বাঁধ ছাপিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে

উপকূলে পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৭ মে, ২০২১ at ৭:১০ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাতের আশংকা তৈরি করে ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হেনেছে। তবে ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাব, সাথে পূর্ণিমার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত জোয়ার হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। এতে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সাগর ও নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর কিছু কিছু স্থানে বাঁধ ছাপিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। ফলে উপকূলীয় বিভিন্ন উপজেলায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এদিকে একদিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়েও নিচে নেমে গেছে। মঙ্গলবার চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও বুধবার কমে তা দাঁড়িয়েছে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বুধবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পতেঙ্গার বঙ্গোসাগর উপকূলে বেড়িবাঁধের অভ্যন্তরে থাকা কিছু কাঁচা স্থাপনা পানির তোড়ে ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলে পাড়া সংলগ্ন কিছু বাড়িঘর। এদিকে বুধবার সকাল থেকে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া থাকলেও সকাল ১০টার দিকে নগরীর কিছু কিছু স্থানে অল্প সময়ের জন্য গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। দিনের অন্য সময়গুলোতে বৃষ্টি না থাকলেও আবহাওয়া ছিল শান্ত। তাছাড়া জোয়ারের কারণে নগরীর কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস বুধবার সন্ধ্যা ৬টার স্থানীয় পূর্বাভাসে জানায়, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে সাময়িকভাবে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সেই সাথে কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা কিংবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। পশ্চিম দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১৫-১৮ কি.মি. বেগে যা অস্থায়ী দমকা কিংবা ঝড়ো হওয়ার আকারে ৩৫-৪৫ কি.মি. বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। বুধবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস মাত্র ৬.৪ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। গতকাল বুধবার চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৮.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। অন্যদিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং চট্টগ্রাম নদী বন্দরকে ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া ও ভূ-প্রাকৃতিক কেন্দ্রের উপ-পরিচালক সৈয়দ আবুল হাসানাত দৈনিক আজাদীকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাত না হানলেও প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে পূর্ণিমার কারণে সাগরের পানি বাড়ে। এবার ঘূর্ণিঝড়ের কারণেও সাগরে পানি বেড়েছে। সবমিলিয়ে জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট বেশি পানি বেশি উঠেছে বলে জানান তিনি।
আনোয়ারা : আমাদের প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদের জোয়ারের পানি বেড়ে উপকূলীয় রায়পুর, জুঁইদন্ডী, পরৈকোড়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকিতে বসবাস করছে। সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় রায়পুর ইউনিয়নের পরুয়াপাড়া, ছত্তার মাঝি ঘাট, ছিপাতলী ঘাট, উঠান মাঝি, ঘাটকুল, জুঁইদন্ডী লামার বাজার, আনোয়ারা কৈয়খাইন নোয়ারাস্তাসহ একাধিক স্থান দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। তবে পানি ঢুকলেও উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মিত হওয়ায় এবার প্রথম রায়পুর ইউনিয়ন বড় ধরনের প্লাবন থেকে রক্ষা পেয়েছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম দাশ, উপ সহকারী প্রকৌশলী ফায়জুল ইসলাম, রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম ও রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিন শরীফ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয় রায়পুর ইউনিয়নের ফকিরহাট নোয়াপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ ছৈয়দ মাঝি (৬৫) অভিযোগ করে বলেন, মাটির সাথে বালি মিশ্রিত করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করায় ৬ মাস পার না হতেই সেগুলো শঙ্খ নদে তলিয়ে গেছে। বর্তমানে ফকির হাট এলাকায় অর্ধশত পরিবার চরম ঝুঁকিতে আছে।
রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিন শরীফ জানান, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির প্রচেষ্টায় ৬৭২ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় ১৯৯১ সালের পর এই প্রথম বন্যা থেকে রক্ষা পেয়েছে রায়পুর ইউনিয়ন। তাই এলাকাবাসীর মাঝে অনেক বছর পর স্বস্তি ফিরেছে।
রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম জানান, স্বাভাবিকের চেয়ে ৭-৮ ফুট বেশি জোয়ারের পানি বাড়ায় বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অতিদ্রুত বেড়িবাঁধের ভাঙন ঠেকানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম দাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে আনোয়ারার উপকূলীয় রায়পুর ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ ভাঙনের মুখে পড়েছে। এছাড়া কয়েকটি স্থান দিয়ে জোয়ারের পানি এলাকায় প্রবেশ করেছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত জিও ব্যাগ বসানো হবে।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় আনোয়ারায় সিপিপির ১ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৫৮টি সাইক্লোন শেল্টারে লোকজন আশ্রয় নিতে পারবেন। তাছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
বাঁশখালী : আমাদের প্রতিনিধি জানান, উপজেলার উপকূলীয় গন্ডামারা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মধুখালী, ৩নং ওয়ার্ডের ওয়াফদা বেড়িবাঁধ সংলগ্ন লালপুরী বাপের বাড়ি ও পশ্চিম বড়ঘোনার আলেকদিয়া, ছনু্‌য়া ইউনিয়নের হাবাখালী, ছনুয়ার টেক ও শেলবন, পশ্চিম সাধনপুর, খানখানাবাদের প্রেমাশিয়া, শেখেরখীল ইউনিয়নের গুইল্যাখালী এবং শীলকূপের মনকিচর এলাকার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। গন্ডামারা এলাকার সমাজসেবক আলমগীর মাহফুজ জানান, ‘সকাল থেকে জোয়ারের পানি উচ্চ মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়ে পূর্ব বড়ঘোনার বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করেছে। ফলে বাড়িঘর ও বেশ কিছু স্থাপনা পানিতে তলিয়ে যায়।’ গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লেয়াকত আলী বলেন, ‘সকাল থেকে যখন প্রবল বাতাস ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয় তখন আমার এলাকার কিছু কিছু জায়গায় বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে জোয়ারের লোনা পানি প্রবেশ করে। আমি সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসমূহ পরিদর্শন করেছি। জোয়ারের পানিতে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও মাটির তৈরি ও ঝুঁপড়ি ঘরগুলো ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে।’ ছনুয়া ইউনিয়নের ছনুয়ার টেক ও মধুখালী এলাকায় সংস্কারহীন বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে বলে জানান চেয়ারম্যান এম হারুনুর রশিদ। খানখানাবাদের কদর রসুল এলাকায় বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পানি নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করেছে বলে জানান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বদরুদ্দিন চৌধুরী। সরলের পশ্চিমাংশে পানি প্রবেশ করেছে বলে জানান চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ চৌধুরী, শেখেরখীলের গুইল্যাখালী এলাকায় জলকদর খালের বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে বলে জানান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াছিন সিকদার।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ও পূর্ণিমার জোয়ারে উপকূলীয় এলাকা সমূহে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিছু কিছু জায়গায় বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করলেও তা ঘণ্টাখানেক পর নেমে যায়। উপকূলবাসীকে সুরক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।’
মহেশখালী : আমাদের প্রতিনিধি জানান, উপজেলার মাতারবাড়ি, ধলঘাটা, পৌরসভার ও কুতুবজোম ইউয়িনে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ২ শত কাঁচা ঘরবাড়ি কমবেশি বিধ্বস্ত হয়েছে। তলিয়ে গেছে শতাধিক চিংড়ি ঘের। বিধ্বস্ত হয়েছে অন্তত ১৫ কিঃমিঃ উপকূলীয় বেড়িবাঁধ।
মাতারবাড়ির ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪/৫ ফুট বেশি হওয়ায় ৭০নং ফোল্ডারের ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে মাতারবাড়ীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে শতাধিক কাঁচা বাড়িঘর ও ৫০টির মতো চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে। এতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে চাষিদের।
ধলঘাটার ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান, তার ইউনিয়নের সরইতলা গ্রামের বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশ দিয়ে পানি ঢুকে লোকাল প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ৫০টির অধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুতুবজোম ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসনে খোকন জানান, সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিমে শতাধিক ঘর-বাড়ি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মানুষের সহায়-সম্পদ সাগরের জোয়ারের লোনা পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া কুুতুবজুম, তাজিয়া কাটা, ঘটিভাঙ্গা ও সোনাদিয়ার বেশ কটি চিংড়ি ঘের তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকছুদ মিয়া জানান, পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের চরপাড়া পশ্চিমে ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশে ৪০টি বাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান জানান, আমার এলাকার ৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু চিংড়ি ঘেরের ক্ষতি হয়েছে জোয়ারের পানির কারণে।
সন্দ্বীপ : জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে সন্দ্বীপ উপজেলার সারিকাইত ইউনিয়নের বেশ কিছু অংশ। ইউনিয়নের ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের নতুন বেড়িবাঁধের কিছু অংশ ভেঙে এবং ১ নং ওয়ার্ডের সায়েদ স’মিল সংলগ্ন বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবেশ করেছে। ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে আপাতত মাটি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
আমাদের রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি ঢুকেছে। গতকাল জোহরের নামাজের সময় কর্ণফুলী নদীর পানি উপচে স্থানীয় শতবর্ষী গোলাম বেপারী হাট জামে মসজিদে ঢুকে যায়। ইতঃপূর্বে ভাঙনে মসজিদের অর্ধেক অংশ বিলীন হয়ে গেছে। এবার শতবর্ষী এই মসজিদের সম্পূর্ণ অংশ নদী বিলিয়ে গেছে। এছাড়া শত শত একর ফসলি জমি, শতবর্ষী বাজার ও বাড়িঘর হুমকির মুখে রয়েছে। পাশাপাশি এসব স্থাপনা অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে বলে জানান স্থানীয়রা। এজন্য রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয়রা।
বেতাগী আস্তানা শরীফের সাজ্জাদানশীন মাওলানা গোলামুর রহমান রহমান আশরাফ শাহ জানান, কর্ণফুলী নদীর ভয়াবহ ভাঙনের মুখে রয়েছে প্রাচীন মসজিদ, বাজারসহ বহু স্থাপনা। দ্রুত ব্লক বসিয়ে ভাঙন ঠেকাতে না পারলে ফসলি জমি, বাজারসহ মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ায় ভাঙন প্রতিরোধে ইতোমধ্যে ৪২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর অধিকাংশ স্থানে ব্লক বসানো হয়েছে। অবশিষ্ট অংশেও ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড তদারকি করছে।’
উখিয়া : আমাদের প্রতিনিধি জানান, ইয়াসের প্রভাবে উখিয়ার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারের পানিতে শতাধিক ঘর প্লাবিত হয়েছে। মেরিন ড্রাইভ রোডের পাটুয়ারটেক এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপকূলের একাধিক স্থানে জোয়ারের ঢেউয়ের তাণ্ডবে অসংখ্য ঝাউ গাছ উপড়ে গেছে। গতকাল ভরা পূর্ণিমা, চন্দ্রগ্রহণ ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪/৫ ফুট পানি বেড়ে পায়। এতে জোয়ারের পানিতে উখিয়া উপকূলের পশ্চিম সোনারপাড়া, ডেইলপাড়া, চোয়াংখালীসহ বিভিন্ন স্থানে শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েকশ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।
সমুদ্রের প্রচণ্ড ধাক্কায় রেজু নদীর মোহনা ও পশ্চিম সোনারপাড়া, ডেইলপাড়া, ইনানী, চোয়াংখালীর সমুদ্র চরে অসংখ্য ঝাউ গাছ উপড়ে পড়েছে। এসব এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। উত্তাল সমুদ্রের প্রচণ্ড ঢেউয়ের তোড়ে কঙবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের মোহাম্মদ শফিরবিল, পাটুয়ারটেক এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া পালংখালীর আনজুমানপাড়া, রাহমতেরবিল ও বালুখালী এলাকায় জোয়ারের পানিতে অর্ধশতাধিক চিংড়িঘের তলিয়ে গেছে বলে জানান পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী। তবে উখিয়ার ২৬টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ, পিআইও আল মামুন, জালিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী, পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
টেকনাফ : আমাদের প্রতিনিধি জানান, টেকনাফে অরক্ষিতই রয়ে গেলো সেন্টমার্টিন। ছোটখাটো ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসেও এখন দ্বীপের উপকূল প্লাবিত হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কতা সংকেত ২ বা ৩ জারি করলেই এখন আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত পূর্ণিমার জোয়ার ও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দ্বীপের একমাত্র জেটির পন্টুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেটির ভাঙন পুরনো। কিন্তু কর্তৃপক্ষের বোধদয় না হওয়ায় এটি চরম ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ইউপি চেয়ারম্যান নূর আহমদ বলেন, দ্বীপের একমাত্র জেটিটি কঙবাজার জেলা পরিষদ ইজারা দেয়। কিন্তু পর্যটন মৌসুমে জেটিতে জাহাজের অতিরিক্ত ধাক্কা লাগে। এটির ব্যবহারও বেশি হয়। এতে পন্টুনসহ জেটির সিঁড়ি ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু বার বার তাগাদা দেয়ার পরও কেউ এগিয়ে আসেনি জেটি সংস্কারে। ফলে ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় জেটিসহ দ্বীপের সৈকত উপকূল। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, সঠিক নেতৃত্বের অভাবে দ্বীপে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হচ্ছে না। এছাড়া দ্বীপটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। স্থায়ী বেড়িবাঁধ ছাড়া দুর্যোগে দ্বীপটি রক্ষা করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে কঙবাজার জেলা পরিষদের সদস্য মো. শফিক মিয়া বলেন, দ্বীপের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় আরো সচেতনতা দরকার। এছাড়া দ্বীপটি রক্ষায় সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী বলেন, সেন্টমার্টিনের ঝুঁকিপূর্ণ জেটির বিষয়ে একটি প্রকল্প উচ্চ পর্যায়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অচিরেই পরিবেশ সম্মত ও বহুমাত্রিক ব্যবহারযোগ্য জেটি নির্মিত হবে। ইউপি চেয়ারম্যান নূর আহমদ বলেন, বার বার তাগাদা দেয়ার পরও পরিবেশ অধিদপ্তরের বাধার কারণে সেন্টমার্টিনের জেটি সংস্কার ও অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন যথাসময়ে হচ্ছে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতে অর্ধলক্ষ মানুষ ঘরহারা
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু