দেশব্যাপী বায়ুমান পরীক্ষা করে বায়ু দূষণের দিক দিয়ে নবম অবস্থানে রয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। গাজীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র-ক্যাপস। গাজীপুরের পর ঢাকা দ্বিতীয় এবং নারায়ণগঞ্জ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বলে উঠে এসেছে তাদের গবেষণায়। তিন জেলার পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, টাঙ্গাইল, কঙবাজার, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কিশোরগঞ্জ। অন্যদিকে দূষণের মাত্রা সবচেয়ে কম ছিল মাদারীপুরে, প্রতি ঘনমিটারে ৪৯ দশমিক শূন্য ৮ মাইক্রোগ্রাম পিএম ২.৫ পাওয়া গেছে সেখানে। মাদারীপুরের পরের অবস্থানে পটুয়াখালী ও মেহেরপুর জেলা। খবর বিডিনিউজের।
ক্যাপসের পরিচালক ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশের তিন হাজার ১৬৩টি স্থানের বাতাসে ভারী বস্তুকণার পরিমাণ পরীক্ষা ও পর্যালোচনা করা হয়েছে তাদের এ গবেষণায়। বাতাসের মান নির্ভর করে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম-১০) এবং অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণের (পিএম ২.৫) ওপর, যা পরিমাপ করা হয় প্রতি ঘনমিটারে মাইক্রোগ্রাম (পার্টস পার মিলিয়ন-পিপিএম) এককে।
আহমদ কামরুজ্জামান জানান, সমীক্ষায় দেখা যায়, ৬৪ জেলায় বায়ুতে গড়ে অতিক্ষুদ্র কণা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১০২ দশমিক ৪১ মাইক্রোগ্রাম, যা দৈনিক গ্রহণযোগ্য মান ৬৫ মাইক্রোগ্রামের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বেশি। গাজীপুরে এর পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ২৬৩ দশমিক ৫১ মাইক্রোগ্রাম। পাশের জেলা ঢাকায় ২৫২ দশমিক ৯৩ এবং নারায়ণগঞ্জে ২২২ দশমিক ৪৫ মাইক্রোগ্রাম পিএম ২.৫ পাওয়া যায়। এই তিন শহরের বাতাসে দূষণের মাত্রা গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি পাওয়া গেছে জানিয়ে অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও সংস্কারকাজ, মেগা প্রকল্প, আশেপাশের ইটভাটা, ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্প কারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো এই তিন শহরে দূষণের অন্যতম কারণ।
মাদারীপুর, পটুয়াখালী, মেহেরপুর এসব এলাকায় দূষণ কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান বলেন, এসব এলাকায় প্রচুর পরিমাণ গাছপালা এবং প্রাকৃতিক জলাধার লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া এসব এলাকার রাস্তায় সংস্কার কাজ চলতে দেখা যায়নি খুব একটা।
বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার পরিমাণ (পিপিএম) যদি শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকে, তাহলে ওই বাতাসকে বায়ু মানের সূচকে ভালো বলা যায়। এই মাত্রা ৫১-১০০ হলে বাতাসকে মধ্যম মানের এবং ১০১-১৫০ হলে বিপদসীমায় আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। আর পিপিএম ১৫১-২০০ হলে বাতাসকে অস্বাস্থ্যকর, ২০১-৩০০ হলে খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১-৫০০ হলে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। এই হিসেবে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে মাত্র ১০টি জেলায় বায়ুর মান ভালো অবস্থায় পেয়েছেন ক্যাপসের গবেষকরা। এই জেলাগুলো হল- কুড়িগ্রাম, নাটোর, জয়পুরহাট, রাজবাড়ী, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর, পটুয়াখালী ও মাদারীপুর। কামরুজ্জামান বলেন, ভৌগোলিকভাবে এই জেলাগুলোর অবস্থান নদীর পাশে, এটা দূষণের বিস্তৃতি কম হওয়ার একটি কারণ হতে পারে। রাজশাহী শহরে ভালো মানের বায়ু পরিলক্ষিত হওয়ার পেছনে রাজশাহী শহরের কর্তৃপক্ষের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে।
ক্যাপসের সমীক্ষায় আট বিভাগীয় শহরের মধ্যে বায়ু দূষণের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা শহর, সেখানে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতি মিলেছে প্রতি ঘনমিটারে ২৫২ দশমিক ৯৩ মাইক্রোগ্রাম। সবচেয়ে কম দূষণ রাজশাহী বিভাগে, সেখানে গড়ে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৫৬ দশমিক ৪১ মাইক্রোগ্রাম। উপকূলীয় এলাকার মধ্যে ১৯টি জেলার গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ১০৬ দশকি ৮২ মাইক্রোগ্রাম ছিল, যা গ্রহণযোগ্য মানের চেয়ে প্রায় ১ দশমিক ৬৪ গুণ বেশি।
ক্যাপসের পরিচালক বলেন, উপকূলীয় এলাকার মধ্যে শুধু পটুয়াখালীর বায়ুমান ভালো পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত ছিল, কিন্তু ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কঙবাজার, নোয়াখালী এলাকা অতিমাত্রার দূষণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। অপরদিকে খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, শরীয়তপুর, ঝালকাঠী, ভোলা, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, বরগুনা ও যশোরের গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ মধ্যম পর্যায়ের দূষণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত।
সংবাদ সম্মেলনে বায়ু দূষণ রোধে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী কিছু সুপারিশ করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপস।