ বেডের আইসিইউ ইউনিট একটি বিশাল সংযোজন। শুধু চট্টগ্রামে নয়, দেশেও বেসরকারি খাতে এতো বড় আইসিইউ ইউনিট আর কারো নেই। এটি চট্টগ্রামের স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি যে কোন দুর্যোগ দুর্বিপাকেও বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। আইসিইউ বেডের অভাবে যে হাহাকার আমরা বিগত করোনাকালে দেখেছিলাম চট্টগ্রামের মানুষকে আর ওই পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের জেনারেল সেক্রেটারি রেজাউল করিম আজাদ জানিয়েছেন, বিশ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয়ে ত্রিশ বেডের আইসিইউ ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে। এটি বিশ্বমানের একটি আইসিইউ ইউনিট। এই ইউনিটে ইনফেকশন রোধে বিশেষ ফ্লোর গড়ে তোলা হয়েছে। আইসিইউতে কোন রোগীকে আইসোলেশন করতে হলে তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সর্বনিম্ন খরচে একজন রোগী এখানে আইসিইউ সাপোর্ট পাবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, মা ও শিশু হাসপাতাল কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, এটি জনগণের টাকায় জনগণের হাসপাতাল। টাকার অভাবে কেউ যাতে চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় তা এই হাসপাতাল নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। অত্যন্ত স্বল্পখরচে জনগণের দোরগোড়ায় বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতেই আইসিইউ কিংবা নিউরো সার্জারির মতো ওয়ার্ডগুলো চালু করা হচ্ছে বলেও রেজাউল করিম আজাদ মন্তব্য করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি তাদের নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেয়া ঠেকাতে পারবে না : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধপ্রকৃত মুসলমানরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে না : ভূমিমন্ত্রী