বাংলাদেশি রান্নায় অস্ট্রেলিয়ায় চমক

| বুধবার , ৭ জুলাই, ২০২১ at ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

রান্না বিষয়ক জনপ্রিয় টেলিভিশন রিয়েলিটি শো মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ চারে জায়গা করে নিয়েছেন কিশোয়ার চৌধুরী। সমপ্রতি ফেসবুক-টুইটার-ইনস্টাগ্রামসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত এবং জনপ্রিয় কয়েক পদের রান্নার ভিডিও। সঙ্গে পরিচিতি পান এসবের রাঁধুনি।
লাউ চিংড়ি, বেগুন ভর্তা, খিঁচুড়ি, মাছ ভাজা, আমের টক, খাসির রেজালা-মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় একের পর এক এমন মুখরোচক খাবার রান্না করে বিচারকসহ বিভিন্ন ভাষাভাষী দর্শকের নজর কাড়েন শেফ কিশোয়ার চৌধুরী। খবর বিবিসি বাংলার।
শীর্ষ চারে থাকা কিশোয়ার শীর্ষ তিনজনের একজন হবেন কিনা তা জানতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। ইতোমধ্যে অনেকের মন জয় করে নিয়েছেন তিনি। তাদের কাছে কিশোয়ারই সেরা। অনেকের মতে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশে প্রচলিত নানা ধরনের খাবারকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার কারণেই ৩৮ বছর বয়সী এই শেফকে অন্য সব প্রতিযোগী থেকে আলাদা করেছে।
কিশোয়ার চৌধুরী একজন বিজনেস ডেভেলপার, পারিবারিক প্রিন্টিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছেন। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ায় হলেও পারিবারিক আবহটা সবসময় ছিল বাঙালি। তার বাবার বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। মা কলকাতার বর্ধমানের। তারা দুজনে প্রায় ৫০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। তবে বিদেশে বসবাস করলেও নিজের দেশের ভাষা, সংস্কৃতি চর্চা বজায় রেখেছেন কিশোয়ারের বাবা-মা। সেটা নিজের সন্তানদেরও ধারণ করতে উৎসাহিত করেছেন।
কিশোয়ার বলেন, আমাদের বাসার ভেতরে শুধু রান্না না, বাজারটা কোথা থেকে আসে, কোন ইনগ্রেডিয়েন্ট কোথা থেকে কিনি, সেগুলোও সব সময় দেখানো হয়েছে আমাদের। আমাদের বাগানে হার্বস থেকে শুরু করে শাকসবজি মরিচ-লাউ সবকিছুই আমরা নিজেরা উৎপাদন করি। ছোটবেলা থেকে আমাদের বাবা-মা এসব কাজে আমাদের সম্পৃক্ত করেছেন।
কিশোয়ারের মনে হয়নি হঠাৎ করে তিনি রান্না শুরু করেছেন। তিনি বলেন, যেগুলো সব সময় দেখে আসছি, করে আসছি, সেগুলোই রান্না করেছি। আমার বাবা মাছ ধরতে পছন্দ করেন। ছোটবেলায় তার সাথে মাছ ধরতে যেতাম। ওই যে ফ্রেশ মাছটা নিয়ে রান্না করা, সেটা দেখে বড় হয়েছি। আসলে এই পরিবেশটা সব সময় বাসার মধ্যেই ছিল।
ঠিক কোন বয়স থেকে রান্না শুরু করেছিলেন সেই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা না দিতে পারলেও প্রথম স্মৃতি তার রান্নাকে ঘিরেই। ৩/৪ বছর বয়সের কিশোয়ারকে পাশে নিয়ে তার মা কেক বানাচ্ছেন। শাকসবজি কুটে দেওয়া, পেঁয়াজ ছিলে দেওয়া, মাছ কোটা, মুরগি কেটে দেওয়ার ট্রেনিং ছোটবেলা থেকেই ছিল তার। অনেক সময় তার ও বোনদের ওপর রান্নার দায়িত্ব দিতেন মা। কখনও পাস্তা, কখনও নুডলস। মোট কথা বাবা-মায়ের কাছ থেকেই রান্নার হাতেখড়ি।
যত ধরনের রান্নাই হোক না কেন, বাসায় এক বেলা বিশেষ করে রাতের খাবারের মেন্যু হতো সব সময় বাঙালি খাবারের মেন্যু।
দুই সন্তানের মা কিশোয়ারের মাথায় চিন্তাটা আসে ২০২০ সালে। গত বছর একটা বিষয় মনে হচ্ছিল, আমার বাবা-মা যে রকম করে তাদের সংস্কৃতি, খাবার-দাবার সবকিছু আমাদের মধ্যে ইনস্টল করেছেন, আমি সেটা সন্তানদের মধ্যে দিতে পারব কিনা। এটা শুধু আমার না, আমার মনে হয় দেশের বাইরে যেসব বাবা-মা থাকেন, সবার মধ্যেই এই চিন্তাটা থাকে। আর এমন চিন্তা থেকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা বই লেখার পরিকল্পনা করেন কিশোয়ার।
তবে মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ায় আবেদন করার ইচ্ছা কখনো ছিল না কিশোয়ারের। তার ভাষায়, এটা আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল। সে আমাকে প্রায় বলত, মা তুমি এটা পারবা। তুমি অ্যাপ্লাই করো না কেন।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশি খাবার উপস্থাপন করাটা কিশোয়ারের জন্য ছিল চ্যালেঞ্জের, সাথে আনন্দেরও। তিনি বলেন, আমি সব সময় পরিবার আর সন্তানদের জন্য রান্না করেছি। বন্ধু-বান্ধবরাও পছন্দ করে আমার রান্না। কিন্তু সেই রান্না এ রকম একটা প্রতিযোগিতায় কতটা কাজে দেবে তা নিয়ে ভাবনা ছিল। তবে আত্মবিশ্বাস ও রান্নার দক্ষতা তাকে শীর্ষ ২৪ থেকে এরই মধ্যে সেরা চারজনের মধ্যে নিয়ে এসেছে। বাঙালি ফুড আইডেনটি তুলে ধরার স্বপ্ন তিনি পূরণ করেছেন মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিধিনিষেধ অমান্য করায় নয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধজাতীয় স্বার্থে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক : বাবুনগরী