দেশে বিনিয়োগ ব্যাংকিং ও ব্রোকারেজ হাউস পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাল বাংলাদেশের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৫,৬০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। এতে আরো বলা হয়েছে, বৈশ্বিক বাজারে চাহিদা নিম্নমুখী ও স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমবে।
তবে আগামী বছর থেকে আবার ঘুরে দাঁড়াবে শীর্ষ পণ্য রপ্তানি আয়ের এই খাত। বছরে গড়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হবে। তাতে ২০২৬ সালে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ৪ হাজার ৫৭০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে ক্যাল বাংলাদেশের পূর্বাভাস সম্পর্কে জানা যায়, চলতি বছর তৈরি পোশাক রপ্তানি দশমিক ৯ শতাংশ কমবে। তবে আগামী বছর ৮ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। পরের দুই বছর যথাক্রমে ৭ দশমিক ২ এবং ৬ দশমিক ৭ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হবে। আগামী বছর থেকে পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে তিনটি বিষয় প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। সেগুলো হচ্ছে কৃত্রিম তন্তুর পোশাক উৎপাদনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, চীন থেকে ক্রয়াদেশ স্থানান্তর এবং বাজার ও পণ্য বহুমুখীকরণ।
সারা বিশ্বে যে পরিমাণ পোশাক বিক্রি হয়, তার ৭৩ শতাংশ কৃত্রিম তন্তুর (এমএমএফ)। বাকি ২৭ শতাংশ তুলা দিয়ে তৈরি সুতার। আর বাংলাদেশের রপ্তানি করা পোশাকের মাত্র ২৬ শতাংশ কৃত্রিম তন্তুর। যদিও বাজারটি ধরতে বাংলাদেশ দ্রুত এগোচ্ছে। কৃত্রিম তন্তুর কাপড় উৎপাদনে বস্ত্র খাতে ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগ বেড়েছে ১০ শতাংশীয় পয়েন্ট। আবার কৃত্রিম তন্তুর আমদানি করোনার আগের সাত বছরে গড়ে ৯ দশমিক ১ শতাংশ হারে বেড়েছে।
অন্যদিকে কৃত্রিম তন্তুতে দেশীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও (এফডিআই) বাড়ছে। গত চার বছরে কৃত্রিম তন্তুতে দক্ষিণ কোরিয়ার ৩৭ কোটি ৯০ লাখ, হংকংয়ের ৩৬ কোটি ৮০ লাখ এবং চীনের ২৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিনিয়োগ এসেছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ২০২১ সালে জাপানে ১০২ কোটি ৯১ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩২ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। তবে শুধু জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গত ছয় মাসের হিসাব ধরলে এই রপ্তানির পরিমাণ ৭৫ কোটি ৪৭ লাখ ডলার দাঁড়ায়। গত অর্থবছরের একই সময়ের হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৪২ শতাংশের বেশি।
কয়েক মাস ধরে জাপানের বাজারে যে গতিতে রপ্তানি বেড়েছে তাতে আশায় বুক বাঁধছেন এ দেশের গার্মেন্ট উদ্যোক্তারা। ইউরোপ–আমেরিকার মতো গতানুগতিক বাজারের পাশাপাশি নতুন এই মার্কেটে নিজেদের ভবিষ্যৎ দেখছেন তাঁরা। তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ মনে করেন, ২০৩০ সাল নাগাদ একসময়ের অপ্রচলিত এই বাজারেই বর্তমানের ১০ গুণ তৈরি পোশাক রপ্তানি হবে।
জানা যায়, ২০২২–২৩ অর্থবছরের জুলাই–নভেম্বর পর্যন্ত এই ৫ মাসে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৮৩৪ কোটি ডলার। যা বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আয়ে আরেকটি রেকর্ড। ইপিবি‘র প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উল্লিখিত সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৮৩৪ কোটি মার্কিন ডলার, যা ২০২১–২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিটওয়্যারের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০১১ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ওভেন পোশাক থেকে আয় ৮২১ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১২.৫৫ শতাংশ এবং ১৯.৬১ শতাংশ। একক মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের ৩২৩ কোটি মার্কিন ডলার থেকে ২০২২ সালের একই মাসে ৩৫.৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩৭ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও ক্রয়াদেশ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে চলতি বছর খারাপ গেলেও আগামী বছর থেকে রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে ২০২৬ সালে পোশাক রপ্তানি ৫৬ বিলিয়নের চেয়ে বেশি হবে’। এ সম্ভাবনাটাকে কাজে লাগাতে হবে।