স্পুৎনিক নিয়ে যা জানা গেল

| বুধবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২১ at ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ

রাশিয়া স্পুৎনিক ফাইভ বা স্পুটনিক-ভি টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছিল ২০২০ সালের ১১ আগস্ট। তখন খবরটি সবার নজর কেড়েছিল। ৬ দশক আগে ১৯৫৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুৎনিক নামের একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ জয়ের প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করার কথা ঘোষণা করেছিল। তার সাথে মিলিয়ে রাশিয়া দাবি করেছে, চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাদের গবেষণার এতটাই অগ্রগতি হয়েছে যে, কোভিড-১৯ রোগের টিকা তৈরির প্রতিযোগিতায়ও তারা জিতে গেছে।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে এবং কোনোরকম তথ্য প্রকাশ না করেই আগস্ট মাসে স্থানীয়ভাবে ব্যবহারের জন্য টিকার লাইসেন্স দেয় রাশিয়া। এই টিকা নিয়ে তখন অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটির সক্ষমতার বিষয়গুলো এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। খবর বিবিসি বাংলার।
রাশিয়ার টিকার পরীক্ষা শুরুর পর প্রথম প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রাথমিকভাবে টিকায় ভাইরাস প্রতিরোধের সক্ষমতা তৈরির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী দা ল্যানসেটে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তাদের সবার শরীরে করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার মতো অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে এবং বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ফাইজার, অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মর্ডানার মতো টিকাগুলোর মতো এটিও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষমতার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
টিকা নিয়ে যা জানাল রাশিয়া : স্পুৎনিক-ভি নামের টিকাটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে গত জুন থেকে জুলাই মাসের মধ্যে। ল্যানসেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৮ জন স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবীর ওপর টিকার প্রয়োগ করা হয়। তিন সপ্তাহ পরে তাদের আবার বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়। অংশগ্রহণকারীদের বয়স ছিল ১৮-৬০ বছরের মধ্যে। তাদের পরবর্তী ৪২ দিন ধরে নজরদারিতে রাখা হয়।
তাদের সবার শরীরে পরবর্তী তিন সপ্তাহের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। বেশিরভাগের ক্ষেত্রে সাধারণ যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে তা হলো মাথা ব্যথা ও হাড়ের সন্ধিস্থলে ব্যথা। এই টিকা নিয়ে কারো গুরুতর অসুস্থ হওয়া বা মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
সাধারণ সর্দিকাশি তৈরি করে, সেই অ্যাডেনোভাইরাসের উপাদান ব্যবহার করে এই টিকা তৈরি করা হয়েছে। শরীরে প্রয়োগের পর করোনার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা তৈরি করতে শুরু করে এই টিকা। এই টিকা দুই থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস (সবচেয়ে ভালো ৩-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় রাখা যায়। ফলে এটি পরিবহন ও সংরক্ষণ করা সহজ।
২১ দিনে দ্বিতীয় ডোজ, আছে প্রার্থক্য : অন্যান্য অনেক টিকায় দুটি ডোজ দেওয়া হলেও রাশিয়ার টিকার দুটি ডোজে পার্থক্য রয়েছে। দুই ডোজই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে। কিন্তু তারা আলাদা ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে। দুই ধরনের ফর্মুলা ব্যবহার করায় এটি শরীরের ভেতরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও ভালোভাবে তৈরি করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা দিতে পারে।
রুশ গবেষকরা বলছেন, এই টিকা দুটি ডোজে প্রয়োগ করার প্রয়োজন হবে এবং যারা স্বেচ্ছায় এই ট্রায়ালে অংশ নেয় তাদের মধ্যে প্রথম ডোজটি দেওয়ার ২১ দিন পরও অপ্রত্যাশিত কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ৫০টির বেশি দেশ থেকে তাদের কাছে ১২০ কোটি ডোজের বেশি টিকা সরবরাহের অনুরোধ এসেছে। তাদের দাবি, বিশ্ব বাজারের চাহিদা মেটাতে তারা প্রতি বছর ৫০ কোটি টিকা উৎপাদন করতে পারবেন।
সাফল্য দাবি : স্পুৎনিক-ভি তৈরি করেছে মস্কোর গামালেয়া রিসার্চ সেন্টার। নভেম্বর মাসে রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, টিকার যে ট্রায়াল চলছিল তা ৯২% সফল বলে প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে। এদিকে ফাইজার ও বায়োএনটেক কোম্পানি জানায় তাদের উদ্ভাবিত টিকা কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ৯০% সাফল্য দেখিয়েছে।
গামালেয়া রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক আলেকজান্ডার গিন্টসবার্গ বলেন, এই টিকা প্রথমে রাশিয়ায় এবং পরে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার কমিয়ে আনতে পারবে।
আগস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লামিদির পুতিন বলেন, প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে টিকাটি। তার এক কন্যাকেও টিকা দেওয়া হয়েছে।
যেসব দেশে স্পুৎনিক-ভি : রাশিয়া ছাড়াও অন্তত ৬০টি দেশে স্পুৎনিক-ভি টিকা দেওয়া হচ্ছে। এসব দেশের মধ্যে আছে আর্জেন্টিনা, ফিলিস্তিন, ভেনিজুয়েলা, হাঙ্গেরি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, স্লোভাকিয়া, মেক্সিকো, ইসরায়েল, ফিলিপিন্স, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতসহ অনেক দেশ।
বৈশ্বিক অনুমোদন পায়নি : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি, যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যেসব টিকার অনুমোদন দিয়েছে তার মধ্যে নেই রাশিয়ার তৈরি স্পুৎনিক-ভি। তা সত্ত্বেও বিশ্বের ৬০টি দেশ এই টিকার জরুরি অনুমোদন দিয়ে চাহিদা জানিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্দরে ফের জাহাজ জট
পরবর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত