বিএনপির সঙ্গে আছে জনগণ লাঠির দরকার নেই : খসরু

চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রস্তুতি সভা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১ অক্টোবর, ২০২২ at ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, লাঠিসোঁটা তাদেরই প্রয়োজন যাদের সঙ্গে জনগণ নেই। বিএনপির দরকার হবে না। লক্ষ লক্ষ মানুষ যখন বিএনপির সঙ্গে রাস্তায় নামবে তখন যারা বাধা দেয় তারা পালাবে। আগামী ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচি সফল করার লক্ষে আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। গতকাল বিকেলে নগরের নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাছির উদ্দিন। সাংগঠনকি সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, জয়নাল আবেদীন ভিপি, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, ড. সুকোমল বড়ুয়া, এস এম ফজলুল হক, ড. মামুন আহমেদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন।
প্রসঙ্গত, তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ গতকাল নগরে একটি অনুষ্ঠান শেষে বিএনপির গণসমাবেশ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘কাগজে দেখতে পেলাম বিএনপি বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা দেখেছি ঢাকা শহরে তারা সমাবেশ করতে গিয়ে লাঠি ও রড নিয়ে তারা সমাবেশে হাজির হয়েছে। আবার লাঠি ও রডের মাথায় জাতীয় পতাকাও বেঁধেছে। জাতীয় পতাকা বেঁেধ দিয়ে তারা জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছে।’ এছাড়া আগের দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে লাঠি নিয়ে এলে ‘খবর’ আছে বলে বিএনপি’কে সতর্ক করে।
মূলত এসব বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে গতকালকের প্রস্তুতি সভায় আমীর খসরু বলেন, চট্টগ্রামের গণসমাবেশ হবে সেখানে আমাদের লাঠির দরকার হবে না। লক্ষ লক্ষ মানুষ যখন নামবে, এরা পালাবে। কারণ, যারা রাস্তায় আক্রমণ করে তাদের মত ভীতু কেউ নাই। তিনি বলেন, আমাদের সমাবেশ হবে আনন্দগন এবং উৎসবমুখর পরিবেশে। যেভাবে আমরা পলোগ্রাউন্ডে সমাবেশ করেছিলাম। সেখানে ২০ লক্ষ মানুষ জমায়েত হয়েছিল। স্কুল শিক্ষার্থীরা এসেছিল। অফিস থেকেও অনেকে যোগ দেন। আমাদের সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের লাঠিসোঁটার প্রয়োজন নাই। লাঠিসোঁটা তাদেরই প্রয়োজন যাদের সঙ্গে জনগণ নেই এবং যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিএনপির দরকার নাই।
এসময় খসরু ‘দেশের নাগরিক হিসেবে সংবিধান আত্মরক্ষার অধিকার দিয়েছে’ মন্তব্য করে করে বলেন, ইদানিং কিছু কিছু আওয়ামী লীগ নেতা বলছেন বিএনপি লাঠি নিয়ে বের হয়েছে। তাদের প্রতি আমি বলছি, আপনি বন্দুক দিয়ে গুলি করে মানুষ মেরে ফেলবেন, আপনি দা নিয়ে, অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে রেস্টুরেন্টে আক্রমণ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ক্ষতবিক্ষত করে দিবেন, আপনি চাইনিজ রাইফেল দিয়ে মানুষ মারবেন, বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতাদের বাড়ি গিয়ে আক্রমণ করবেন, এ অবস্থায় আত্মরক্ষায় আমি একটা লাঠিও রাখতে পারব না? এটা কোন ধরনের আইন।
বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন বাধা দেয় বলে সভায় বিএনপির এক নেতা বক্তব্য দেন। এরপ্রেক্ষিতে আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশে ইদানিং আমরা যে আন্দোলনগুলো করেছি তার মধ্যে যেখানে লোকসংখ্যা কম ছিল সেখানে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যেমন ঢাকার বনানীতে লোক কম ছিল এবং পল্লবীতে সেভাবে প্রস্তুতি ছিল না বলে আওয়ামী লীগ বাধা দিয়েছে। এর বাইরে ঢাকা শহরে আর কোথাও বাধা দিতে পারেনি। যেদিন বনানীতে মেরেছে তার পরদিন গুলশানে সভা হয়েছে। সেখানে তো বাধা দিতে পারেনি। সুতরাং বাধার বিষয়টি মাথা থেকে ফেলে দিতে হবে।
তিনি বলেন, আপনি যদি দুই’শ লোক নিয়ে আসেন তাহলে বাধা দিবে। দুই হাজার লোক নিয়ে আসেন বাধা দিবে না। যে বাধা দিবে তার জীবনের ভয় নাই? এ সময় দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে খসরু বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। লক্ষ লক্ষ মানুষ যখন পানির স্রোতের মত সমাবেশের দিকে ধাবিত হবে তখন কারো কোনো বাধা দেয়ার সাহস হবে না। চট্টগ্রামের সভা সরকারের পতন মোটামুটি নিশ্চিত করবে।
মীর মো. নাছির উদ্দিন বলেন, আমাদের তর্জন গর্জনের দরকার হবে না। আমাদের গর্জন হবে কাজের মধ্যে দিয়ে। বেশি কথা বলে আন্দোলন এগিয়ে যাবে না। আমাদের আন্দোলন পরিকল্পিত। পরিকল্পিত আন্দোলনেই সরকারের পতন হবে।
মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, চট্টগ্রামের সমাবেশ হবে সবচেয়ে বড় গণ সমাবেশ। এই সমাবেশ থেকেই শেখ হাসিনার পতন ঘণ্টা বেজে ওঠবে। আমাদের কথা হবে কম, কাজ হবে বেশি। চট্টগ্রামের নেতারা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে তাহলে চট্টগ্রাম থেকেই সরকারের পতন হবে।
গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তীব্র গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, চট্টগ্রাম হচ্ছে বিএনপির দুর্ভেদ্য ঘাটি। গণসমাবেশ থেকেই চট্টগ্রামকে জেগে ওঠতে হবে। চট্টগ্রাম জেগে ওঠলে সরকারের পতন হতে বাধ্য। মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ ইতিমধ্যে মাঠে নেমে গেছে।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক ম্যা মা চিং, মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশিদ, সহ বাণিজ্য সম্পাদক এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান, সহ গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদক বেলাল আহমেদ, সহ ধর্ম সম্পাদক অ্যাড. দীপেন দেওয়ান, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়া, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, লক্ষীপুরের সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দীন সাবু, ফেনী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার, রাঙামাটি জেলার সভাপতি দীপেন তালুকদার দীপু, বিএনপির নির্বাহী সদস্য আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ, সাচিং প্রু জেরী, সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, মশিয়ুর রহমান বিপ্লব, এবিএম জাকারিয়া, ফোরকান ই আলম, নোয়াখালী জেলার সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মামুনুর রশীদ মামুন, লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সি. যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. হাসিবুর রহমান হাসিব, বিএনপি নেতা এনামুল হক এনাম, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, কর্নেল আজিম উল্লাহ বাহার, বান্দরবান জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন তুষার, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ, কেন্দ্রীয় জাসাসের সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন, মহিলা দলের মনোয়ারা বেগম মনি, জেলী চৌধুরী ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহেফাজত আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী হাসপাতালে
পরবর্তী নিবন্ধছেলেকে নিয়ে প্রকাশ্যে শাকিব-বুবলী