বারাদারের সঙ্গে সেদিন কী ঘটেছিল

| রবিবার , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

যিনি আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের ‘মধ্যমপন্থি’ নেতা হবেন বলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা আশা করেছিল, কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে নাটকীয় গোলাগুলির ঘটনার পর তাকে ‘কোনঠাসা’ করা হয়েছে বলে খবর এসেছে। মন্ত্রিপরিষদ গঠন নিয়ে আলোচনা সভার মধ্যেকার ওই ঘটনা প্রত্যক্ষভাবে জানেন, কিন্তু নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে চান না এমন লোকজনের বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্কভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
সেপ্টেম্বরের শুরুতে প্রাসাদে মন্ত্রিপরিষদ নিয়ে আলোচনার সময় যুক্তরাষ্ট্রের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের উপর শারিরীকভাবে হামলা করেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববাসীর কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করতে তালেবান নন এমন নেতা ও সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সেদিনের আলোচনায় জোর দিচ্ছিলেন বারাদার। আলোচনার এক পর্যায়ে খলিলুর রহমান হাক্কানি তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান এবং তালেবান নেতাকে ঘুষি মারতে শুরু করেন। তাদের দেহরক্ষীরাও এই সংঘর্ষে যোগ দিয়ে পরস্পরের প্রতি গুলি ছুড়তে শুরু করলে কয়েকজন মারা যান এবং বেশ কয়েকজন আহ্‌ত হন। বারাদার আহ্‌ত না হলেও রাজধানী ছাড়েন। তালেবানের ঘাঁটি কান্দাহারে সর্বোচ্চ নেতা ও আধ্যাত্মিক গুরু হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার সঙ্গে দেখা করতে যান।
২০১৬ সালের দিকে হাক্কানি নেটওয়ার্ক তালেবানের সঙ্গে একীভূত হয়। ৭ সেপ্টেম্বর তালেবান মন্ত্রিসভার যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে তাদের বাইরের কেউ নেই। যারা আছেন, তাদেরও ৯০ শতাংশই পশতুন নৃগোষ্ঠীর। সেখানে হাক্কানি পরিবারের সদস্যরা চারটি মন্ত্রণালয় পেয়েছেন, যেখানে হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা এফবিআইয়ের তালিকার শীর্ষ সন্ত্রাসী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বারাদারের নাম দুই উপপ্রধানমন্ত্রীর তালিকায়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনার নেতা তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার সরকারপ্রধান হবেন বলে ভাবা হলেও ‘পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকায়’ তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়।
সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানের মন্ত্রিসভা গঠনের আলোচনার সময় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান কাবুলে অবস্থান করছিলেন। তিনি বারাদারের চেয়ে হাক্কানিদের প্রাধান্য দেন। শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে মুক্তির আগে ৮ বছর পাকিস্তানে কারাবন্দি ছিলেন বারাদার। আর স্বল্প পরিচিত মোল্লা মোহাম্মদ হাসানকে বারাদারের বদলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ হলো- ইসলামাবাদের সঙ্গে তার খাতির ভালো এবং হাক্কানি অংশের জন্য তিনি হুমকি নন।
পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখার কাছে এবিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ জানানো হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো জবাব মেলেনি। গত এক সপ্তাহে তালেবানের নেতারা সংঘর্ষের খবর অস্বীকার করেছেন। বৃহস্পতিবার বারাদার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে হাজির হয়ে নিজের হতাহত হওয়ার খবর অস্বীকার করেছেন। তবে ১২ সেপ্টেম্বর কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর সময় এবং এ সপ্তাহে মন্ত্রিপরিষদের প্রথম বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
কাতারি প্রতিনিধি দলের অভ্যর্থনার সময় হাক্কানিরাসহ অন্য মন্ত্রিপরিষদের অন্য সদস্যরা থাকলেও তার অনুপস্থিতির বিষয় নিয়ে কানাঘুষা উড়িয়ে দিয়েছেন বারাদার। এই উপসাগরীয় দেশটি বারাদারকে জায়গা দিয়েছিল এবং আমেরিকার দীর্ঘতম যুদ্ধ অবসানে তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল পম্পেওর সঙ্গে আলোচনায় সহায়তা করেছিল। তবে বারাদার টেলিভিশনে বলেন, কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের বিষয়টি তিনি জানতেন না। ওই সময় তিনিও সফরে থাকায় তা সংক্ষিপ্ত করে কাবুলে ফিরতে পারেননি। ফোনে জানতে চাইলে তালেবানের মুখপাত্র বেলাল কারিমি বলেন, বারাদারকে ‘কোনঠাসা করা হয়নি এবং আমরা আশা করছি তিনি শিগগির ফিরবেন’।
তালেবান আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার করলেও তাদের মধ্যে বিভাজন নারীর অধিকারকে শ্রদ্ধা জানানোসহ অধিকতর মধ্যমপন্থি নীতিমালা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে আসা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়া আফগানিস্তানের রিজার্ভ অবমুক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিচ্ছে চীন ও পাকিস্তান। হাক্কানি ও তালেবানদের মধ্যে সম্পর্ক সবসময় অস্বস্তিকর। তবু গ্রুপটির অন্যতম নেতা আনাস হাক্কানি টুইটারে এসে কোনো সংঘর্ষের খবর অস্বীকার করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহিমছড়িতে সংরক্ষিত বনভূমি বরাদ্দে উদ্বেগ
পরবর্তী নিবন্ধপাবনায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ২ কিশোর বন্ধু গ্রেপ্তার