বাংলা ভাষার প্রচলন হোক সর্বস্তরে

সুলতানা নুরজাহান রোজী | শুক্রবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

ওগো জাতি তুমি কি আমাকে চেনো? সময় যদি থাকে তোমার ছোট্ট করে আমার ইতিহাসটা একটু জেনো! এই চিরচেনা মুখ আমাকে দেখেছো কি কখনো! আমি ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’- সন্তান হারানো মায়েদের আহাজারি- অন্তরের ক্ষত আমি বাংলা ভাষা। আমি ক্লান্তিহীন সারাবেলা, মায়ায় ছায়ায় সবখানে -আছি অবিরত- এই ভাষাতেই জীবন পাঁজর-এই ভাষাতেই- অথৈ সুখের সাগর- এই ভাষাতেই চিনেছি আমি ঘুম ভাঙানো ভোরে শুনেছি আমি গান মায়ের মুখে ঘুম পাড়ানো সুরে শিখেছি ছড়া বোলে বোলে / আমার মায়ের কোলে দুলে দুলে-বায়ান্ন আমার ভাষা আন্দোলন। শ্লোগান ছিল একটাই- “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’- নাম না জানা সেই ছোট্ট কোমল মতি- ‘শিশুটির করুণ আর্তনাদে এখান থেকে ঐখানে ছোটাছুটি মানুষের পায়ে পিষ্ট হয়ে যাওয়া শরীর এখনো নীরবে কাঁদে আর কথা বলে চোখের নোনা জলে -জোয়ার ভাটার অমোঘ নিয়মে-একুশ আমার মনের গভীরে পলাশ শিমুলের মালা গাঁথা -আমার ভাই হারানোর শত ব্যথা। একুশ আমার মায়ের তুলে রাখা চিনি পাতা দই/ গাছে শুকিয়ে যাওয়া শাকের রক্ত পুঁই, নুয়ে পড়া লাউয়ের ডগাটি ছেলের অপেক্ষায় শিকায় তুলে রাখা ঘি মোয়া, চিড়া- শুকনো খাওয়ার আরো কত কি- “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি”-কানে ভেসে আসে ভোরে প্রভাত ফেরী- ফুলে ফুলে আয়োজন চোখে মুখে কাঁপানো বিস্মৃত একুশ আমার মায়ের বুকের কাল বৈশাখী ঝড় আজো ও কাঁদে আজন্ম লালিত স্বপ্ন/ একুশ আমার বোনের মেহেদী রাঙানো হাত- খোঁপার লাল গোলাপ- বধূর আকুল করা চোখে সাগরের উত্তাল ঢেউ রাশি রাশি/ বয়ে যাওয়া বিরহের কবিতার পান্ডুলিপি /একুশ ছুঁয়ে আছে পলাশ শিমুলের ডালে / ছুঁয়ে আছে অবুঝ শিশুটির রক্তিম গালে/ বাংলা আমার আঁতুড় ঘরের মায়ের হাসি/ আমার ঠিকানা সোঁদা মাটির গন্ধ/ আমার ভাষা আমার আশা আমার পরিচয় বাংলা আমার মাতৃভাষা। আমরা সেই জাতি ছিনিয়ে এনেছি রক্তের জোয়ারে ভাসা/ বাংলা অক্ষর -অ আ ই ঈ উ উ ঋ এ ঐ ও ঔ- এই বাংলা হোক সর্বস্তরে-বুকে মুখে নিয়ে এই ভাষাতেই লিখি। এই ভাষাতেই শিখি, এই ভাষাতেই কথা বলি, এই ভাষা যতনে, মননে, ভাবনা বুননে আচরণে, রাখবো সবাই এই ভাষার মান / চির চেনা মুখ মায়ের সুখে ও দুঃখে নেবো আমরা এই ভাষারি ঘ্রাণ! লেখক : কবি সংগঠক

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানবিক গুণের চর্চা হোক
পরবর্তী নিবন্ধবাংলা ভাষাকে সবার উর্ধ্বে রাখা প্রয়োজন