বাংলাদেশ ভূখণ্ডে মিয়ানমারের গোলাগুলি বন্ধ করতে হবে

| মঙ্গলবার , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমার সীমান্তে দিনভর গোলাগুলিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দৈনিক আজাদীতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তবাসীর আতঙ্ক কাটছে না। মর্টার শেলের গোলা বিস্ফোরণে নোম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রিত রোহিঙ্গা হতাহতের পর গত শনিবার সকালে সীমান্ত এলাকায় ফের মর্টার শেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে। কখনো কখনো বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছে সীমান্ত অঞ্চল। এতে ঘুমধুম সীমান্তজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সীমান্ত অঞ্চলে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকেরা পার্শ্ববর্তী এলাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। তবে কোনো গোলা বাংলাদেশের সীমানায় এসে পড়েনি।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। শিক্ষার্থীদের মতোই সীমান্ত অঞ্চলে বসবাসকারী নাগরিকদের নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসনে জরুরি সভা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের কোনাপাড়া নোম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেল বিস্ফোরণে শুক্রবার মৃত্যু হয় নোম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রিত রোহিঙ্গা মো. ইকবালের। আহত আরও ৫ জন রোহিঙ্গা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর আগে সকালে ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মাইন বিস্ফোরণে এক বাংলাদেশি যুবকের পা উড়ে যায়।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের প্রভাব নিজ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার পরও বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সংযম দেখাচ্ছে বলে জানিয়েছেন। ব্রিটেনের বিরোধী দলের নেতা ও লেবার পার্টির প্রধান স্যার কেয়ার স্টারমার প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশের ওপর ক্রমবর্ধমান বোঝা সম্পর্কে লেবার পার্টির নেতাকে অবহিত করেন। তারা বাংলাদেশের সীমান্তের কাছাকাছি সশস্ত্র সংঘাতের সাম্প্রতিক বিস্তার নিয়ে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ তার ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে সংঘাতের উপচে পড়া প্রভাব ছড়িয়ে পড়া সত্ত্বেও সর্বোচ্চ সংযম অনুশীলন করছে।
অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে গোলা আসা বন্ধ না হলে বিষয়টি জাতিসংঘে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মিয়ানমারে সংঘাতে গত কিছুদিন ধরে গোলা আসার ধারাবাহিকতায় শুক্রবার একজনের মৃত্যুর পর তার এই হুঁশিয়ারি এলো। ঢাকার ধানমণ্ডিতে আহসানিয়া মিশনের উদ্যোগে একটি বই প্রকাশনা উৎসবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, স্পষ্ট কথা, আমরা এটার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে। আমরা সেই চেষ্টাই করছি। আমাদের পক্ষ থেকে না হলে জাতিসংঘের কাছে তুলব, সবকিছু করব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের সীমানায় এসে যে গোলাবারুদ পড়ছে, এটা নিয়ে খুব কড়া ভাষায় আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমাদের বিজিবি ওদের বিজিপির সঙ্গে কথা হচ্ছে নিয়মিত, কথা হচ্ছে তাদের আর্মির সাথেও। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ডেকে পাঠিয়ে আমাদের অবস্থানের কথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি।

বড় উদ্বেগের বিষয় এই যে, কিছুদিন থেকেই বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় আরাকান আর্মির আস্তানা ধ্বংস করতেই মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্রের হামলা চালাচ্ছে। মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকেও গোলা নিক্ষেপ করা হচ্ছে।’
মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ। তাই আমরা মনে করি, প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাটাই কূটনীতির একটা অংশ। পৃথিবীর ইতিহাসে একটা বড় দৃষ্টান্ত হলো, আমরা ১১ লাখের বেশি মিয়ানমারের অধিবাসী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। যা আমাদের অর্থনীতির ওপর যেমন চাপ সৃষ্টি করছে, তেমনি পরিবেশের জন্যও মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন উচিত, মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের প্রত্যাবাসন। সেই জায়গায় প্রত্যাবাসন দূরে থাক, উল্টো বাংলাদেশ সীমান্তে মর্টার শেল ও গোলা নিক্ষেপ করে চলেছে। এটা মিয়ানমারের সিরিয়াস অন্যায় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এরকম গোয়ার্তুমি চলতে থাকলে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ক্রমশ আরো জটিল আকার ধারণ করবে। আমরা চাই, মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে সদাচরণ করবে এবং যাতে সীমা লঙ্ঘন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবে। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে মিয়ানমারের গোলা এসে যেন না পড়ে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্বশান্তি দিবস