বাবুলের ব্যাপারে কৌশলী ধীরে এগোচ্ছে পিবিআই

গায়ত্রীর তথ্য চেয়ে ইউএনএইচসিআরকে চিঠি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৬ মে, ২০২১ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ‘ধীরে চলো নীতি’ অবলম্বন করছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কারণ হিসেবে পিবিআই জানিয়েছে, প্রধান আসামি বাবুল আক্তার জিজ্ঞাসাবাদের সময় কিছু কৌশলের আশ্রয় নিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তারই অংশ হিসেবে স্ত্রী হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করলেও আদালতে অস্বীকার করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। ইতোমধ্যে বাবুল আক্তার গুরুতর অসুস্থ বলে তার কারাগারের বাইরে চিকিৎসার আবেদনের বিষয়টিও তার ‘নাটুকেপনা’র অংশ বলে মন্তব্য করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পিবিআই এখন তাই তাকে আটকাতে আশপাশের যাবতীয় তথ্য প্রমাণ আরো পাকাপোক্ত করার কাজে নেমেছে। অন্যান্য আসামি ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং সন্দেহভাজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের আদালতে উপস্থাপনের চেষ্টাও তারই অংশ বিশেষ।
এ ব্যাপারে গতকাল মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর সন্তোষ কুমার চাকমা আজাদীকে বলেন, অনেকে প্রশ্ন করছেন তদন্ত ঝিমিয়ে পড়েছে কিনা। না, আমরা আরেকটু কৌশলী হয়েছি। একটু ধীরে এগুচ্ছি, যাতে ব্যর্থ না হই। তিনি বলেন, আমরা বাবুল আক্তারের ব্যবসায়িক পার্টনার সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। মুছার সাথে খুনের পর টাকার লেনদেনের বিষয়টি আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য সাইফুলের ম্যানেজার মোখলেসুর রহমান ইরাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া বাবুল আক্তারের সাথে সম্পর্ক থাকা গায়ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইতোমধ্যে আবেদন জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। এর আগে সেটি নগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করেছিল।
পিবিআইয়ের দেয়া প্রতিবেদন ও নতুন করা মামলায় উল্লেখ আছে, এ ঘটনায় অর্থ দিয়েছিলেন বাবুল আক্তার। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা আজাদীকে বলেন, স্ত্রী হত্যার তিন দিন পর বাবুল আক্তার তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল হককে বলেন, তাঁর লাভের অংশ থেকে তাঁকে যেন তিন লাখ টাকা দেয়া হয়। সাইফুল বিকাশের মাধ্যমে ওই টাকা গাজী আল মামুনকে পাঠান। গাজী আল মামুন ওই টাকা মুছার কাছে পাঠান। গাজী আল মামুন ছিল খুনের মূল পরিকল্পনাকারী মুছার আত্মীয়। তিনি বলেন, সাইফুল বিকাশ করতে যাকে পাঠিয়েছিল তার ম্যানেজার মোকলেসুর রহমান ইরাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সে জানিয়েছে, ঘটনার পাঁচদিন পর এ টাকার লেনদেন হয়েছে বাবুল আক্তারের নির্দেশেই। ইরাদ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, হত্যাকান্ডের পাঁচদিন পর ইরাদই মুছার দেয়া বিকাশ নম্বরে তিন লাখ টাকা দিয়েছেন। গতকাল মহানগর হাকিম মো. শফী উদ্দিনের আদালতে জবানবন্দি দেন মোকলেসুর রহমান ইরাদ।
মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের মামলায় এনজিও কর্মী গায়ত্রীর নাম উঠে এসেছে। বলা হয়, তার সাথে পরকীয়ার বলী হয়েছেন মিতু। পুলিশের তদন্ত এবং মিতুর বাবার কাছ থেকে জানা গেছে সেই এনজিও কর্মীর পরিচয়। তার পুরো নাম গায়ত্রী অমর সিং। ব্যক্তিগত জীবনে গায়ত্রী বিবাহিত এবং তার একটি ছেলে রয়েছে। বর্তমানে সুইজারল্যান্ড বা পূর্ব আফ্রিকার কোনো দেশে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের প্রটেকশন অফিসার হিসেবে কর্মরত গায়ত্রী। এবার সেই গায়ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নিয়েছে পিবিআই। গায়ত্রীর সম্পর্কে জানতে ইউএনএইচসিআরকে চিঠি দিয়েছে পিবিআই। গত ২৩ মে ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস বরাবরে এ চিঠি পাঠানোর কথা জানান তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা।
তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা আজাদীকে বলেন, মামলার স্বার্থে ঘটনার অন্যতম প্রধান প্রত্যক্ষদর্শী বাবুল-মিতুর সন্তান মাহিরের সাথে কথা বলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে চীনা টিকার প্রয়োগ শুরু