বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী হোক

| বৃহস্পতিবার , ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

গত ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দিবস পালিত হয়েছে। ঢাকা ও দিল্লি ছাড়াও বিশ্বের ১৮টি দেশে দিবসটি পালিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ১০ দিন আগে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ভারত। এ দিবসকে উপলক্ষ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইটার বার্তা প্রদান করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চাই। নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আজ ভারত ও বাংলাদেশ মৈত্রী দিবস পালন করছে। আমরা যৌথভাবে আমাদের ৫০ বছরের বন্ধুত্বের ভিত্তিকে স্মরণ ও উদযাপন করি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একযোগে আমাদের সম্পর্ককে আরও প্রসারিত ও গভীর করতে আগ্রহী। একইসঙ্গে আমি শেখ হাসিনার সঙ্গে একযোগে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য উন্মুখ’।
এদিকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক কাজের প্রয়োজনে আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে সীমাবদ্ধ নয়, তা সার্বভৌমত্ব, সমতা, আস্থা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধায় বিস্তৃত। তিনি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে। এটি আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যাত্রায় মাইলফলক। প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০২১ সালের ২৬-২৭ মার্চ বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা ও নয়াদিল্লিসহ ১৮টি নির্বাচিত শহরে যৌথভাবে এ সম্পর্কের উদযাপন ও ৬ ডিসেম্বরকে ‘মৈত্রী দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সম্মত হন দুই নেতা।
বঙ্গবন্ধুর ১৯৭২ সালের ভাষণ উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে, যা সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব আমাদের হৃদয়ে। মৈত্রীর এ বন্ধন সুদৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, তার সরকার, অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের ও সামগ্রিকভাবে ভারতের জনগণের উদারতার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, কাজের সম্পর্কের জন্য দরকারি আনুষ্ঠানিক কাঠামো প্রদানকারী চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মধ্যে আমাদের সম্পর্ক সীমাবদ্ধ নয়। গতিশীল, ব্যাপক ও কৌশলগত আকার ধারণ করে পরিপক্ব হয়েছে আমাদের বিস্তৃত অংশীদারিত্ব, যার ভিত্তি সার্বভৌমত্ব, সমতা, আস্থা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক ‘ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা ও ধর্মনিরপেক্ষতার সাধারণ মূল্যবোধ এবং আরও অগণিত সামঞ্জস্যের মধ্যে প্রোথিত’ বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চ পর্যায়ে নিয়মিত রাজনৈতিক মিথস্ক্রিয়া ও বিনিময়ের ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের মৈত্রীর বন্ধন আরও সুদৃঢ়, বহুমুখী এবং সম্প্রসারিত হয়েছে।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন যে উচ্চতায় আছে তাতে কোনো ধরনের সমীকরণই এ সম্পর্ককে ঋদ্ধ করতে পারে বলে ভাবছেন কূটনৈতিকরা। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারত হলো পরীক্ষিত বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তৈরি হওয়া সম্পর্ক এখন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে আরও এগিয়ে যাবে। পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই উষ্ণতম। দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের যে পরিপক্বতা তা পৃথিবীর খুব কম প্রতিবেশী দেশের মধ্যে আছে। ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর মাধ্যমে দুই দেশের একে অন্যের পাশে থাকার শুরু। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সবচেয়ে বেশি এগিয়ে যাওয়া বর্তমান দুই প্রধানমন্ত্রীর আমলেই। বিশ্লেষকরা বলেন, গত ছয় বছরে উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ের সফরকালে কমপক্ষে ৯০টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ সময় থেকে দুই দেশের স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে, সমুদ্রবিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে, কানেকটিভিটি চুক্তি সই হয়েছে। বাংলাদেশে ১ হাজার ৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি, বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ৪০টির বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ভারত।
ভারতীয় কূটনীতিকরা বলছেন, ভারতীয় নেতৃত্ব ও জনগণ সব সময় বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করেছে এবং সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে সমর্থন করেছে। সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে বোঝাপড়া ও সম্পর্ক একটি নতুন দিক ও ভিত্তি তৈরি করেছে। এ অবস্থায় বিশ্লেষকরা দুই দেশের মধ্যে বর্তমান দৃঢ় সম্পর্ক অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এ সম্পর্ক আরো জোরদার করে সামনের দিকে দৃষ্টি রাখা দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে