বাঁশখালীতে দুই খুন, চারজন গ্রেপ্তার

পিতাকে গ্রেপ্তার করায় থানায় গিয়ে ছাত্রলীগ নেতার আত্মহত্যার চেষ্টা

বাঁশখালী প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২২ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

পারিবারিক বিরোধে বাঁশখালীতে দুইজন খুন এবং পিতাকে গ্রেপ্তার করায় থানায় গিয়ে ফেসবুক লাইভে বিষপানে ছাত্রলীগ নেতার আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, বাঁশখালী পৌরসভার দক্ষিণ জলদী মনছুরিয়া এলাকায় পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন। ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে থানায় রেকর্ড করা হয়েছে হত্যা মামলা। আসামিদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে গ্রেপ্তার মোহাম্মদ ছিদ্দিকের পুত্র ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ রাসেল পুলিশি হয়রানির অভিযোগ এনে বাঁশখালী থানায় গিয়ে ফেসবুক লাইভ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, বুধবার দুপুরে দক্ষিণ জলদীর মনছুরিয়া বাজারের পাশে নিজের বাড়ির পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপ লাইন ঠিক করার সময় প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন আব্দুল খালেক (৩৪)। তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসা সুলতান মাহমুদ টিপু (২৫) ও তার পিতা মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনও (৫৫) হামলার শিকার হন। আহতদের বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে আব্দুল খালেককে মৃত ঘোষণা করা হয়। আশংকাজনক অবস্থায় সুলতান মাহমুদ টিপু এবং তার পিতা মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন এবং অপর দুইজনকে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে মারা যান সুলতান মাহমুদ টিপু। নিহত আব্দুল খালেক ও সুলতান মাহমুদ টিপু সর্ম্পকে চাচা-ভাতিজা। এ ঘটনায় নিহত আব্দুল খালেকের (৩০) মা ও নিহত সুলতান মাহমুদ টিপুর দাদী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে বাঁশখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার পরপরই স্থানীয় কাছিম আলীর দুই পুত্র মোহাম্মদ বাহাদুর (৩৩) ও মঞ্জুর আলম (৪০), মৃত নাগু মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ জাকের হোছন (৪৮) এবং মৃত শফিকুর রহমানের পুত্র মোহাম্মদ ছিদ্দিক (৫২) কে গ্রেপ্তার করে। মোহাম্মদ ছিদ্দিক ওই মামলায় ৮ নম্বর আসামি এবং তার পুত্র চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ রাসেল ৪ নম্বর আসামি। মোহাম্মদ ছিদ্দিককে গ্রেপ্তারের পর ছাত্রলীগ নেতা এবং মামলার আসামি মোহাম্মদ রাসেল সিএনজি টেক্সি চড়ে থানায় প্রবেশ করেন। ‘তার পিতা মোহাম্মদ ছিদ্দিককে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে, তাদের পরিবারকে নানাভাবে পুলিশ হয়রানি করছে’ ইত্যাদি অভিযোগ এনে ফেইসবুক লাইভে এসে বিষপান করেন। কোনো ধরনের প্রতিকার না পেয়ে তিনি বিষপানে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন বলেও এ সময় তিনি উল্লেখ করেন। বিষপানে গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া মোহাম্মদ রাসেলকে প্রথমে বাঁশখালী হাসপাতালে এবং পরে তাকে নগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত আব্দুল খালেক একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকুরি করতেন। তার দুই ছেলে মেয়ে রয়েছে। অপরদিকে নিহত সুলতান মাহমুদ টিপুর এক পুত্র সন্তান রয়েছে। ঘটনার পর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সহকারি পুলিশ সুপার (সার্কেল) মোঃ হুমায়ুন কবির সহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল উদ্দীন বলেন, বুধবার দুপুরে পারিবারিক বিরোধের জেরে দক্ষিণ জলদী মনছুরিয়া এলাকায় সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে আব্দুল খালেক নামে একজনের মৃত্যু হয়। সুলতান মাহমুদ টিপু নামে অন্য একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে বুধবার রাতে তার মৃত্যু হয়। ১০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিহত আবদুল খালেক ও সুলতান মাহামুদ টিপুর লাশ এলাকায় নিলে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরে স্থানীয় মনছুরিয়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নামাজে জানাজা শেষে দুজনের লাশ দাফন করা হয়েছে। প্রকৃত খুনিরা যাতে কোনোভাবে পার না পায় তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধট্রায়াল শেষ শতভাগ কার্যকর বঙ্গভ্যাক্স