বিএনপির শরিকরা এল ১২ দলীয় জোট নিয়ে

| শুক্রবার , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ১২ শরিক নতুন জোট গড়ার ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই ‘১২ দলীয় জোট’ গড়ার ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার। তিনি বলেন, একটা কথা আমি জোরের সাথে বলতে পারি, এদেশের সর্ববৃহৎ বিরোধী দল বিএনপির সাথে আমাদের যে ঐক্য, যে সমঝোতা, যে হৃদয়ের বন্ধন, তা অটুট থাকবে যেমন আগে ছিল, এখনো তেমনি আছে। আমরা আরো বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য প্রকৃত প্রস্তাবে দেশের সব কয়টি রাজনৈতিক দল, যারা এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরোধী, তাদেরকে এক কাফেলায় শামিল করার জন্য একটু ভিন্ন পথ এবং কৌশল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। ২০ দলীয় জোটের ভাঙন নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই মন্তব্য করে মোস্তফা জামাল বলেন, আমরা সকলে মিলে এ টু জেড ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের পথে যুগপৎভাবে আন্দোলনে এগিয়ে যাব।

নতুন এই জোটে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ছাড়াও রয়েছে কল্যাণ পার্টি, লেবার পার্টি, জাতীয় দল, বাংলাদেশ এলডিপি, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল- জাগপা (তাসমিয়া প্রধান), এনডিপি, এলডিপি (সেলিম), মুসলিম লীগ, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক পার্টি এবং সাম্যবাদী দল।

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিএনপি তাদের চার দলীয় জোটকে সম্প্রসারিত করে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল গড়ে ২০ দলীয় জোট। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে নতুন এক মোর্চা গড়ে, যেখানে ২০ দলের শরিকদের পাশাপাশি এক সময় আওয়ামী লীগ করে আসা কামাল হোসেনের গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের জাসদ, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য ছিল।

নবগঠিত ১২ দলীয় জোটের ঘোষণাপত্র পাঠ করে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, আমরা দেশের ১২টি রাজনৈতিক দল গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের চলমান সরকার বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে সকল কর্মসূচি সক্রিয়ভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা ১২ দল নামেই পরিচিত থাকব। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি লাভই আমাদের সকলের অভিন্ন লক্ষ্য মনে করি।

তিনি বলেন, বিনা ভোটে অনির্বাচিত অবৈধ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ১২ দল বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় থাকবে। আমরা ঘোষণা করছি, চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখব। বিএনপির ঘোষিত ১০ দফা এবং ২৭ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবকে জাতীয় মুক্তির সনদ বিবেচনা করে এর সাথে একাত্মতার ঘোষণা করা হয় ১২ দলের সংবাদ সম্মেলনে।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ৯ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপাসনের কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল। সেখানে বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা ‘২০ দলীয় জোট’ নামটি আর ব্যবহার না করতে বলেন। তারা বলেন যে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আমরা একসাথে চলতে পারি। এরূপ অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যের পর ২০ দলীয় জোটের অস্তিত্ব আর থাকে না। বস্তুত সেই ঘোষণারও ১০ দিন আগে বিএনপি মহাসচিব মহোদয় বলেছিলেন যে, ২০ দলীয় জোট আর নাই। যদিও আনুষ্ঠানিক প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ২০ দলীয় জোটের জন্ম হয়েছিল, কিন্তু ২০ দলীয় জোটের বিলুপ্তটা আনুষ্ঠানিকভাবে হয়নি, অনানুষ্ঠানিভাবে হয়েছে।

ইবরাহিম বলেন, মৌলিকভাবে বলতে গেলে যে ২০ দলীয় জোট ছিল, তার মধ্যে ১২টি দল আমরা। আর তিনটি দল বাইরে থাকে। সেই তিনটি দলের নেতৃবর্গের প্রতি আমাদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা সকলের জন্য দরজা খোলা রেখেছি, সকলের জন্য দরজা খোলা, ২০ দলীয় জোটে থাকুন বা ২০ দলীয় জোটে না থাকুন। তবে আমার বিনীত আহ্বান দেশবাসীর কাছে, এরকম ভাগাভাগিটা আসলে আমাদের জন্য অত্যন্ত নেতিবাচক বিশেষণ হিসেবে বিবেচিত হবে। আমরা ভাগাভাগিতে নাই, রেষারেষিতে নাই, হিংসা-বিদ্বেষে নাই। আমরা একসঙ্গে চলেছি। বিএনপি আমাদের প্রধান মুরুব্বী। তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা, আমাদের ধন্যবাদ। তাদের কাছ থেকে আমাদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, পরিকপক্কতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের ঘোষিত ১০ দফা এবং ২৭ দফার সমর্থনে আমাদের এই প্রচেষ্ট।

জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ছাড়াও লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনডিপির আবু তাহের, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, জমিয়তে উলামায়ের ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করিম, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিটারগেজের দেড়শ কোচের প্রথম চালান আসছে চলতি সপ্তাহে
পরবর্তী নিবন্ধ১২ দল করেও এগুতে পারবে না বিএনপি : তথ্যমন্ত্রী