সাজ্জাদের অন্যতম সহযোগী মুন্না ও হিরু গ্রেপ্তার

তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৫ আগস্ট, ২০২২ at ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ

শীর্ষ সন্ত্রাসী ও শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের অন্যতম সহযোগী বেলাল উদ্দিন মুন্না ও মোঃ নাজিম উদ্দিন হিরু গ্রেপ্তার হয়েছে সিএমপির ডিবি (উত্তর) সদস্যদের হাতে। মহানগর গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের একটি টিম গোপন খবরের ভিত্তিতে গত ৩ আগস্ট বায়েজিদ থানাধীন ভক্তপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মুন্না (৪৩) ও নাজিম উদ্দিন হিরুকে (৩৪) গ্রেপ্তার করে। মুন্না ও হিরুর বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

কে এই মুন্না? নগরীতে শিবিরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের আঁতুরঘর বলা হয়ে থাকে বায়েজিদ বোস্তামি থানার চালিতাতলী এলাকাকে। এখান থেকে ‘ক্যাডার রাজনীতি’ শুরু করা শিবিরের এ সব নেতাকর্মীর কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে, কেউ প্রতিপক্ষের গুলিতে। কেউ কারাগারে রয়েছে, আবার কেউ বিদেশে পলাতক। তাদেরই একজন মোস্ট ওয়ান্টেড শীর্ষ সন্ত্রাসী শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ খান। বহদ্দারহাটের চাঞ্চল্যকর এইট মার্ডার মামলার প্রধান আসামি। বিগত ১৬ বছর বিদেশে আত্মগোপন থেকেও চট্টগ্রামের আন্ডারওয়ার্ল্ডে আধিপত্য বিস্তার করেই চলেছে এই সাজ্জাদ। তার নামে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণাধীন ভবন, গার্মেন্টস, শিল্প কারখানা থেকে জমি ক্রয়-বিক্রয় সবখানে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলে বলে অভিযোগ রয়েছে।

১৯৯৯ সালের ২ জুন বায়েজিদ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত আলীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ ও তার সহযোগীরা। এই মামলার এজাহারনামীয় অন্যতম আসামি বেলাল উদ্দিন মুন্না। এ ঘটনার পর ভুয়া পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশে পালিয়ে যায় মুন্না। দীর্ঘদিন আত্মগোপন থেকে দেশে ফিরে আসে। গত ৫-৬ বছর যাবত সাজ্জাদ বাহিনীর নেতৃত্বের ভার যায় মুন্নার হাতে। তার হেফাজতে রয়েছে সাজ্জাদের বিশাল অস্ত্রভান্ডারও। নগরীর বায়েজিদ, চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ থানা এলাকায় বাড়ি নির্মাণ থেকে শুরু করে জমি ক্রয় বিক্রয়, শিল্প কারখানা, এমনকি সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে গেলেও সাজ্জাদের হয়ে চাঁদার জন্য হানা দেয় মুন্না। চাঁদা না দিলে চালানো হয় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। জনমনে ভীতি বাঁচিয়ে রাখতে খুন করতেও পিছপা হয়না গ্রুপটি। দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার মুন্নার চাঁদাবাজি থেকে রেহাই পায়নি তার জন্মদাতা পিতা-মাতাও! মুন্নার বিরুদ্ধে পঞ্চাশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে পিতা আব্দুস সাত্তার বায়েজিদ থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন, যার নম্বর- ১৮(৫)১৬। এ মামলায় আটকের পর কিছুদিন কারাগারেও ছিল সে। ২০১৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আদালতের মাধ্যমে মুন্নাকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন তার বাবা। শিবির ক্যাডার মুন্নার হেফাজতে বিদেশি পিস্তল রিভলবার ছাড়াও একে-৪৭, একে-২২ এর মতো ভারি মারণাস্ত্র থাকার তথ্য রয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এ সব অস্ত্র প্রদর্শন কিংবা অবাধ ব্যবহার হচ্ছে। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে সাজ্জাদ বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের অনেক সন্ত্রাসী অস্ত্রসহ আটক হয়। কিন্তু তাদের ত্রাস ও অস্ত্রের ঝনঝনানি থামেনি আজো।

চট্টগ্রামের অপরাধ জগতে মুন্না ইতিমধ্যে অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। নগরীর বায়েজিদ, পাঁচলাইশ ও চান্দগাঁও থানা এলাকায় বেপরোয়া চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে মুন্নার নেতৃত্বে। প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ব্যবসায়ী থেকে বিত্তশালী প্রবাসীদের টার্গেট করেও চাঁদাবাজি চলছে গ্রুপটির। এমনকি চাঁদা আদায়ে অপহরণ করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। মুন্নার অধীনে অন্তত কয়েকশো সন্ত্রাসী সক্রিয়। উঠতি কিশোর যুবকদের টার্গেট করে অর্থের লোভে দলে টানে মুন্না। পরে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে। বায়েজিদ থানাধীন আপন নিবাস আবাসিক এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবন মালিকের কাছে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল বেলাল উদ্দিন মুন্না। দফায় দফায় হত্যার হুমকিও দেয়। ২২ মার্চ রাতে নির্মাণাধীন এই ভবন মালিকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তাণ্ডব চালায় মুন্না ও তার সশস্ত্র বাহিনী। নয়ারহাট এলাকায় মামুন এন্টারপ্রাইজ নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শাটার ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে সন্ত্রাসীরা। এ সময় পুরো অফিসের জিনিসপত্র ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়। এলোপাতাড়ি ফাঁকা গুলি ছুড়ে পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। হামলার বেশকিছু দৃশ্য আশপাশের সিসি টিভি ফুটেজেও উঠে আসে। এতে দেখা যায়, হামলায় অংশ নেয় ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী। তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়। ছিল ছুরি চাপাতিসহ পেট্রোল বোমাও। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে বায়েজিদ বোস্তামি থানায় মুন্না ও তার আট সহযোগীর নামে চাঁদাবাজি আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

একের পর এক অপরাধ করেও দীর্ঘদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল মুন্না। ২০১৮ সালে পুলিশ বাদী হয়ে বায়েজিদ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছিল শিবির ক্যাডার মুন্নার বিরুদ্ধে। ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাতে নয়ারহাট ছায়াপথ কুটির নামে বিল্ডিংয়ে সামনে থেকে তানভীরুল হক নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুন্না। চাঁদা না পেয়ে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা ছিল। তবে ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যায় তানভীরুল। এ ঘটনায় মুন্নার বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় অপহরণ মামলা দায়ের হয়। একের পর এক চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হতে থাকে মুন্নার বিরুদ্ধে। হত্যা, চাঁদাবাজি, বোমা বিস্ফোরণসহ অন্তত এক ডজন মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

গত ১ আগস্ট যানবাহন কেন্দ্রিক চাঁদাবাজির ঘটনায় মুন্নার এক সহযোগীকে গণধোলাই দেয় স্থানীয় জনতা। তাকে ছাড়িয়ে আনতে ঘটনাস্থলে মুন্না ও তার ভাই জসিম উদ্দিন প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে দেয়। মুন্নার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা হল- বায়েজিদ খন্দকার পাড়ার মোহাম্মদ আজিজ, নয়ারহাট ভক্তপুর এলাকার হারুন উর রশীদ, হাজীরপুল এলাকার মোহাম্মদ মাসুদ, চান্দগাঁও চাঁনমিয়া এলাকার ইমরান হোসেন, অদুর পাড়ার মোহাম্মদ হায়দার অন্যতম। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলাও রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশাহ আমানতে ১ কেজি স্বর্ণ ও ২০টি আইফোনসহ যাত্রী আটক
পরবর্তী নিবন্ধবিআরটিএতে এক বছরেও হচ্ছে না লাইসেন্সের ধরন পরিবর্তন