বাধ্যবাধকতা ৬০ দিনের চলে বছরের পর বছর

পারিবারিক আদালতে ঝুলছে ৭ হাজার মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৬ জুলাই, ২০২১ at ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ

হাটহাজারীর মন্দাকিনী গ্রামের মেয়ে আঁখি আক্তার। ২০১৬ সালের ২২ জানুয়ারি পাশের ফরহাদাবাদের মো. রুবেলের সাথে বিয়ে হয়। কিছুদিন সংসার জীবন ভালোভাবে চললেও হঠাৎ তাদের মধ্যে দেখা দেয় মতের অমিল। একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আঁখিকে তালাক দেন রুবেল। আঁখিও তা মেনে নেন। কিন্তু তাকে মোহরানা ও ভরণপোষণ দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ২৭ মে আঁখি তার স্বামী মো. রুবেলকে বিবাদী করে চট্টগ্রামের পারিবারিক আদালতে (২) দেনমোহর ও ভরণপোষণের দাবিতে একটি মামলা করেন।
পারিবারিক আইন অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যেই মামলাটি নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। কিন্তু মাস যায় বছর যায়, মামলা শেষ হয় না। বাদিও পায় না তার ন্যায্য মোহরানা ও ভরণপোষণ।
শুধু আঁিখ নয়, তার মতো এমন অনেকেই মোহরানা ও ভরণপোষণের দাবিতে মামলা করেছেন পারিবারিক আদালতে। নির্ধারিত সময়ে নিষ্পত্তি হয়নি এ ধরনের প্রায় ৭ হাজার মামলা। আদালত সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রামের দুটি পারিবারিক আদালতে মামলা রয়েছে ৬ হাজার ৮৫৫ টি। এর মধ্যে প্রথম আদালতে ৪ হাজার ৪৭ এবং দ্বিতীয় আদালতে রয়েছে ২ হাজার ৮০৮টি মামলা। কেউ মোহরানা ও ভরণপোষণ, কেউ দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার, কেউবা অভিভাবকত্ব, আবার কেউ বিবাহ বিচ্ছেদ ইস্যুতেই আদালতে এসব মামলা করেছেন। ৬০ দিনের মধ্যে এসব মামলা নিষ্পত্তির কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয় না। এরমধ্যে নিয়মিত বিচারক না থাকা ও বিবাদীপক্ষের বার বার সময় আবেদন দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে অন্যতম বাধা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পারিবারিক মামলা মানেই স্পর্শকাতর। এক প্রকার বাধ্য হয়েই টাকা খরচ করে মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু এসব মামলা শেষই হয় না। এতে অনেকে মামলা চালাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, সমঝোতা করে ফেলেন। ভুক্তভোগীরা মনে করেন, মামলা মানেই ঝামেলা ও বিড়ম্বনা। তাই নিজে লোকসান দিয়ে হলেও একপর্যায়ে বিবাদীদের সঙ্গে সমঝোতা করে নেন বাদী।
এ বিষয়ে আঁখির আইনজীবী রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে জানান, এ পর্যন্ত আঁখির স্বামী রুবেলের বিরুদ্ধে সমনই পাঠানো হয়নি। অথচ দুই বছর আগের মামলা। এর মধ্যে করোনায় বন্ধ হয়ে গেছে কোর্টের কার্যক্রম। তিনি বলেন, আদালতের কর্মচারীদের অবহেলার কারণেও এ মামলার বিচার কার্যক্রম এগোয়নি। এ বিষয়ে আদালতের এক কর্মকর্তা জানান, বাদী আঁখির দেয়া ঠিকানায় বার বার গিয়েও বিবাদী মো. রুবেলকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। তাই সমন পাঠানো সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামের সভাপতি আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান আজাদীকে বলেন, করোনা যখন ছিল না তখনও এ আদালতের একই অবস্থা ছিল। মামলা হয়, নিষ্পত্তি হয় না। মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হলেও তা শেষ হওয়া পর্যন্ত ভুক্তভোগীদের অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়। শুধু দু’বছর নয়, ৫ বছর ও ৭ বছরের মামলাও এ আদালতে রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নির্মিত হবে আন্ডারপাস-ইউলুপ
পরবর্তী নিবন্ধমূল্য ফেরত নয়, দেরিতে হলেও পণ্যই দেওয়া হবে : ইভ্যালি এমডি