বন্ডেড প্রতিষ্ঠানে অটোমেশন সফটওয়্যার আগামী বছরে

অপব্যবহার রোধ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৮ নভেম্বর, ২০২১ at ৯:০০ পূর্বাহ্ণ

আগামী বছরের শেষের দিকে রপ্তানিমুখী সকল বন্ডেড প্রতিষ্ঠানে চালু করা হচ্ছে বন্ড অটোমেশন সফটওয়্যার। মূলত বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে ‘বন্ড অটোমেশন’ প্রকল্প হাতে নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রকল্পের প্রথম দফায় মেয়াদ ধরা হয় ৩ বছর। ২০১৯ সালের ৩০ জুন সেই মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় ২০২১ ৩০ জুন পর্যন্ত দুই বছর বাড়ানো হয়। সর্বশেষ প্রকল্পটির মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। বন্ড কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর শুরু হওয়া করোনা পরিস্থিতির কারণে অটোমেশন কার্যক্রমের তেমন অগ্রগতি হয়নি। তাই অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্যই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে সফটওয়্যার তৈরি হলেও সংশ্লিষ্ট বন্ড অফিসার এবং স্টেকহোল্ডারদের প্রশিক্ষণ দেয়ার সময় চিন্তা করেও মেয়াদের সময় বাড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে সাড়ে ৬ হাজারের কাছাকাছি বন্ড লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে এক সাথে অটোমেশনের আওতায় আনতে একটু সময় লাগবে। তবে সব প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশনের আওতায় আনা সম্ভব হলে বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি ঠেকানো যাবে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্ড ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন হয়ে গেলে কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি পাবে। প্রায় সময় বিভিন্ন বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের গুদাম পরিদর্শন করে অনিয়মের চিত্র দেখা যায়। দেখা যায়, বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্য গুদামে পাওয়া যায় না। প্রায় সময় প্রতিষ্ঠান মালিক পণ্য অন্যত্র সরিয়ে নেন কিংবা খোলা বাজারে বিক্রি করে দেন। ফলে সরকারও প্রচুর রাজস্ব হারায়। এছাড়া কাস্টমস বন্ড অফিসেও জনবলের সংকট রয়েছে। তাই নিয়ম করে সকল প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে বন্ড ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি অটোমেশন করা গেলে কম্পিউটারে বসেই কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধায় কি পরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে, মজুদ কত এবং তা রপ্তানি করেছে তা সহজেই নজরদারি করা সম্ভব হবে।
বন্ডেড প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্ড অফিসের কর্মকর্তারা প্রায় সময় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ তুলেন। এটি কিন্তু ঠিক না। পোশাক কারখানা মালিকদের রেজিস্টার চেক করলে সহজে দেখা যায় পণ্য সরানো হয়েছে কিনা। আমরা বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করি এবং পণ্য তৈরি করে রপ্তানি করি। তিনি বলেন, বন্ড অটোমেশন নিয়ে যখন থেকে কথা হচ্ছিল, তখন থেকেই আমরা এটিকে সাধুবাদ জানিয়ে আসছি। কারণ কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য সবাই খারাপ হতে পারে না। অটোমেশন হয়ে গেলে বন্ড কাস্টমসের কর্মকর্তারা কার গুদামে কি পরিমাণ পণ্য আছে সেটি দেখতে পারবেন। এছাড়া কি পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে, সেটি আরো সহজে চেক করা সম্ভব হবে। আমরা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ব্যবসা করতে চাই। সরকারকে রাজস্ব আদায়ে সহযোগিতা করতে চাই। তবে রাজস্ব আদায়ের প্রক্রিয়াটি অবশ্যই সহজ ও স্বচ্ছ হতে হবে। তাই অটোমেশন সিস্টেম যত দ্রুত সম্ভব চালু করা যাবে ততই আমাদের জন্য সুবিধা বলে মনে করি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামের কমিশনার একেএম মাহাবুবুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, বন্ড অটোমেশনের প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। বন্ড ব্যবস্থাপনায় পুরোপুরি অটোমেশন হয়ে গেলে তখন আর কেউ সহজে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করতে পারবে না। বন্ড অফিসারদের কাজও আরো সহজ হয়ে যাবে।
জানতে চাইলে এনবিআরের বন্ড অটোমেশন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনাকালীন কাজের অগ্রগতি তেমন না হওয়ায় অটোমেশন প্রকল্পের মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়ানো হয়। তবে আমাদের সফটওয়্যার মডিউলের কাজ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। আগামী বছর ট্রায়াল রান করে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। নির্ধারিত মেয়াদের আগেই বন্ডেড প্রতিষ্ঠান অটোমেশনের আওতায় আনা যাবে আশা করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅজেয় থেকে সেমিতে গ্রুপ সেরা পাকিস্তান
পরবর্তী নিবন্ধপ্রবাসীদের যথাযথ সেবা দিন দূতাবাস কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী