বিআরটিএতে এক বছরেও হচ্ছে না লাইসেন্সের ধরন পরিবর্তন

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৫ আগস্ট, ২০২২ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

নিজের থাকা লাইসেন্সটির ধরন পরিবর্তন করে হালকা থেকে ভারি-তে রূপান্তর করতে ২০২১ সালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), চট্টগ্রাম অফিসে আবেদন করেন আবু বকর সিদ্দিকী। কিন্তু আবেদনের এক বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত লাইসেন্স হাতে পাননি তিনি। দীর্ঘ সময়েও লাইসেন্স না পাওয়ায় দুর্ভোগ-ভোগান্তির কথা তুলে ধরে আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, সব প্রক্রিয়া শেষ হলেও কেবল একটি ধাপ (বায়োমেট্রিক্স) বাকি থাকায় আমি লাইসেন্স পাচ্ছি না। তারা আমার বায়োমেট্রিক্স নিচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে আমি ঢাকাতেও যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। লাইসেন্স না পাওয়ায় আমি বিভিন্ন সমস্যায় আছি। শেষমেশ বিষয়টি নিয়ে দুদকেও (দুর্নীতি দমন কমিশন) প্রতিকার চেয়েছেন সীতাকুণ্ডের কুমিরার বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিকী। গত বুধবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শাহ আলম বীর উত্তম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত দুদকের গণশুণানিতে উপস্থিত হয়েও নিজের দুর্ভোগ-ভোগান্তির কথা তুলে ধরে এর প্রতিকার চান তিনি। এ অভিযোগের জবাব দিতে শুনানিতে উপস্থিত হন বিআরটিএ, চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালক ও সহকারী পরিচালক। তবে এ অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) রায়হানা আক্তার ঊর্থী। বায়োমেট্রিক্স নিতে না পারার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, বায়োমেট্রিক্স সংক্রান্ত সফটওয়্যারটি এখনো কার্যকর হয়নি। ২০২১ সালে নতুন একটি প্রতিষ্ঠান (ভেন্ডর) এ কাজের দায়িত্ব পায় উল্লেখ করে বিআরটিএ, চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার ঊর্থী বলেন, তারা এখনো বায়োমেট্রিঙের সফটওয়্যারটির কাজ শেষ করতে পারেনি। যার কারণে আমরা আবেদনকারীদের বায়োমেট্রিঙ নিতে পারছি না। আর বায়োমেট্রিঙ নিতে না পারায় এ ধরণের লাইসেন্স প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।

কখন থেকে এ ধরণের লাইসেন্স প্রদান বন্ধ রয়েছে শুনানিতে জানতে চান দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান। জবাবে ২০২১ সালে নতুন ভেন্ডর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এ ধরণের লাইসেন্স প্রদান বন্ধ রয়েছে বলে জানান বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার ঊর্থী।

এ বিষয়ে ঢাকায় যোগাযোগ করা হয়েছে কী না, যোগাযোগ করা হলে প্রমাণস্বরূপ চিঠি দেখাতে বলেন দুদক কমিশনার। জবাবে ঢাকায় যোগাযোগ করা হয়েছে বলে দাবি করেন বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক। যদিও শুনানিতে আসার সময় এ সংক্রান্ত চিঠি আনা হয়নি বলে জানান বিআরটিএ’র কর্মকর্তা। পরবর্তীতে এ সংক্রান্ত চিঠি দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে জমা দিতে নির্দেশনা দেন দুদক কমিশনার। পাশাপাশি পুনরায় ঢাকায় কথা বলে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, এই যে-দীর্ঘ সময় লোকজন লাইসেন্স পাচ্ছেন না, এটাতে তো ভোগান্তি হচ্ছেই। সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে অভিযোগকারীর লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থা নিতে বিআরটিএ, চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালক ও সহকারী পরিচালককে নির্দেশ দেন তিনি।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, হালকা লাইসেন্সধারীরা তিন বছর অভিজ্ঞতার পর ধরণ পরিবর্তন করে ভারি লাইসেন্সে রূপান্তরে আবেদন করতে পারেন। সমপ্রতি এ ধরণের একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে।

উল্লেখ্য, সরকারি দপ্তরের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ শুনতে বুধবার গণশুনানির আয়োজন করে দুদক। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শাহ বীর উত্তম মিলনায়তনে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি উপলক্ষে মহানগরের ৮০টির বেশি সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন মিলনায়তনে। এ সব দপ্তরের বিপরীতে প্রায় দুইশ অভিযোগ আসে দুদকের কাছে। তবে প্রাপ্ত অভিযোগগুলোর মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে ২২টি সরকারি দপ্তরের ৪৭টি অভিযোগ শুনানির জন্য নির্বাচন করা হয়। এর মধ্যে বিআরটিএ’র বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগের শুনানি হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাজ্জাদের অন্যতম সহযোগী মুন্না ও হিরু গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধচবির শেখ হাসিনা হলের অফিসে তালা, ৭ দাবি