বহদ্দারহাট মোড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্পটকে ঝঞ্ঝাটমুক্ত রাখা জরুরি

| বুধবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

নানা সময়ে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে নগরীর বহদ্দারহাট মোড়। যানজট থেকে শুরু করে ভ্রাম্যমাণ বাজারের জন্য জনভোগান্তির অন্যতম স্পট হলো এই মোড়। গতকাল মঙ্গলবারও দৈনিক আজাদীতে প্রধান খবর হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে ‘বহদ্দারহাট মোড়ে নতুন যন্ত্রণা’। বলা হয়েছে, নগরীর নতুন যন্ত্রণার আরেক নাম বহদ্দারহাট মোড়। দিনভর নানাভাবে মোড়টি রঙ পাল্টায়। সকাল দুপুর সন্ধ্যায় এই মোড়ে বিরাজ করে তিন চিত্র। কখনো বাজার বসে, বিক্রি হয় তরিতরকারি থেকে শুরু করে নানা কিছু, কখনো ফুটপাত থাকে বিভিন্ন ফলসহ ক্ষুদে হকারদের দখলে। আবার কখনো রিক্সা-টেক্সির জটলা। সবকিছুতেই দুর্ভোগে পড়ে এলাকার মানুষ, পথচারী। মারাত্মক রকমের যানজটে স্থবির হয়ে যায় পুরো এলাকা।
খবরে বলা হয়েছে, ‘নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এই মোড়ের যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নির্মাণ করা হয়েছিল ফ্লাইওভার। ফ্লাইওভার চালুর পর যানজট কিছুটা কমলেও বহদ্দারহাট মোড়ে পুরোপুরি গতিশীলতা আসেনি। বিশেষ করে নানা অব্যবস্থাপনা এবং চাঁদাবাজি বহদ্দারহাট মোড় জনভোগান্তির অন্যতম নয়া স্পটে পরিণত হয়েছে। বহদ্দারহাট মোড়ে রাস্তার উপর কখনো কাঁচাবাজার বসে। রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে বিক্রি হতে থাকে তরিতরকারি। আবার কখনো ভ্যানে করে বিক্রি হয় নানা পণ্য। রয়েছে বাস ও টেক্সি-টেম্পোর অবৈধ স্ট্যান্ড। স্থানীয় মাস্তানদের চাঁদাবাজির একটি উর্বর ক্ষেত্র বহদ্দারহাট মোড়। রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে চাঁদাবাজি চলে এলাকা জুড়ে। দোকানপ্রতি নির্ধারিত হারে চাঁদা নেয়ার পরই দেয়া হয় রাস্তা দখল করে পণ্য বিক্রির সুযোগ। কয়েকটি গ্রুপ মোড়কে ভাগ করে নিজেদের মতো করে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। এদের কেউ কেউ নিয়ন্ত্রণ করে তরিতরকারি বিক্রি, কেউবা নিয়ন্ত্রণ করে মাছের বাজার, আবার কেউ কেউ ভ্যান। টেম্পো-টেক্সির স্ট্যান্ডও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শুধু মাস্তান নয়, পুলিশকেও নিয়মিত চাঁদা পরিশোধ করতে হয়।’
চট্টগ্রাম দ্রুত বর্ধমান একটি নগর, যেখানে বিবিধ উন্নয়ন ও পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। দেশের সব প্রান্ত থেকে মানুষ নানা প্রয়োজনে এসে ভিড় করছে নগরী অভিমুখে, বাড়িয়ে তুলছে নগরীর জনসংখ্যাকে। এই অতিরিক্ত জনসংখ্যা নগরীতে নানা কৃত্রিম সমস্যার সৃষ্টি করছে, যার মধ্যে অন্যতম যানজট। যানজট সৃষ্টিতে রাস্তার মোড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা, সড়কে বিভিন্ন গতির ও অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করা, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, আইন প্রয়োগ ও কার্যকরের অভাব, অপর্যাপ্ত ও অপরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশের অভাব, সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক, রাস্তা ও ফুটপাত দখল, অবৈধ রিকশার ছড়াছড়ি, যানবাহনের ইচ্ছামতো চলাচল, যত্রতত্র পার্কিং ও আইন মেনে না চলা, ফুটপাতগুলো দখল, সড়কে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা প্রধান কারণ।
নগরীর আরেকটা সমস্যা হলো অপরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যহানি। বেশিরভাগ সড়কের দুই পাশের ফুটপাত দখল করে চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য। নাগরিক সেবার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগরীকে পরিচ্ছন্ন, আলোকিত ও দৃষ্টিনন্দন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছিল একসময়। নগরীর প্রতিটি মোড়ই সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। এক সময় নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঢেকে রেখেছিল বড় বড় বিলবোর্ড। সেই বিলবোর্ড উচ্ছেদের পর নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দৃশ্যমান হয়েছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরী আবারো হারাতে বসেছে তার সৌন্দর্য।
শুধু বহদ্দারহাট মোড় নয়, নগরীর সব জায়গায় ফুটপাত দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। বসানো হচ্ছে বাজার। স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে চলছে এসব অবৈধ দখলদার বা ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী। নগরকে পরিচ্ছন্ন ও জনসাধারণের বাস-উপযোগী রাখার জন্য প্রশাসনিক তৎপরতা চোখে পড়ে না। ফলে জনভোগান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বহদ্দারহাট মোড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্পটকে ঝঞ্ঝাটমুক্ত রাখা জরুরি।
নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখার ও স্বাস্থ্যসম্মত নাগরিক জীবনের জন্য শহরের প্রতিটি এলাকাকে যে কোনো মূল্যে পরিষ্কার রাখা চাই। কোনো অবস্থাতেই ফুটপাত অপরিচ্ছন্ন রাখা যাবে না। যেখানে সেখানে বাজার বসিয়ে জটলা সৃষ্টি করা যাবে না। বহদ্দারহাট মোড় সবার চলাচলের জন্য মসৃণ হয়ে উঠুক-সেই প্রত্যাশা নগরবাসীর। চট্টগ্রামকে দৃষ্টিনন্দন রাখা ও অধিকতর দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়ে তোলা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। এক্ষেত্রে নগরবাসীকেও তাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে