হেমন্ত এসে গেছে….। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ সোনালী রঙে ছেয়ে গেছে। পাকা ধানের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে যেন সবখানে। সবুজ টিয়ে সহ নানারকম পাখ পাখালি ধান খাওয়ার লোভে উড়ে বেড়ায় এই মাঠ থেকে ওই মাঠে। স্কুলে পিয়াস প্রায়ই সময় জানালার পাশে বসে। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকেই সে এইসব নিয়ে ভাবে। কখন স্কুল ছুটি হবে এই চিন্তায় যেন তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। কি রে পিঁয়াজ, তোর নাকি দাম বেড়ে গেছে? মিরাজের এই রকম ইয়ার্কিতে পিয়াসের চিন্তার ছেদ পড়ে। মনে কষ্ট পেলে ও হাসিমুখে জবাব দেয় তাই নাকি রে? মম বলে, কাল পিঁয়াজ কাটতে গিয়ে আমার চোখ মুখ দিয়ে পানি চলে এসেছে। পিয়াস হাসিমুখে বলে, আমার পাওয়ার দেখেছো। ক্লাসে পিয়াস বরাবরই ভালো। ম্যামরা তাই তাকে আদর ও করে। এজন্য কিছু কিছু বন্ধু পিয়াসকে হিংসা করে। যে যাই করুক পিয়াস মনে মনে কষ্ট পেলে ও বন্ধুদেরকে বুঝতে দেয় না। স্কুল ছুটির সাথে সাথে পিয়াসের মনটা খুশিতে ভরে উঠলো। বাসায় ফিরে চা নাস্তা করে পিয়াস নদীর কূলের দিকে ছুটলো। তাদের বাসার সামনে দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে এক মেঠোপথ। এই পথের দুপাশে সোনালী ধানের ক্ষেত।আছে কাশখালী খাল। এই খালকে ঘিরেই কৃষকদের নানা ব্যস্ততা।পিয়াস তার ছোট ভাই রায়ান ও পাপ্পাকে নিয়ে প্রায়ই সময় এখানে হাঁটতে আসে। আজ একা একাই সে চলে আসলো নদীর কূলে।কাশখালী খালকে সে আদর করে নদী বলেই ডাকে। এক এক ঋতুতে কাশখালী এক এক রূপ ধারণ করে। পিয়াসকে একা একা হাঁটতে দেখে আনিস ভাইয়া বলে ডাক দেয়। আনিসকে দেখে পিয়াস বললো, কি করছো? ধান কুড়চ্ছি। ধান কুড়িয়ে কি হবে? বারে জাননা বুঝি। মুড়ি মুড়কি কিনবো। তাই নাকি! চলো আমিও তোমাকে ধান কুড়িয়ে দিই। অনেকক্ষণ ধরে পিয়াস কে চুপচাপ থাকতে দেখে আনিস বললো, ভাইয়া আপনার কি হয়েছে। চুপ মেরে আছেন কেন? পিয়াস বললো, মনটা একটু খারাপ। পাপ্পা কেন যে আমার নাম পিয়াস রাখতে গেলো বুঝলাম না। আনিস বললো, তো কি হয়েছে? স্কুলে সবাই আমাকে পিঁয়াজ বলে খেপায়। আরে বাদ দেন তো বলে আনিস সাহস যোগায়। রাতে খাওয়ার পর পিয়াসের মন খারাপ দেখে পাপ্পা বললেন কি হয়েছে বাবা? কি হবে আবার। আমার নাম পিয়াস রাখতে কে বলেছে আপনাকে? সবাই আমাকে পিঁয়াজ, পিঁয়াজু বলে খেপায়। নানা কিছু বলে সান্ত্বনা দিলে ও ছেলের মনের অবস্থা বেশ বুঝতে পারেন পাপ্পা। এদিকে সমাপনী পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসছে। আর ক’দিন পর স্কুলটা হয়তো পর হয়ে যাবে।
বন্ধুগুলোও একেকজন একেক স্কুলে চলে যাবে। মনটা বিষন্নতায় ভরে উঠছে। প্রথম ঘন্টার পরে পিয়াস ওয়াফিকে বললো, চলো আমরা সবাই মিলে একটা অনুষ্ঠান করি। কে কোথায় চলে যায় কোন ঠিক আছে? মিরাজ বলে,আমরা যে তোমাকে সব সময় খেপাই এতে খারাপ লাগে না? হ্যাঁ, লাগেই তো।মম বলে, তুমি প্রতিবাদ করো না কেন? কি হবে প্রতিবাদ করে। তোমরা তো সবাই আমার বন্ধু। তোমাদের সাথে ঝগড়া, প্রতিবাদ করে আমার কি ভালো লাগবে। শুনো, আমার পাপ্পা একটা কথা বলে, তোমার লক্ষ্য ধরে এগিয়ে যাও এতে বাঁধা আসবেই পেরিয়ে যাও। একথা শুনে বন্ধুরা মনে মনে লজ্জিত হলো। সবাই পিয়াসকে স্যরি বললো। পিয়াস বললো, চলো আমরা সবাই নদীর কূল থেকে ঘুরে আসি। বন্ধুরা সমস্বরে বলে উঠলো, নদীর কূল সেটা আবার কোথায়? আরে চলোই না। সেখানে তোমাদের কে পিঁয়াজের ক্ষেত দেখিয়ে পিঁয়াজু খাওয়াবো। পিয়াসের একথায় সবাই হেসে উঠলো। বন্ধুরা, তোমরা ও মিলেমিশে থাকবে। কারো নাম ধরে ঠাট্টা ইয়ার্কি করবে না।









