জাহাজ জটের কবলে পড়ছে চট্টগ্রাম বন্দর। গতকাল বন্দরের বহির্নোঙরে বার্থিংয়ের অপেক্ষায় ছিল কন্টেনার বোঝাই দশটি জাহাজ। এর মধ্যে চারদিন ধরে অপেক্ষায় থাকা জাহাজও রয়েছে। খোলা পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যা তুলনামূলক কম। তবু সেখানেও জট পরিস্থিতি দেখা দিচ্ছে। বহির্নোঙরে গত ১৩ দিন ধরে অপেক্ষায় থাকা জাহাজও রয়েছে। লকডাউনের সময় বন্দরের ভেতরে-বাইরে জট সামলাতে নানাভাবে চেষ্টা করা হলেও শেষতক জাহাজ জটের কবলে পড়ে গেল বন্দর। অবশ্য বন্দর কর্তৃপক্ষ অচিরেই এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
সূত্র জানায়, লকডাউনের সময় বন্দর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। বিগত লকডাউন পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে তৈরি করা হয় এ্যাকশন প্লান। বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি বন্দর ইয়ার্ড থেকে দ্রুত কন্টেনার খালাস করার তাগাদা দেয়া হয়।আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার দ্রুত খালাসের পাশাপাশি রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার জাহাজীকরণে নেয়া হয় বিভিন্ন উদ্যোগ। বন্দরের কাজে গতিশীলতা আনতে সিনিয়র কর্মকর্তারা বিভিন্ন জেটি ও ইয়ার্ড পরিদর্শন করার নজিরও রয়েছে। কিন্তু সব চেষ্টার পরও মারাত্মক জাহাজজটের কবলে পড়তে যাচ্ছে বন্দর। ধারণক্ষমতার বেশি হওয়ায় কন্টেনার রাখার স্থানাভাব না হলেও বন্দর জেটিতে ভিড়ানো যাচ্ছে না জাহাজ। এক একটি কন্টেনার জাহাজের চার-পাঁচ দিন অপেক্ষা করে জেটিতে আসতে হচ্ছে। গতকাল বহির্নোঙরে একই সাথে দশটি কন্টেনার জাহাজ অলস বসেছিল। বন্দরে বহুদিন পর একই সাথে এতগুলো কন্টেনার জাহাজ অলস বসে থাকতে দেখা গেল।
উল্লেখ্য, একটি জাহাজ একদিন অলস বসে থাকলে প্রায় বিশ হাজার ডলার ফিক্সড অপারেটিং কস্ট বা এফওসি বাবদ গচ্ছা দিতে হয়। বিপুল অংকের এ টাকার যোগান বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানিকারকদেরই যোগান দিতে হয়। দশটি জাহাজের জন্য প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে।
বন্দরের বহির্নোঙরে অলস বসে থাকা জাহাজগুলোর মধ্যে গত চারদিন ধরে অপেক্ষা করছে এমভি ওইএল কলম্বো। তিন দিন ধরে অপেক্ষা করছে তিনটি, দুইদিন ধরে অপেক্ষা করছে দুইটি ও একদিন অপেক্ষা করছে চারটি জাহাজ। আজ কালের মধ্যে আরো অন্তত দশটি জাহাজ আসছে। বন্দরের জেটিতে থাকা দশটি কন্টেনার জাহাজও কয়েকদিন অপেক্ষা করার পর জেটিতে ভিড়ার সুযোগ পেয়েছে। অপরদিকে খোলা পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যা কম হলেও সেখানেও অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হচ্ছে। এমভিলিলা নামের একটি জাহাজ গত তেরদিন ধরে অপেক্ষা করছে। রয়েল জাস্টিস নামের অপর জাহাজ অপেক্ষা করছে গত আট দিন ধরে। গতকাল খোলা পণ্যবাহী চারটি জাহাজ জেটিতে ভিড়ার অপেক্ষা করছে।
বন্দরের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বহু চেষ্টা করেও জাহাজজট পরিস্থিতি ঠেকানো গেল না। কন্টেনার জাহাজ জট বেশ জটিল হয়ে উঠছে। দশটি জাহাজ অলস বসে আছে। এ সংখ্যা আজ কালের মধ্যে আরো বাড়বে। তবে আশার কথা, বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ইয়ার্ডের অবস্থাও ভালো। লকডাউন স্বাভাবিক হলে জাহাজজট পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি ঘটবে।
তবে বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বিষয়টি আসলে এত জটিল নয়। আজ চারটি জাহাজ ভেতরে ঢুকেছে, চারটি চলে গেছে। আসা-যাওয়া সমান হওয়ায় বহির্নোঙরে প্রভাব পড়ছে না। আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জাহাজের সংখ্যা বেড়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অচিরেই এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।