বাঁশরিয়া ক্যাপ্টেন উস্তাদ আজিজুল ইসলাম

আ.ফ.ম মোদাচ্ছের আলী | শুক্রবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ

নাবিক ক্যাপ্টেন উস্তাদ আজিজুল ইসলাম সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের সাথে নিমগ্ন থেকেছেন বাঁশি বাজিয়ে। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে সঙ্গীতে অবদানের জন্য পেলেন রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক। ২০২২ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমি তাঁকে সাম্মানিক ফেলোশিপ প্রদান করেছে। এই নেপথ্যচারি বাঁশরিয়ার সাথে আলাপচারিতায় উঠে এসেছে তাঁর শিল্পচর্চার বিভিন্ন কথন।
বাঁশির প্রতি কীভাবে আকৃষ্ট হলেন-

আমার পরিবার সংগীত পিয়াসু। নানা ছিলেন সংগীতের প্রতি অনুরক্ত। ছোট বোন বেলা ইসলাম গান শিখতো। তখন থেকেই শুরু। পিতার কর্মস্থল রাজবাড়ি জেলায় জন্ম হলেও শৈশব থেকেই স্থায়ী বসবাস চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আর্য সঙ্গীতের শিক্ষক পন্ডিত প্রিয়দা রঞ্জন সেনগুপ্তের কাছে শিল্পীজীবনের হাতেখড়ি। আর্য সঙ্গীতে ক্লাস করেছি সর্বমোট চার দিন। শাস্ত্রীয় কণ্ঠসংগীতে উস্তাদ বেলায়েত আলী খান ও বিশ্ববিখ্যাত সরোদবাদক উস্তাদ বাহাদুর খানের শিষ্যত্ব গ্রহণ করি। পন্ডিত দেবেন্দ্র মুদ্রেশ্বর ও পন্ডিত ভি জি কার্নাডের কাছে শেখার সুযোগ পাই। আমার স্ত্রী ডাঃ আঞ্জুমান আরা ইসলাম ও আমার দুই মেয়ে আমার ভাই-বোনেরা এই ব্যাপারে আমাকে সবসময় উৎসাহ জুগিয়েছেন, যার ফলে বাঁশির সাথে আমার অনুরাগ আরো বেগবান হয়েছে।

শাস্ত্রীয় সংগীতে আপনার পছন্দের রাগগুলো নিয়ে যদি বলতেন-

চলিত রাগ-এর প্রতি আমার আকর্ষণ বেশি। রাতের রাগ-এর মধ্যে ইমন, দরবারি কানারা, মিয়াকি মালহার, হংসধ্বনি, মালকোশ, রাজশ্রী, দুপুরের রাগ পটদিপ, ভীমপলশ্রী, বৃন্দাবনি সারং, সকালের রাগ ভৈরব, আহির ভৈরব, কোমলয়াশাবরি, জৈনপুরী, গুণকেলি উল্লেখযোগ্য।

ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে কিছু বলুন-

শাস্ত্রীয় সংগীতকে পরিচিত করানোর জন্য লেকচার ডেমোনেস্ট্রেশন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাতে ভবিষ্যতে এই ঘরানার শ্রোতা বাড়ে। এইজন্য বিভিন্ন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সংগঠন-এর সহায়তাও জরুরি।
অনেক অনুষ্ঠানে আপনি বাঁশি বাদন করেছেন। আপনার কাছে উল্লেখযোগ্য মনে হয়েছে এমন দু’একটির কথা বলুন-

দেশে-বিদেশে অনেক অনুষ্ঠান করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির একটি হলো শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালার একটি অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ফজলুল করিম সাহেব উপস্থিত ছিলেন। বিচারপতিরা সাধারণত সামাজিক বা কোনও অনুষ্ঠানে যান না। উনার উপস্থিতি আমাকে প্রাণিত করেছিল। দ্বিতীয়টি ভারতের শীর্ষ স্থানীয় সংগীতশিল্পী ও সুধীজনের উপস্থিতিতে কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী বিবেকানন্দ হলে উস্তাদ বেলায়েত খাঁর সেতার বাদনের পূর্ব মুহূর্তে আমার বাঁশিবাদন যা দূরদর্শনে একাধিকবার প্রচার করা হয়। তাছাড়া বিশ্ববিখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীত সম্মেলন ডোভারলেন মিউজিক কনফারেন্সের সুবর্ণজয়ন্তীতে আমার বাদন, ঢাকার জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে ‘বর্ষার রাগ সন্ধ্যায়’ এক অনুষ্ঠানে বাদন শোনার পর সেই সময়ের সংস্কৃতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন মুগ্ধ হয়ে মঞ্চে আমাকে দশ হাজার টাকা উপহার দেন।
ভবিষ্যত ভাবনা সম্পর্কে বলুন-
শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রসারে বেশি বেশি অনুষ্ঠান করতে চাই, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের প্রত্যেকটিতে মিউজিক বিভাগ খোলার জন্য আমি বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাই। সব সঙ্গীতের মাঝেই শাস্ত্রীয় সংগীত অন্তর্নিহিত আছে এবং এইসব সংগীতের উৎসাহ বলা যেতে পারে শাস্ত্রীয় সংগীতকে।
তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় উস্তাদ আজিজুল ইসলাম সাধনার ফলে আজ দেশের গর্ব। তাঁর মতে “সাধনাই মানুষকে এগিয়ে দেয়।”

পূর্ববর্তী নিবন্ধদূরের দুরবিনে
পরবর্তী নিবন্ধসাধক দীন শরৎ